স্টাফ রিপোর্টার: একশো দিনের কাজ-সহ একাধিক প্রকল্পে ‘অনিয়মের’ অভিযোগগুলির দ্রুত নিষ্পত্তিতে জেলাপ্রশাসনকে কড়া নির্দেশ পাঠাল নবান্ন (Nabanna)। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নির্দেশে দিন দুয়েক আগে পাঠানো চিঠিতে জেলাশাসকদের কাছে সুস্পষ্ট বার্তা গিয়েছে যে, পঞ্চায়েতের কাজকর্মে অনিয়ম-বেনিয়মের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে হবে, তছরুপ হয়ে থাকলে সেই টাকা উদ্ধার করতে হবে। প্রয়োজনে থানায় এফআইআর করতে হবে।
নবান্ন সূত্রের খবর, জেলাপ্রশাসনকে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে তাতে প্রধানত দু’টি প্রকল্পের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। তার অন্যতম হল, একশো দিনের কাজ প্রকল্প (MNREGA)। নোটিসে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের আওতায় গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত যাদের জব কার্ড দেওয়া হয়েছে, তাদের নাম অবিলম্বে জেলা পোর্টালে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে পূর্ব বর্ধমান, হাওড়া, উত্তর দিনাজপুর, বাঁকুড়া, কোচবিহার, ঝাড়গ্রাম, দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিম বর্ধমান ও বীরভূমকে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি, যে ক্ষেত্রে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে হিসাব দেখিয়েও কাজ হয়নি, অর্থাৎ ভুয়া খরচ দেখিয়ে টাকা তোলা হয়েছে, সেখানে অবিলম্বে সেই টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য এফআইআর করা, শৃঙ্খলা লঙ্ঘনের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া ইত্যাদি সব ধরনের পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
[আরও পড়ুন: অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে রাধাকৃষ্ণের ‘অশ্লীল’ ছবি, নেটদুনিয়ায় ট্রেন্ডিং ‘বয়কট আমাজন’]
নবান্ন স্পষ্ট জানিয়েছে, এই প্রকল্প নিয়ে সোশ্যাল অডিট ইউনিট (এসএইউ) পরীক্ষা করে যে ফাঁকফোকর পেয়েছে, সেই রিপোর্ট অনুযায়ীই পদক্ষেপ করতে হবে। ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এই কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। মনরেগা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (PM Awas Yajona) খাতে ভুয়ো খরচের টাকা উদ্ধারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রেও প্রয়োজনে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন।
[আরও পড়ুন: ‘ফের ২৬/১১-এর মতো হামলা হবে’, হুমকি এল পাকিস্তান থেকে, তীব্র আতঙ্ক মুম্বই জুড়ে]
নবান্নের এই নির্দেশ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। রাজ্য সরকারের তরফে একাধিকবার দাবি করা হয়েছে, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যের প্রাপ্য মিলছে না। তবে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক থেকে জানানো হয়, একশো দিনের কাজ বা আবাস যোজনা খাতে হিসাব ঠিকমতো না পাওয়ার কারণে কেন্দ্র অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্রের সমালোচনায় সরব হলেও, রাজ্যের প্রাপ্য পেতে কেন্দ্রের নির্দেশ মতোই কাজ করছে। দলে নৈতিকতা নিয়ে আগেই বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। একুশের মঞ্চে বার্তা দিয়েছিলেন, ‘তৃণমূল করে খাওয়ার জায়গা নয়। নেতা ধরে পঞ্চায়েতে টিকিট পাওয়া যাবে না।’ মুখ্যমন্ত্রীও বলেছিলেন, টাকা চাইলে থানায় ঢোকানোর কথা। তার মধ্যে নবান্ন থেকে ‘দু্র্নীতিপরায়ণদের’ বিরুদ্ধে এফআইআরের নির্দেশ। রাজ্যে ৯০ শতাংশ পঞ্চায়েত তৃণমূলেরই দখলে। নবান্নের এই পদক্ষেপে তৃণমূলের হাতেও পঞ্চায়েতে দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের তালিকা উঠে আসবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই, নবান্নের এই নির্দেশে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূলের একাংশের নেতা-কর্মীর কপালে বিপদ আসছে।