আলাপন সাহা: কলকাতার মতো প্যাচপ্যাচে গরম নেই। সকাল এগারোটা-সাড়ে এগারোটায় তাপমাত্রা কুড়ি-একুশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। ঝকঝকে নীল আকাশ। চড়া রোদ থাকলেও সেটা কখনই অস্বস্তিদায়ক নয়।
মঙ্গলবার থেকে মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে রনজি (Ranji Trophy) সেমিফাইনাল যুদ্ধের আগে বাংলা (Bengal) টিমের অন্দরমহলটাও ঠিক বেঙ্গালুরুর আবহাওয়ার মতোই। ঝকঝকে এবং আরামদায়ক। তাই প্রতিপক্ষ টিমে যতই আইপিএল প্লে অফে সেঞ্চুরি করে আসা একজন রজত পাতিদার থাকুন না কেন, যতই ঘণ্টায় দেড়শো কিলোমিটার গতিতে বোলিং করা কুলদীপ সেন থাকুন না কেন, সে’সব নিয়ে বঙ্গব্রিগেড এতটুকু চিন্তায় নেই।
বরং বাংলার ঝকঝকে নীল আকাশে যেটুকু যা দুশ্চিন্তার মেঘ, পুরোটাই মনোজ তিওয়ারিকে (Manoj Tiwary) নিয়ে। তাঁর চোট নিয়ে।
[আরও পড়ুন: IND v SA: ভুবনেশ্বরের দুরন্ত বোলিংয়েও ঘুচল না ব্যর্থতা, ‘ক্লাসেন’ ঝড়ে তছনছ পন্থের ভারত]
কোয়ার্টার ফাইনালে মনোজ দুটো ইনিংসেই খুব ভাল খেলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরিও করেন। মনোজের ফর্মে থাকা মানে গোটা টিম ম্যানেজমেন্ট যে অতীব নিশ্চিন্ত থাকবে, সেটা বলে দেওয়াই যায়। কিন্তু মুশকিল হল, হাঁটুর চোট কিছুটা হলেও মনোজকে ভোগাচ্ছে।
রবিবার সকালে বেঙ্গালুরু বিমানবন্দর থেকে আলুর পৌঁছতে প্রায় ঘণ্টাখানেক লাগল। রবিবার বলে রাস্তাঘাট তুলনায় ফাঁকা। নইলে নির্ঘাত সময় আরও বেশি লাগত। বছর ছয়েক আগে অনিল কুম্বলে ভারতীয় কোচ হয়ে আসার পর এখানেই দিন সাতেকের একটা ক্যাম্প করেছিলেন। বেঙ্গালুরু শহরটা থেকে আলুর অনেকটাই আলাদা। একেবারে গ্রাম্য পরিবেশ। রাস্তার দু’ধারে ধানক্ষেত। প্রচুর গাছপালা। বিশাল জমি নিয়ে এখানে কর্নাটক ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অ্যাকাডেমি করেছে। তিনটে বড় মাঠ। মাঠে পৌঁছনোর পর দেখা গেল, লোকজন বিশেষ নেই। দুটো টিম (বাংলা আর মধ্যপ্রদেশ) প্র্যাকটিস করে চলেছে। বাংলার অবশ্য ততক্ষণে অর্ধেক নেটসেশন হয়ে গিয়েছে। অভিমন্যু ঈশ্বরণ, অভিষেক রামন, অনুষ্টুপ মজুমদারদের একে একে ব্যাটিং সেরে ফেলেছেন। কিন্তু মনোজ কোথাও নেই।
