অভিষেক চৌধুরী,কালনা: কখনও কপালে তিলক কেটে শ্রীখোল বাজিয়ে নাম সংকীর্তনে মেতে উঠতেন,আবার কখনও বিএসএফের অফিসার সেজে লোকের কাছে টাকা ও মোবাইল হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দিতেন।কখনও কলকাতা-কালনা,আবার কখনও হাওড়া-নবদ্বীপে এমনইভাবে প্রতারণার কারবার চালাচ্ছিল এক যুবক। প্রতারণার শিকারও হয়েছেন অনেকে।এমনই এক অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্তে নেমে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নবদ্বীপ স্টেশন এলাকা থেকে ওই ভুয়ো বিএসএফ অফিসারকে গ্রেপ্তার করে কালনা জিআরপি। ধৃতের নাম প্রসেনজিৎ দুবে। তার বাড়ি বাঁকুড়ার মেজিয়ায়। বুধবার ধৃতকে কালনা আদালতে তুলে তাকে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে আবেদন জানালে বিচারক তা মঞ্জুর করেন।
জিআরপি সূত্রে জানা গিয়েছে,বাঁকুড়ার মেজিয়া এলাকার বাসিন্দা প্রসেনজিৎ দুবে।৩৪ বছর বয়সী এই যুবকের বিরুদ্ধে এর আগে কয়েকটি থানায় চুরির অভিযোগ রয়েছে।এর আগে মেজিয়া থানার পুলিশ তাকে চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার করলে সে জেলও খাটে।তাতেও সে শোধরায়নি।বরং চুরিটাকেই সে পেশা করে নেয়। এর পরেই অভিনব কায়দায় সাধারণ মানুষজনের সঙ্গে প্রতারণাও করতে শুরু করে বলে অভিযোগ।কিন্তু হলে কি হবে,তাকে দেখে বিন্দুমাত্র বোঝার উপায় ছিল না সে একজন দুষ্কৃতী।
[আরও পড়ুন: চোখের সামনে মাকে খুন, আদালতে নাবালক ছেলের সাক্ষ্যে দোষী সাব্যস্ত বাবা]
মাঝেমধ্যে অনেকের সন্দেহ হলেও ধরার উপায় ছিলনা তাকে। কারণ তার হাবভাব, ঠাটবাট, আদবকায়দা ও অভিনয়ই ছিল মনোমুগ্ধকর। জিআরপি জানায়, মায়াপুরের একটি জায়গায় সে শ্রীখোল বাজিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা পরিবারের সদস্যদের মন কেড়ে নিত,তেমনই গুরুজীদের সঙ্গে পরিচয়ও করে দিত।এর ফলে তাদের কাছে বিশ্বাসের ভিত সে আরও শক্ত করে নিত।তাই অনেকেই তাকে যেমন খুব ধার্মিক বলে মনে করতেন।
অন্যদিকে, পরণে বিএসএফের পোশাক পরে শ্যুট-ব্যুট পরে প্রসেনজিৎ নিজেকে কৃষ্ণনগরের ১১৮ নং ব্যাটেলিয়নের বিএসফ ট্র্যাফিক অফিসার বলেও পরিচয় দিত। এর পরেই বিভিন্ন স্টেশনে ওই সব পরিবারের লোকজনকে নিজের কাছে টাকা নেই,জিনিসপত্র হারিয়ে গিয়েছে বলে সহানূভূতি আদায় করে তাদের কাছ থেকে হাজার-হাজার টাকা সে ধার নিত। এছাড়াও তার মোবাইল খারাপ হয়ে গিয়েছে বলে তাদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে ফোন করতে-করতে সে উধাও হয়ে যেত।
হাতের নাগালের বাইরে যেতেই সে ফোন বন্ধ করে নিয়ে পালাতো।কালনার ঠাকুরপাড়ার এক পরিবারের কাছে এমনিভাবে সাড়ে তিন হাজার টাকা ও নতুন মোবাইল হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তদন্তে নেমে জিআরপি ওই ভুয়ো বিএসএফ অফিসারকে হাতেনাতে ধরে।বুধবার তাকে কালনা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে ৩ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।যদিও কালনা আদালতে তোলার সময় প্রসেনজিৎ দুবে জানায়,তাকে ফাঁসানো হয়েছে।