অভিষেক চৌধুরী, কালনা: আবাস যোজনা প্রকল্পের টাকা ঢুকতে দেরি হচ্ছে? কোনও চিন্তা নেই, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে করতে হবে আধার লিংক! দিতে হবে আঙুলের ছাপ। তাহলেই এক মাসের মধ্যে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ঢুকে যাবে আবাস যোজনার বকেয়া টাকা। এভাবেই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের সহায়ক পরিচয় দিয়ে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে স্ক্যানার মেশিনে আঙুলের ছাপ দিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে টাকা।
মন্তেশ্বরের ভাগড়া গ্রামে এক গৃহবধূর সঙ্গে এমনই এক অভিনব প্রতারণার ঘটনায় দুই প্রতারককে গ্রেপ্তার করে মন্তেশ্বর থানার পুলিশ। ধৃতরা হল আলিবুদ্দিন মল্লিক ও শোভন মোহান্ত। প্রথমজনের বাড়ি মেমারি থানার সিমলায়, দ্বিতীয়জনের বাড়ি কৃষ্ণপুর এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের কাছ থেকে একটি ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার মেশিন, ৩টি অ্যানড্রয়েড ফোন, ৮ হাজার ১৭০ টাকা ও একটি মোটরবাইক বাজেয়াপ্ত করেছে।
[আরও পড়ুন: তমলুকে মুখ থুবড়ে পড়ল রাম-বাম জোট, সমবায় নির্বাচনে জয়ী তৃণমূলই]
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৯ নভেম্বর মেমারী থানা এলাকার আলিবুদ্দিন ও শোভন বাইকে চেপে মন্তেশ্বরের ভাগড়া গ্রামের আবদুল সেলিম শেখের বাড়িতে ঢোকে। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে সেলিমবাবুর স্ত্রী হাসনা বেগমকে ওই দুই যুবক জানায়, তারা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের সহায়ক হিসেবে অফিস থেকে আসছে। আবাস যোজনা প্রকল্পের বাকি টাকা পেতে বেশকিছু নথি দিতে হবে। হাসনা বেগম তাঁর আধার কার্ড, ব্যাংকের পাসবুক, জবকার্ড দুই যুবকের হাতে তুলে দেন। এরপর আধার কার্ডের সঙ্গে ব্যাংকের লিংক করা আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানারে ওই বধূর হাতের আঙুলের ছাপ নেয়। তারপর তারা জানায়, একমাসের মধ্যে বাকি টাকা ওঁরা পেয়ে যাবেন। ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে কাজ সেরে চোখের পলকেই বেপাত্তা হয়ে যায় তারা। এরপরই সন্দেহ হয় ওই বধূর।
ব্যাংকের বই আপডেট করে হাসনা বেগম দেখেন, অ্যাকাউন্ট থেকে দশ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে মন্তেশ্বর থানা পুলিশের দ্বারস্থ হয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। হাসনা বেগম বলেন,“বাড়িতে স্বামী ছিল না। হঠাৎ করেই দুপুর পৌনে একটা নাগাদ ওই দুজন বাড়িতে আসেন। তাদের কথাবার্তা শুনে বুঝতেও পারিনি যে তারা এইভাবে আমার সঙ্গে প্রতারণা করবে।”
[আরও পড়ুন: শ্বশুরের সঙ্গে পরকীয়ায় মজে স্ত্রী! সন্দেহের বশে শীতলকুচিতে বাবাকে ‘খুন’ যুবকের]
পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে ওই দুই যুবক ফের মন্তেশ্বর এলাকায় এসেছিল শনিবার। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ জানতে পারে, ওই প্রতারকরা বাইক নিয়ে পুটশুড়ি-বামুনপাড়া এলাকায় ঢুকেছে। ওইদিন বিকেলে কুসুমগ্রামে নাকা চেকিংয়ের সময় দুই যুবককে পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালায়। তাদের কাছ থেকে স্ক্যানার মেশিন, টাকা, ফোন ও বাইক পাওয়ার পর পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জানতে পারে, আলিবুদ্দিনকে এর আগেও মেমারি থানার পুলিশ এমনই এক প্রতারণার ঘটনায় গ্রেপ্তার করেছিল। জেরায় উঠে আসে তিন বছরেরও বেশী সময় ধরে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে তারা প্রতারণা করেছে।