সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: শহিদ সপ্তাহের মাঝেই শুক্রবার সাতসকালে মানবাজার ১ নম্বর ব্লকের বিডিওকে খুনের হুমকি দিয়ে মাওবাদীদের নামে পোস্টার। ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পুরুলিয়ায় (Purulia)। যদিও উদ্ধার হওয়া পোস্টারগুলি আদৌ মাওবাদীদের দেওয়া কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকালে পুরুলিয়ার মানবাজার এলাকায় মানবাজার-বরাবাজার ও মানবাজার-বান্দোয়ান রাজ্য সড়কের ওপরে বিভিন্ন গাছে একাধিক পোস্টার দেখতে পান স্থানীয়রা। কোনওটি সাদা কাগজে লাল কালিতে লেখা। কোনওটি আবার কমলা রঙের কাগজে লেখা। সেই কাগজের বয়ান সম্পূর্ণভাবে স্পষ্ট না হলেও বোঝা যাচ্ছে, সেখানে একটি লজ বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিডিও সেই লজটি খুলেছেন এমন দাবিও করা হয়েছে। পাশাপাশি সেই লজ বন্ধ না করা হলে বিডিও মোনাজকুমার পাহাড়িকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে। পোস্টারের নিচে লেখা ‘মাওবাদী’। ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বাভাবিকভাবেই তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তবে এটি আদৌ মাওবাদী পোস্টার কিনা, তা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন। কারণ এদিন উদ্ধার হওয়া পোস্টারের বাক্য গঠন ও বানানে অজস্র ভুল। কিন্তু মাওবাদীদের পোস্টারে সাধারণত ঝকঝকে হাতের লেখা এবং নির্ভুল বাংলা থাকে। ফলে এটা ‘ভুয়ো মাওবাদী’ পোস্টার হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, পুরুলিয়ার জঙ্গলমহল-সহ ঝাড়গ্রাম, দক্ষিণ বাঁকুড়ায় বেশ কিছুদিন ধরে ‘ভুয়ো মাওবাদী’দের পোস্টার মিলছিল।
[আরও পড়ুন: ‘বলির পাঁঠা পার্থ’, প্রতিক্রিয়া সুকান্তর, ‘অপসারণ করেই দায় এড়ানো যায় না’, বলছে সিপিএম]
এ বিষয়ে বিডিও মোনাজকুমার পাহাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, “আমি এনিয়ে কিছু বলব না। পুলিশ তদন্ত করছে।” পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস. সেলভামুরুগন বলেন, “কিছু মানুষ ব্যক্তিগত আক্রোশে এই কাজ করেছে। এখানে কোনও মাওবাদী নেই। তবুও বিষয়টির খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।”
প্রসঙ্গত, ২৮ জুলাই-৩ আগস্ট মাওবাদীদের শহিদ সপ্তাহ চলছে। বাংলায় সিপিআই (মাওবাদী)-দের সংগঠন একেবারেই দুর্বল। ঝাড়খন্ড সীমানায় থেকে তারা কোনওভাবে কার্যকলাপ চালাচ্ছে। তারপরও সতর্ক রাজ্য পুলিশ। জঙ্গলমহলের চার জেলা পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরের একদা মাও উপদ্রুত ২৯ টি থানা এলাকায় হাইঅ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। জঙ্গলমহলের ঝাড়খন্ড ও ওড়িশা সীমানায় যৌথ বাহিনীর রুটিন লঙ রুট পেট্রোলিং চললেও শহিদ সপ্তাহে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। ঝাড়খন্ড সীমানায় এখনই যৌথ বাহিনীর কোনও অভিযান না হলেও পুলিশ শহিদ সপ্তাহের মধ্যে ঝাড়খন্ড লাগোয়া জঙ্গলে রীতিমতো অ্যামবুশ করে থাকবে বলে রাজ্য পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। এছাড়া আরও একাধিক সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।