সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: ঝাড়গ্রামে (Jhargram) ফের মাওবাদীদের সক্রিয়তা বাড়ছে। এবার পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে পোস্টার উদ্ধার হল বিনপুর থানা এলাকার নারায়ণপুরে। একটিই পোস্টারে লাল কালিতে হুমকি বার্তা লেখা। পুলিশের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে লেখা – জুতোর মালা পরানো হবে। সকালে স্থানীয় বাসিন্দারাই পোস্টারটি দেখতে পান বেলপাহাড়িতে ঢোকার মুখে। খবর পাঠানো হয় পুলিশে। ঘটনার তদন্তে নেমে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক যুগলকে। ফাঁস হয়েছে তাঁদের পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়টিও। তাদের জেরা করে বিস্তারিত জানতে মরিয়া তদন্তকারীরা। এই মুহূর্তে জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে মাওবাদী হামলা নিয়ে কেন্দ্রের সতর্কবার্তায় বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। ঝাড়গ্রামে গত কয়েকদিনে এ নিয়ে তিনটি পোস্টার উদ্ধার হয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে মাওবাদীদের ভয়ে কাঁটা জঙ্গলমহল (Junglemahal)। তারই মধ্যে তৃণমূল নেতা ও পুলিশকে হুমকি দিয়ে একাধিক পোস্টার উদ্ধার হয়েছে। ঝাড়গ্রামের চন্দ্রি এলাকায় চলেছে গুলিও। জখম হয়েছেন এক যুবক। গত সপ্তাহের ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়া ফাঁড়ির রামকৃষ্ণ বাজার এবং সরডিহা স্টেশন সংলগ্ন একটি দেওয়ালে মাওবাদীদের নামে দুটি পোস্টার চোখে পড়ে স্থানীয়দের। তাতে ‘কিষেণজি অমর রহে’ বলে উল্লেখ করে ‘খেলা হবে’ (Khela Habe) বার্তা দেওয়া। পোস্টারে লেখা – ”এতদিন তৃণমূল খেলেছে জনগণের সাথে, এবার মাওবাদি খেলবে তৃণমূল নেতার সাথে।” যদিও এই পোস্টার আদৌ মাওবাদীদের কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিল পুলিশ।
[আরও পড়ুন: তুঙ্গে বিজেপির ঘরোয়া বিবাদ, এবার তমলুক সাংগঠনিক জেলার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ শুভেন্দুর]
এরপর সোমবার সেই ঝাড়গ্রামেই উদ্ধার হল পোস্টার। তাতে লেখা – ”সব তৃণমূল নেতাদের নিয়ে খেলা হবে। পুলিশকে জুতোর মালা পরানো হবে।” তারপর লেখা – ”যদি পারো তো অ্যারেস্ট করো।” এই ঘটনার তদন্তে নেমে রাজু সিং ও পূজা সিং নামে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কাঁকো এলাকা থেকে। তাঁদের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু মাওবাদী পোস্টার। সম্প্রতি যেসব পোস্টার পড়েছিল ঝাড়গ্রামে, সেই হাতের লেখার সঙ্গে সিং দম্পতির বাড়ি থেকে উদ্ধার পোস্টারের হাতের লেখার মিল পেয়েছে পুলিশ।
[আরও পড়ুন: বগটুইয়ে ক্ষতিপূরণ নিয়ে মামলা, রাজ্যের কাছে জবাব তলব করল হাই কোর্ট]
রাজু সিংকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, পাঁচ-ছ মাস আগে মেদিনীপুরের সাঁকরাইলের বাসিন্দা প্রথম স্ত্রীর সঙ্গ ছেড়ে বিনপুরের কাঁকোয় এসে থাকতে শুরু করেন। এরাই পোস্টার লিখে দিকে দিকে সাঁটিয়ে দিত। জানা গিয়েছে, ফোনে কেউ তাঁদের নির্দেশ দিত পোস্টার লেখার জন্য। কী বয়ান হবে, কোথায় পোস্টার সাঁটানো হবে, তা নিয়ে নির্দেশ দেওয়া হল। টাকার বিনিময়ে তাঁরা এই কাজ করতেন। তবে এই বয়ানের সত্যতা কতটা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ”দু’জনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। পোস্টারের লেখার সঙ্গে ধৃত রাজু সিংয়ের হাতের লেখার মিল রয়েছে। কেউ তাদের ফোনে নির্দেশিকা দিত, সেইমতো তারা পোস্টার লিখত। তবে এসব কথার সত্যতা কতটা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”