খবর নিয়ে জানা গেল, বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক এদিন আর মাঠমুখো হননি। হোটেলে গোটা দিন বিশ্রাম নিয়েছেন। ঝাড়খণ্ডের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরির পরই হাঁটুর সমস্যা কিছুটা বেড়েছে মনোজের। তড়িঘড়ি করে এমআরআই করানো হয়। রিপোর্টে দেখা যায়, নতুন করে চোট লাগেনি। চোটটা পুরোনো। যা নিয়ে বাংলা কোচ অরুণ লাল মনোজের সঙ্গে আলাদা করে কথাও বলেছেন। প্র্যাকটিসের মাঝে বঙ্গ হেড কোচ বলছিলেন, “আমি ওর সঙ্গে কথা বলেছি। মনোজকে বলেছি, এসব নিয়েই এখন তোমাকে চলতে হবে। আমি আমার ক্রিকেট কেরিয়ারের শেষ পাঁচ বছর এভাবেই খেলেছি। অনেকক্ষণ ব্যাট করে সেঞ্চুরি করার পরই দেখতাম হাঁটু ফুলে গিয়েছে। তারপর সারাদিন বরফ দিয়ে সেটা আবার ঠিক করতাম। ওকে বলেছি, এসব নিয়ে বেশি ভেবো না। সারাদিন বিশ্রাম নাও। সবঠিক হয়ে যাবে। আশা করি মনোজকে সেমিফাইনালে পাব।”
মনোজকে পাওয়া নিয়ে বাংলা টিম এখনও পর্যন্ত আশায় থাকলেও, টিম কম্বিনেশন নিয়ে ধাঁধা থাকছে। জাস্ট ক্রিকেট অ্যাকাডেমি (বাংলা যেখানে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল), তার থেকে আলুরের উইকেট সম্পূর্ণ আলাদা। এদিন হেড কোচকে নিয়ে উইকেট দেখতে যান কোচ সৌরাশিস লাহিড়ী। ঝাড়খণ্ডে ম্যাচে পিচে যেরকম ঘাস ছিল, এখান তার অর্ধেকও নেই। বরং অনেক বেশি শুষ্ক। বাংলা শিবির ধরেই নিয়েছে, এখানে ভালরকম স্পিন হবে। তাই একজন পেসার বসিয়ে বাড়তি স্পিনার খেলানো হবে, সেটা একপ্রকার চূড়ান্ত। সম্ভবত ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায় খেলবেন। কিন্তু কোন পেসারকে বসানো হবে, সেটা নিয়েই যাবতীয় ভাবনা। আকাশ দীপ, মুকেশ কুমার আর ঈশান পোড়েল, তিনজনই টিমের সেরা পেসার। তারউপর এদিন নেটে আকাশ যা সব আগুনে ডেলিভারি করছিলেন, টিমকে তা স্বস্তিও দিচ্ছে। মুকেশ কিংবা ঈশানকে বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়াটাও কঠিন। সায়ন শেখর মণ্ডল কোয়ার্টার ফাইনালে যা করেছেন, তাতে শেষ চারের টিম লিস্টে সর্বপ্রথম তাঁর নামটাই লেখা উচিত।
বঙ্গ শিবির থেকে বলা হল, একটা দিন আরও সময় আছে। দেখা যাক কী হয়। তবে বাংলার হেড কোচ পরিষ্কার বলে দিলেন, টিম কম্বিনেশনের স্বার্থে যাকে খুশি বসতে হতে পারে। বলছিলেন, “আগেরবার কী হয়েছিল মনে নেই? অর্ণব দুটো ইনিংস মিলিয়ে সাত-আটটা উইকেট নিয়েছিল। তারপর হাফেসেঞ্চুরি করল। কিন্তু তারপর ম্যাচেই ওকে বসতে হয়েছিল।” সঙ্গে জুড়লেন, “এই বাংলা অন্য বাংলা। আমরা নাম দেখে ক্রিকেটটা খেলি না। খেলি টিম হিসাবে।”
ভুল বলেননি অরুণ লাল। এই বাংলা সত্যিই অন্য বাংলা। যারা এখন আর প্রতিপক্ষ নিয়ে ভাবে না। ভাবে– নিষ্ঠুর ক্রিকেট দিয়ে প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করা নিয়ে!