shono
Advertisement

ভালবাসার ইচ্ছেপূরণের গ্রামে

এক বুক ভালবাসা নিয়ে এই হরিৎক্ষেত্র অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। এবার আপনি শুধু একটু সময় বের করতে পারলেই হয়! The post ভালবাসার ইচ্ছেপূরণের গ্রামে appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 11:18 AM Jul 09, 2016Updated: 03:53 PM Feb 28, 2019

পরিচিতা দত্ত: তিনটে সবুজ গ্রাম– মানখিম, রামধুরা আর ইচ্ছেগাঁও৷ এই তিন গাঁয়েই যেন প্রকৃতি রং ছড়িয়ে দিয়েছে৷
শিলিগুড়ি থেকে যখন বোলেরো গাড়িতে উঠলাম, বুঝতেই পারিনি জীবনের এত বাঁক লুকিয়ে রয়েছে চলার পথে৷ পাহাড়ের রহস্যই যেন জীবনে ঘেরা৷ পূর্ব সিকিমের সুখের দেশে পা রাখলাম বাংলা পার হতেই৷ তখনই যেন সমস্ত প্রকৃতি উজাড় করে দিল রূপের ডালি৷ গাড়ি পূর্ব সিকিমে ঢুকতেই অজস্র ফুলের অভ্যর্থনা শুরু হয়ে গিয়েছে৷ পপি, ঘন্টি, দূরে নীল পাহাড়ের গায়ে রডোডেনড্রনের ছড়াছড়ি৷ কোনও পাহাড়ের মাথায় আবার হিরের টোপর৷ ড্রাইভার চেতন বললেন, কাল রাতে এখানে বৃষ্টি হয়েছিল, তাই বরফ এখন ভাসছে দূর পাহাড়ের মাথার ওপর টোপর হয়ে৷

Advertisement


আমাদের গাড়ি প্রথমে পৌঁছল সোজা আড়িতার৷ ওখানে লেকের ওপরেই মানখিম৷ মেঘ ঘিরে রেখেছে আড়িতার লেককে৷ কোথাও কোথাও দমকা বাতাসের ধাক্কায় সরে গিয়ে উঁকি দিচ্ছে জাপানিকো ইন্ডিকা গাছের সবুজ সারি৷ লেকের জল স্থির৷ কখনও বাতাসে আঁকা হালকা কাঁপানো ঢেউ৷ দশ-বিশটা মরাল খেলছে লেকের জলে৷ লেকের জলে বোটিং করার সুবন্দোবস্ত আছে৷

আড়িতার থেকে গাড়ি পৌঁছল মানখিমে৷ মানখিমের চারপাশ সবুজের চাদরে মোড়া৷ চারিদিকে এলাচের গন্ধে আপনি মাতোয়ারা হয়ে যাবেন৷ এখানেই থাকার জায়গা হল রবিনভাই-এর হেভেন্স ভ্যালি হোম স্টে-তে৷ সুন্দর, সাজানো-গোছানো কটেজ৷ সামনে পাথর কাটা সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেলে একটি ছাতা লাগানো বাঁধানো জায়গা৷ সেখানে বসে কাঞ্চনজঙ্ঘার শিখর দেখা যায়৷


এরপরের গন্তব্য রামধুরা৷ মানখিম থেকে দূরত্ব ৪৫ কিমি৷ এখানে প্রকৃতিকে ফুলের জলসাঘর বলা যায়৷ বলা যায় ধর্মের সহাবস্থানও৷ এখানেই শিবের শ্বেতশুভ্র মন্দিরে জল দিতে যান পাহাড়ি মেয়েরা নিচের তিস্তা থেকে৷ মনস্কামনা পূরণের জন্য প্রতি সোমবার উৎসবের দিন লেগে থাকে৷ দুপুরে বের হলাম বৌ মনাস্ট্রি, শংকরের মন্দির দর্শনে৷ শিবের মন্দির যেতে রামধুরা থেকে বিস্তর পাহাড়ি চক্কর ভেঙে পৌঁছতে হয় অনেক উঁচুতে৷

রামধুরা সিঙ্কোনা চাষের ভূমি৷ হিমালি পার্কও দ্রষ্টব্যস্থান৷ রামধুরায় দেখলাম নদী ও পাহাড়ের আশ্চর্য সখ্য৷ ওয়াচটাওয়ার থেকে নিচে তাকালে দেখা যাবে আঁকাবাঁকা প্রবহমান তিস্তা, ওপরে রোদ্দুরে ঝিকমিক সোনালি পাহাড়৷ রাতে এখানে আলোর খেলায় পেলিং, দার্জিলিং, রংপো তিন শহরই দৃশ্যমান৷


রামধুরায় থেকে যাওয়ার বাসনা অধুরা করেই চলেছি ইচ্ছেগাঁওয়ের দিকে৷ রামধুরা থেকে ইচ্ছেগাঁও ৫-৬ কিমি৷ ইচ্ছেগাঁওয়ের আকাশে মেঘের বিশাল সাম্রাজ্য তৈরি হয়েছে৷ আমাদের গাড়ি পৌঁছল নির্মলা হোম স্টে-তে৷ নেমেই ছুট দিলাম পাইন বনভূমির দিকে৷ এ এক অপরূপ দৃশ্য৷ সঙ্গে এই হোম স্টে-র মালিকের ছোট্ট মেয়ে করিনা৷ এখানে আমলকী, হরীতকী, বহেড়া ছাড়াও পুদিনা, চিরতার জঙ্গল রয়েছে৷ তিয়ারপাতি গাছও রয়েছে, যা নাকি জীবনদায়ী ওষুধ৷ এখানের জঙ্গলে কিংফিশার, ব়্যাবিট, বাদুড়, ভালুক, শজারু, খেঁকশিয়ালের অবাধ রাজ৷ ইচ্ছেগাঁওয়ের নির্মলা হোম স্টে-র মারসিনা, শান্তি ও করিনা-র আতিথেয়তা আপনাকে মুগ্ধ করবেই! আসলে ভালবাসতে শেখায় এই ইচ্ছেগাঁও৷
এক বুক ভালবাসা নিয়ে এই হরিৎক্ষেত্র অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। এবার আপনি শুধু একটু সময় বের করতে পারলেই হয়!
কীভাবে যাবেন:
কলকাতা থেকে এনজেপিগামী যে কোনও ট্রেন, সেখান থেকে গাড়িতে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার রাস্তা মানখিম (আড়িতার লেকের ঠিক ওপরে)৷ ওখান থেকে গাড়িতে রামধুরা গ্রাম ৪৫ কিমি৷ সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা৷ আর রামধুরা থেকে ইচ্ছেগাঁও মাত্র ৬ কিমি৷ লাগবে ৩০ মিনিট৷
কখন যাবেন:
জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস ভরা বর্ষা৷ এই সময়টা বাদ দিয়ে সারা বছরই যাওয়া যেতে পারে৷ সেরা সময় ডিসেম্বর (যদিও খুব ঠান্ডা হবে) থেকে এপ্রিল মাস৷
কী খাবেন:
নুডলস, থুকপা, মোমো, পাহাড়ি দুধ ও ঘি৷
কোথায় থাকবেন:
হেভেন্স ভ্যালি হোম স্টে (মানখিম), সত্যম হোম স্টে (রামধুরা গ্রাম) মেরিগোল্ড হোম স্টে ও নির্মলা হোম স্টে (ইচ্ছেগাঁও)

The post ভালবাসার ইচ্ছেপূরণের গ্রামে appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement