রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: লটারির নেশায় সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন। ঘর-বাড়ি হারিয়ে পথে বসেছিলেন। আবার সেই লটারিই সব ফিরিয়ে দিল চাপড়ার যুবককে। লটারির হাত ধরেই রাতারাতি পথের ভিখারি থেকে কোটিপতি হলেন তিনি। নবমীর দুপুরে দেড় হাজার টাকার লটারির টিকিট কিনে মালিক হলেন কোটি টাকার।
চাপড়া থানার বড় আন্দুলিয়া মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দা আনারুল শেখ। কোটি টাকার লটারি জেতার খবর প্রকাশ্যে আসতেই তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। পুজো উপলক্ষে সমস্ত সরকারি দপ্তর ছুটি থাকায় টিকিটটা আপাতত পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। এদিকে খবর চাউর হতেই দশমীর সকালে আনারুলের বাড়িতে ভিড় জমান স্থানীয় বাসিন্দারা।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, আনারুল কর্মঠ। কিন্তু রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে বুঁদ হয়েছিলেন তিনি। ভাগ্য ফেরাতে লটারির টিকিট কাটা ছিল তাঁর নেশা। সেই টিকিট কাটতে তাঁর জমানো লক্ষ-লক্ষ টাকা, দুটো অটো, একটা বাইক বিক্রি করে দেন। এমনকী, বিভিন্ন জায়গা থেকে মোটা টাকা ধারও করেছিলেন আনারুল। সেই ধার শোধ করতে নিজের বসত বাড়িটিও বিক্রি করে দিয়েছিলেন। পরিবার নিয়ে আনারুলকে আশ্রয় নিতে হয়েছিল কখনও মামার বাড়ি তো কখনও শ্বশুরবাড়িতে। অবশেষ নবমী নিশিতে ফিরল তাঁর ভাগ্য।
[আরও পড়ুন: ‘পাশে আছি’, বিজয়ার মিষ্টি হাতে চাকরিপ্রার্থীদের ধরনামঞ্চে বিমান বসু]
আনারুলের কথায়, “কিছু দুষ্টু লোকের পাল্লায় পড়ে লটারি টিকিট কেটে জীবনের সবকিছু শেষ করে দিয়েছিলাম। এমনকী, বিদেশে কয়েক বছর কাজ করে ২৭ লক্ষ টাকা সঞ্চয় করেছিলাম, রাতারাতি বড়লোক হবার নেশায় লটারি টিকিট কাটতে কাটতে সমস্ত টাকা শেষ হয়ে যায়। হাজার-হাজার টাকার টিকিট কেটেও কোনদিন পুরষ্কার হয়নি। টিকিট কাটার নেশায় চড়া সুদে ঋণ নিয়ে টিকিট কেটেছি। সেই ঋণ শোধ করতে গিয়ে গাড়ি-বাড়ি সমস্ত কিছু বিক্রি করতে হয়েছে। সবকিছু হারিয়ে তখন আমি পথের ভিখারি।অবশেষে পরিবার ছেড়ে ভিন রাজ্যের শ্রমিকের কাজ। কয়েকদিন আগে ভিন রাজ্যে থেকে বাড়িতে এসেছেন আনারুল। নবমীর দুপুরে ভিনরাজ্যে কাজে যাওয়ার জন্য কৃষ্ণনগর স্টেশনে ট্রেনের টিকিট কেটে বাড়ি ফেরার পথে বড় আন্দুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে বাস থেকে নেমে একটি লটারির টিকিট কাউন্টার থেকে ১৫০০ টাকার টিকিট কাটেন তিনি। রাতে মোবাইলে দেখেন, এক কোটি টাকা প্রথম পুরস্কার জিতছেন। আনারুল বলছেন, “যা গিয়েছে তা ফিরে পাব না, কিন্তু যা হারিয়েছি তা পুনরায় ফিরিয়ে আনব। আর জীবনে কোনওদিন লটারি টিকিট কাটব না।”
পুলিশের এক আধিকারিক জানান, অফিস আদালত ছুটি থাকায় আনারুলবাবুর নিরাপত্তার কারণে টিকিটটি থানার হেফাজতে রয়েছে, অফিস আদালত খুললে আনারুলবাবুকে ডেকে নিয়ে তাঁর টাকা পাওয়ার বিষয় সমস্ত রকম পদক্ষেপ নেওয়া হবে।