রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: বিয়েতে যৌতুক হিসাবে দাবি ছিল মোটরবাইকের। কিন্তু চাহিদাপূরণ না হওয়ায় ছ’বছরের শ্যালককে গলায় সিঙারা ঢুকিয়ে খুন করল জামাইবাবু! এমন মর্মান্তিক ঘটনায় ছড়িয়েছে তীব্র চাঞ্চল্য।
পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্তের নাম সোহেল শেখ। বছর চব্বিশের যুবকের বাড়ি থানারপাড়া থানার সাহেবপাড়ার মালিতা পাড়ায়। মৃত শিশু দিল ইসলামের (৬) বাড়ি বিহারের পূর্ণিয়া জেলার গটপুর গ্রামে। সাড়ে তিন মাস আগে বিহারের পূর্ণিয়ার বাসিন্দা মহম্মদ মনিরুলের মেয়ে শাহজাদি বিবির সঙ্গে বিয়ে হয় সোহেলের। বিয়ের সময় শ্বশুরের কাছে সোহেল যৌতুক হিসাবে চেয়েছিল একটি মোটরবাইক। এই নিয়ে মাঝেমধ্যে স্ত্রীর সঙ্গে ঝামেলাও হত তার। বিয়ের পর প্রথমবার মাস খানেক আগে শাহজাদি বিহারের পূর্ণিয়ায় বাবার বাড়িতে যান। দিন কয়েক আগে সোহেলের বাবা সহিদুল শেখ বউমাকে আনতে বিহার যান। সাতদিন আগে বিহার থেকে বউমাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িও ফেরেন। সেই সময় শাহজাদির ভাই দিল ইসলাম দিদির সঙ্গে আসার জেদ ধরে বসে। একপ্রকার বাধ্য হয়েই ভাইকে সঙ্গে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি ফেরেন শাহজাদি বিবি। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে যে ছ’বছরের ভাইয়ের এমন করুণ পরিণিত হবে, তা কল্পনাও করেননি তিনি।
[আরও পড়ুন: তাজমহলের শিল্পীদের হাত সত্যিই কেটে নিয়েছিলেন শাহজাহান? জানুন আসল কাহিনি]
মোটরবাইক ছাড়াই স্ত্রী বাপের বাড়ি থেকে ফেরায় ফের মেজাজ হারায় সোহেল। স্ত্রীকে মারধর করতেও শুরু করে। এই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বচসা চরমে পৌঁছায়। দীর্ঘদিন ধরে চাওয়ার পরও মোটরবাইক না পেয়ে ভিতর ভিতর ফুঁসছিল সোহেল। এরপর গত বুধবার বিকেলে ছোট্ট শালা দিল ইসলামকে নিয়ে ধোড়াদহ বাজারে ঘুরতে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বের হয় সে। তারপর থেকে আর দিলের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। আসল ঘটনা চাপা দিতে এলাকার লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে সোহেলও। এমনকী নিজের টাকা খরচ করে বিভিন্ন এলাকায় শালাকে খুঁজে পেতে মাইকিং শুরু করে সে।
ঘটনাচক্রে ধোড়াদহ বাজারে এক ব্যবসায়ীর সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বুধবার রাত দশটা নাগাদ সাইকেলে চেপে শিশুটিকে কাঁধে করে জলঙ্গি নদীর দিকে যায় সোহেল। সেই সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সোহেলকে শনাক্ত করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখনই নিজের অপরাধ স্বীকার করে সে। বলে, “ধোড়াদহ বাজারের কাছে স্কুলের পাঁচিলের আড়ালে ছোট শালার মুখে সিঙারা ঢুকিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করি। খুনের পর কেউ যাতে সন্দেহ না করে, তার জন্য সাইকেলে চাপিয়ে জলঙ্গি নদী পেরিয়ে মুর্শিদাবাদের দিকে ফুলবাড়ি এলাকায় নিয়ে যাই। সেখানে এক নদীর পাড়ে জঙ্গলের মধ্যে ফেলে আসি শালাকে।” সোহেলকে গ্রেপ্তার করে শুক্রবার বিকেলে তাকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে শিশুটির পচাগলা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। শনিবার দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানোর পাশাপাশি অভিযুক্তকে তেহট্ট মহকুমা আদালতে তোলা হবে।