কিংশুক প্রামাণিক, নয়াদিল্লি: নীতি আয়োগের বৈঠকে হাজির থেকেও বলার সুযোগ আসে সব শেষে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একতরফা ভাষণ শুনতে হয়। আলোচনার সুযোগ তেমন থাকে না। ফলে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য লিখিতভাবে দু দিন আগেই পাঠিয়ে দেওয়া হল নীতি আয়োগে। এর ফলে শনিবারের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী থাকা অথবা না থাকা নিয়ে জল্পনার অবসান হল বলে মনে করা হচ্ছে।
নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লি আসার কথা ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু কর্মসূচি বাতিল করেন। জানা গিয়েছে, ব্যক্তিগত কারণেই আসেননি। দিল্লি আসা ছাড়া এদিন তাঁর আলাদা কর্মসূচিও ছিল না। শুক্রবার দুপুর তিনটেয় তাঁর নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী তৃণমূল সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক রয়েছে নতুন বঙ্গভবনে। তৃণমূলের লোকসভায় ২৯ ও রাজ্যসভায় ১৩ জন, মোট ৪২ জন সাংসদ রয়েছেন। তাঁরা ইতিমধ্যেই সংসদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে শুরু করেছেন। এছাড়া মমতা (Mamata Banerjee) কদিন আগেই কলকাতায় জানিয়েছিলেন, এবার গিয়ে দিল্লির সাংবাদিকদের সঙ্গে মিলিত হতে চান। অনেক দিন আসা হয়নি। দেখাও হয়নি। শেষ পর্যন্ত খবর মুখ্যমন্ত্রীর শুক্রবারের কর্মসূচির কোনও বদল হয়নি। সব রকম প্রস্তুতি রয়েছে। তিনি আসতেও পারেন। সিদ্ধান্ত হবে শুক্রবার সকালে।
[আরও পড়ুন: প্রয়াত ২১ জুলাই কমিশনের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়, শোকপ্রকাশ মমতার]
২১ জুলাই ধর্মতলার সভায় বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় বাধা সত্ত্বেও ৬২ হাজার কোটি টাকা সামাজিক প্রকল্পে খরচ করার তথ্য দেন। কেন্দ্রীয় বাজেট (Union Budget) নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তিনি জানান, সব খাত মিলিয়ে রাজ্যের পাওনা ১ লক্ষ ৭১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। একশো দিন-সহ নানা প্রকল্পের টাকা বন্ধ। রাজ্যকে না জানিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে জলচুক্তির নবীকরণ করা হয়েছে। নবান্ন (Nabanna) সূত্রে খবর নীতি আয়োগে মুখ্যমন্ত্রীর লিখিত বক্তব্যে মূল দিক হবে এগুলোই। মমতা আবারও জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাকে অবহেলা বঞ্চনা এবার বন্ধ করুক কেন্দ্র।
এদিকে কংগ্রেসের তিন মুখ্যমন্ত্রী-সহ সাত বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীর নীতি আয়োগে যোগ না দেওয়া নিয়ে এদিন জল্পনা উসকে যায়। তৃণমূল শিবির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। কারণ, নীতি আয়োগে ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় সৌজন্য ছাড়া এই বৈঠকের আর কোনও গুরুত্ব নেই। মুখ্যমন্ত্রী অতীতেও এই বৈঠকে যাননি। পাশাপাশি তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছে ইন্ডিয়া (INDIA) যেহেতু জোট হিসাবে রয়েছে সেই জন্য এই ইস্যুতে আগে তৃণমূলকে জানানো উচিত ছিল কংগ্রেসের। মনে রাখতে হবে, তৃণমূলই একমাত্র দল বিজেপির বিরুদ্ধে আপসহীন লড়ছে। তার জন্য একদিকে বঞ্চনা, অন্যদিকে এজেন্সির উপদ্রব সব চেয়ে বেশি সামলাতে হয়েছে নেতা-মন্ত্রীদের।
নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) সঙ্গে সেই সংঘাত জারি থাকবে। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চেও মমতা সাফ জানিয়ে দেন, তৃণমূল মরে যাবে তবু বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই থেকে সরে আসবে না।
[আরও পড়ুন: প্রয়াত ২১ জুলাই কমিশনের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়, শোকপ্রকাশ মমতার]
গত ডিসেম্বরে শেষবার দিল্লি এসেছিলেন মমতা। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ সাংসদদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। সেই সময় মোদি তাঁদের কথা দেন একশো দিনের কাজ নিয়ে কেন্দ্র রাজ্য অফিসার লেভেলে বৈঠক হবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে বাংলা কোনও বকেয়া পায়নি। তারপর ভোট এসে যায়। লোকসভা ভোটে (Lok Sabha 2024) তৃণমূলের বড় হাতিয়ার ছিল বঞ্চনা। ভোট মিটতে আবার সেই ইস্যুগুলি সামনে এসে গেল। নীতি আয়োগে মুখ্যমন্ত্রীর লিখিত বক্তব্যে এই অবহেলা বঞ্চনা হচ্ছে মুখ্য। গতকাল লোকসভায় দারুণ বক্তব্য রেখে কলকাতা ফিরে গিয়েছিলেন অভিষেক। মমতা দিল্লি এলে তিনিও আসবেন।