সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: প্রবল ঘূর্ণিঝড় আমফানে রাজ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দুই জেলা উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা। সাইক্লোনের প্রকোপে তছনছ বসিরহাট, হাবড়া, বজবজ থেকে ক্যানিং, মিনাখা-সহ দুই জেলার বিভিন্ন এলাকা। মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েকজনের।
বজবজ পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের এস এন ব্যানার্জি রোডে বিদ্যুৎপিষ্ঠ হয়ে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। ঝড়ে একটি বিদ্যুতের খুঁটি আমগাছ সমেত ভেঙে পড়ে রাস্তায়। সেই সময় সমস্ত রাস্তা জলে পরিপূর্ণ ছিল। রাতে ১০ টার পর কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পথে বিদ্যুৎপিষ্ঠ হয় ভাইপো পার্থ রাজা বিশ্বাস (৩৫)। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে বিদ্যুতের সংস্পর্শে আসেন কাকা স্বপন বিশ্বাস(৪৫)। আবার এঁদেরকে বাঁচাতে গিয়ে স্বপনের বন্ধু আবীর অধিকারী (৩৪) এবং ভাইপোর শালা সৌরভ মন্ডল (২৩) বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হন। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের অভিযোগ, তাঁদের তরফ থেকে বারবার বলা সত্ত্বেও CESC ইলেকট্রিক সাপ্লাই বন্ধ না করায় এত বড় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। যদিও এই বিষয়ে CESC কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এই ঘটনার পর থেকেই গোটা বজবজ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বজবজ থানার পুলিশ রাতেই চারটি দেহকে উদ্ধার করে বজবজ পৌর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন।
[আরও পড়ুন: বাংলায় ১৭৩৭ সালের বিধ্বংসী ঝড়ের স্মৃতি ফেরাল আমফান ]
তাণ্ডবের জেরে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ম্যানগ্রোভ জঙ্গলেরও। ক্যানিং মহাকুমার গোসোবা, বাসন্তী, কুলতলী, জয়নগরের বিস্তীর্ণ এলাকায় ক্ষতি হয়। ক্যানিং-বারাইপুর রোড ও বাসন্তী হাইওয়ে এবং অন্যদিকে বারুইপুর কুলপি রোডে গাছ পড়ায় পুরোপুরি অবরুদ্ধ। পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়রাও গাছ পরিষ্কার করছেন। কয়েক হাজার বৈদ্যুতিক খুঁটি পড়ে যাওয়ায় কখন বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হবে কেউ বলতে পারছেন না। কাজ করছে না মোবাইল ফোনের টাওয়ারও। বিভিন্ন এলাকায় নদী বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছে। জেলা শাসকের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রেখে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুন্দরবনের পরিস্থিতির খোঁজ নিয়েছেন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
সুন্দরবনে বোট, লঞ্চ এবং খেয়ানৌকা একের পর এক মুখ থুবড়ে পড়ে আছে নদীর বুকে। একটি ট্রলার ডুবির খবর পাওয়া গিয়েছে ক্যানিংয়ের মাতলা নদীতে। যদিও কেউ হতাহত হননি। প্রশাসনিক নির্দেশ অমান্য করে একটি মাছ ধরার ট্রলার মাতলা নদীতে চলাফেরা করছিল। তখনই ঘটে এই দুর্ঘটনা।
[আরও পড়ুন: আমফান বিদায় নিলেও মুক্তি নেই , উত্তরের জেলাগুলিতে ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা]
আমফানের দাপটে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমা, নামখানা, বকখালি, সাগরদ্বীপ-সহ সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অংশ। পাকা বাড়ির উপর বিদ্যুতের ট্রান্সফরমারের উপর গাছ পড়ে ট্রান্সফরমার ভেঙেছে। রাস্তার উপর উপড়ে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি, টেলিফোন পোস্ট। বৃহস্পতিবার এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত। যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
এদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহনপুর থানার বাগদা গ্ৰামে আমফানের শিকার এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী-সহ দুই। বুধবার ঝড়ের তান্ডবে বাড়িতে গাছ ভেঙে পড়ায় গুরুতর জখম হয় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সতেরো বছরের নবকুমার পাত্র। বৃহস্পতিবার ভোরে কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এদিকে বুধবার রাতে বাড়ির পিছনে একটি গাছের মোটা ডাল ভেঙে পড়ে ছাদে পড়ায় আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ৩০ বছরের রবিন পূর্তির। ঘটনাটি ঘটেছে পিংলা থানার দুজিপুর গ্ৰাম পঞ্চায়েতের রাউতচক কালিকাদিঘী গ্ৰামে।
The post আমফানে ব্যাপক ক্ষতি দুই ২৪ পরগনার, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন, বিপর্যস্ত ইন্টারনেট পরিষেবা appeared first on Sangbad Pratidin.