সুকুমার সরকার, ঢাকা: ভারতে অন্ধকার জগতের ডন দাউদ ইব্রাহিমের ছায়া এবার বাংলাদেশে! দেশের রহস্যময় ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে আজিজ মহম্মদ ভাইয়ের নাম। নব্বই দশকের জনপ্রিয় নায়ক সোহেল চৌধুরীর হত্যাকাণ্ড মামলায় বৃহস্পতিবার আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে। জানা যায়, মহম্মদ ভাইয়ের জীবন নাকি রহস্যে ঘেরা। সিনেমার জগতে হত্যা থেকে নারীসঙ্গ। যা নিয়ে রয়েছে নানা কেচ্ছা। তার নাম জড়িয়েছে মাদক কারবারেও।
শিল্পপতি-ব্যবসায়ী আজিজ ভাই বাংলাদেশের ডনের খাতায় নাম লিখিয়েছে। নামের সঙ্গে ‘ভাই’ শব্দটি থাকার কারণে অনেকেই মনে করেন অন্ধকার জগতের গডফাদার ধরে নিয়েই তাকে ভাই বলা হয়। সাধারণত, মাফিয়া, ডন বা গডফাদারদের ভাই বলে ডাকে তাদের অনুগতরা। কিন্তু আজিজের নামের সঙ্গে ‘ভাই’ শব্দটি মূলত তাদের বংশপদবী। তার মা-বাবার নামের সঙ্গেও ওই পদবী রয়েছে। পিতার নাম মহম্মদ ভাই। মায়ের নাম খাদিজা মহম্মদ ভাই।
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশে প্রভাব বাড়ছে চিনের! হাসিনাকে দিল্লি আসার আমন্ত্রণ মোদির]
১৯৬২ সালে আজিজের জন্ম হয় ঢাকার আরমানিটোলায়। পারিবারিক সূত্রে খবর, একদিন নিজ উদ্যোগে ব্যবসা শুরু করে আজিজ। দিনে দিনে বাড়তে থাকে তার অর্থ সম্পদ। অলিম্পিক ব্যাটারি, অলিম্পিক বলপেন, অলিম্পিক ব্রেড ও বিস্কুট, এমবি ফার্মাসিটিউক্যাল, এমবি ফিল্মের মতো বহু প্রতিষ্ঠানের মালিক সে। এছাড়াও মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং, সিঙ্গাপুরে রয়েছে তার হোটেল ও রিসোর্ট। আবার মাদক ব্যাবসাতেও জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। বলা হয়,ভারতের পলাতক ডন দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গেও নাকি তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
ব্যবসায় প্রতিপত্তি বাড়তেই নব্বইয়ের দশকে আজিজ সিনেমার জগতের প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। এমবি ফিল্মসের ব্যানারে চলচ্চিত্র প্রযোজনায় নামে সে। তার পর অন্তত ৫০টির মতো সিনেমা প্রযোজনা করেছে আজিজ। এভাবেই তার পরিচয় হয় গ্ল্যামার দুনিয়ার বহু নায়িকার সঙ্গে। এর পরই বিভিন্ন নায়িকার সঙ্গে নাম জড়ায় আজিজের। প্রকাশ্যে আসে নারীসঙ্গ নিয়ে নানা কেচ্ছা-কাহিনী। ১৯৯৭ সালে জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনায় নাম জড়ায় আজিজের। এই ঘটনা সেসময় দেশে শোরগোল ফেলে দিয়েছিল। তার ঠিক দুবছর পর আরেক নায়ক সোহেল চৌধুরীর হত্যাকাণ্ডেও আজিজ ও তার পরিবারের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে।
[আরও পড়ুন: ভোটকেন্দ্রে গুলি, ককটেল বিস্ফোরণ, বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের মধ্যেই বাংলাদেশে সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচন]
তবে বারবারই প্রমাণের অভাবে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকেছেন আজিজ। বর্তমানে আজিজ মহম্মদ ভাই সপরিবারে থাইল্যান্ডে থাকেন। সেখান থেকেই ব্যবসা পরিচালনা করেন। আনন্দ ফূর্তি করে সময় কাটাতে পছন্দ করা এই লোককে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পার্টিতে, ক্লাবে দেখা যায়। তার স্ত্রী নওরিন মহম্মদ ভাই দেশে এসে ব্যবসা দেখেন। তাদের ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে।