নিজস্ব সংবাদদাতা, মেদিনীপুর: লোকসভা ভোটের আগে খড়গপুর রেল কলোনিতে জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে উচ্ছেদ করতে চাইছে রেল কর্তৃপক্ষ। আর সেই উচ্ছেদ রুখতে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করার জন্য খড়গপুরের নেতাদের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বিশেষ দায়িত্ব নিতে বললেন খড়গপুর পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারকে। মঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার পথে আলাদা করে তঁার সঙ্গে কথাও বললেন। কেন্দ্রীয় সরকারের রেল বিভাগের বিরুদ্ধে রণং দেহি মেজাজ যে ছাড়তে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী তাও মঙ্গলবার তিনি প্রতিটি ছত্রে ছত্রে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
সোমবারই বিকেলে দলের মন্ত্রী, বিধায়ক ও জেলা পরিষদ সদস্যদের নিয়ে সার্কিট হাউসে বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই খড়গপুরের (Kharagpur) প্রাক্তন বিধায়ক রেল কলোনিতে জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার অভিযোগ তোলেন। যা শুনে প্রচণ্ড চটে যান মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক সভামঞ্চ থেকেই এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আমার কাছে দুঃখের খবর খড়গপুরে রেল কলোনির ৮টি ওয়ার্ডে নির্বাচনের আগে জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বলা হয় বিজেপিকে ভোট না দিলে এলাকা থেকে সরিয়ে দেব। আমি এবার চ্যালেঞ্জ করে গেলাম একটা বাড়ির জল কাটলে, বিদ্যুৎ কাটলে, একটা উচ্ছেদ করলে মনে রাখবেন আমরা ঘাসে মুখ দিয়ে চলি না আমরা ঘাসটাকে রক্ষা করি।’’ তার পরই খড়গপুরের নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, রেগুলার যারা এই কীর্তি করে তাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন করুন। প্রশাসন প্রশাসনের কাজ করবে।
[আরও পড়ুন: খেসারত দিতে হবে ৩ কোটি টাকা! পাকিস্তান থেকে সীমা হায়দরকে আইনি নোটিস প্রাক্তন স্বামীর]
মেদিনীপুর লোকসভার মধে্য খড়গপুরে বিজেপির সংগঠন খুবই শক্তিশালী। এলাকার বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়ও বিজেপির। সাংসদ দিলীপ ঘোষ তো এই খড়গপুর থেকেই প্রায় ৪০ হাজার ভোটের লিড পেয়েছিলেন। ফলে খড়গপুরে এবার বিজেপিকে ধাক্কা দিতে চাইছে তৃণমূল। খড়গপুর শহরে একসময় নব্বই শতাংশ এলাকাই ছিল রেলের অন্তর্ভুক্ত। রেল আবাস, রেল কলোনি থেকে শুরু করে রেল সংক্রান্ত নানা সমস্যা আছে ওই এলাকায়। বিভিন্ন সময়েই উচ্ছেদ অভিযান চলে রেলের পক্ষ থেকে। এবারও ভোটের আগে বিজেপির দিকে ভোট টানতে ফের উচ্ছেদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ তোলেন প্রদীপ সরকার। এদিনও মঞ্চ থেকে নামার পথে কাছে ডেকে নেন প্রদীপকে। কথা বলেন তঁার সঙ্গে।
প্রদীপবাবু বলেছেন, ‘‘সবাইকে নিয়ে গণআন্দোলন করার নির্দেশ দিয়েছেন দিদি। মানুষের গণস্বাক্ষর সম্বলিত অভিযোগপত্রের একটা কপি তঁার কাছেও পাঠাতে বলেছেন। তিনি নিজেও এ বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন।’’ উল্লেখ করা যেতে পারে, সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলরদের বিদ্রোহের জেরে এই প্রদীপ সরকারকেই গত ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে খড়গপুর পুরপ্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। বর্তমানে তঁার কোনও পদ নেই বলে দলনেত্রীর কাছে অনুযোগও জানান তিনি। তখনই তঁাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন দলনেত্রী। আর এদিন প্রশাসনিক সভামঞ্চেও বিধায়ক তথা জেলা চেয়ারম্যান দীনেন রায়কে নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন প্রদীপকে দলের কাজে লাগানোর জন্য।