কুণাল ঘোষ, মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী: বিদেশ থেকে লগ্নি প্রস্তাবের পাশাপাশি ঘরের ছেলেকে ঘরে ফেরানোর মোক্ষম কাজটাও স্পেন সফরেই করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পিসিএম গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের সিএমডি কমল মিত্তল মুখ্যমন্ত্রীর ডাকেই সাড়া দিয়ে প্রথম পর্বে বাংলায় ২৫০ কোটি টাকার লগ্নি কথা ঘোষণা করলেন।
জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িতে দেড়শো কোটি টাকা বিনিয়োগে ইথানল কারখানা হবে। প্রতিদিন দুই লক্ষ লিটার ক্যাপাসিটি হবে কারখানার। এছাড়া উত্তরবঙ্গেই মিত্তল গড়ে তুলবেন আন্তর্জাতিক মানের হোটেল। আর যে ব্যবসায় মিত্তলদের আন্তর্জাতিক প্রভাব, সেই স্লিপার তৈরির আধুনিক ইউনিটও তৈরি হচ্ছে। স্পেন-জার্মানির প্রযুক্তি ব্যবহার হবে বঙ্গেও। এক্ষেত্রে লগ্নির পরিমাণ ১০০ কোটি টাকা। নিউ জলপাইগুড়ির কাছে তাঁদের একটি পুরনো কারখানা আগে থেকেই রয়েছে। সেটিকে আধুনিক প্রযুক্তির মদতে আরও বড় করা হবে। বস্তুত কমলকুমার মিত্তলের কারখানা হাঙ্গেরি-জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট-স্পেনের বার্সেলোনা অর্থাৎ ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে। রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়াতেও। মূলত ট্রেনের স্লিপার ও যন্ত্রাংশ তৈরিতে পারদর্শী তাঁর সংস্থা।
[আরও পড়ুন: মমতা ‘প্রধানমন্ত্রী’! বার্সেলোনার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ভুল ঘোষণা সঞ্চালকের]
শিলিগুড়িতেই মিত্তালদের বাস। তাঁর পড়াশোনা কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্সে। ৩৪ বছরের বাম জমানায় বাংলায় অনেক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এমন অভিযোগ রয়েছেই। বাংলার শিল্পপতিরাও সেই সময় বাংলা ছেড়ে অন্য রাজ্য বা দেশে লগ্নি করতে শুরু করেন। তাঁদের আবার ঘরে ফেরানোর পালা চলছে। অনেকের অবশ্য এখানেই শিকড় রয়েই গিয়েছে। এঁদের মধ্যে নামী শিল্পপতিদের তালিকাটাও লম্বা। সেই প্রেক্ষিতেই মিত্তালের মতো শিল্পপতিদের বাংলায় বিনিয়োগে প্রত্যাবর্তন যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী ও সদর্থক বলেই মনে করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী কমল মিত্তলকে ঘরে ফেরা ও বঙ্গেই বিনিয়োগের অনুরোধ করেন। এই আন্তরিকতায় মুগ্ধ তিনি। উৎসাহী বঙ্গে বদলের পর। তিনি বললেন, ‘‘উত্তরবঙ্গকে আগে সৎ ছেলে বলে মনে হত। দিদি ক্ষমতায় আসার পর উন্নতি হয়েছে। উত্তরবঙ্গে আন্তর্জাতিক মানের হোটেল গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে।’’
সোমবারই বাংলায় বিশ্বকর্মা পুজোর আবহে এমন লগ্নির খবর শিল্পের গরিমা ফেরাতে সাহায্য করবে। আগামিকাল মঙ্গলবার আবার বার্সেলোনায় শিল্প সম্মেলনে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী। একই দেশে দ্বিতীয়বার শিল্প সম্মেলনও এই প্রথম। মাদ্রিদের পর বার্সেলোনা। স্পষ্ট, স্পেনকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ভারী শিল্পের পাশাপাশি মাঝারি শিল্পও বাংলার টার্গেট। বার্সেলোনা বন্দর শহর। ভূমধ্যসাগরের তীরে এই শহরের সঙ্গে মধ্য-প্রাচ্য যেমন, তেমনই আফ্রিকা ও ইতালির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। তাই গড়ে উঠেছে বহু শিল্প সংস্থা ও কারখানা। এখান থেকে একশো কিলোমিটারের কিছু কম দূরত্ব কনস্তানতির। সেখানেই মিত্তলের ট্রাভিপোস কারখানাটি মুখ্যমন্ত্রীর আগ্রহ ও নির্দেশে গিয়েছিলেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর নেতৃত্বে প্রতিনিধিরা। স্পেনের রেলের স্লিপার তৈরি হয়। প্রতি মাসে ৪৫ হাজারের বেশি। পি সি মিত্তল গ্রুপের আন্তর্জাতিক পাঁচটি ইউনিটের এটি অন্যতম। ব্যবসার পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকা। তবে স্লিপারের ছাঁচ তৈরি হয় বাংলায়। মিত্তালদের ট্রেনের যন্ত্রাংশ বানানোর দক্ষতাকে গ্রহণ করেছে বহু নামী সংস্থাও। পিসিএম গ্রুপের কাছে রয়েছে জার্মান প্রযুক্তি , যা পাহাড় বা নদীর মধ্য দিয়েও রেলপথ বানাতে সক্ষম। এদিন মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে দলে ছিলেন শিল্পসচিব বন্দনা যাদবও। উৎফুল্ল তাঁরাও।