রাজ কুমার,আলিপুরদুয়ার: কথা ছিল লকডাউনের পর পরিবারের কাছে ফিরবে ছেলে। কথা রাখল সে। তবে কফিনবন্দি হয়ে শেষবারের মতো পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন শহিদ জওয়ান বিপুল রায়। শুক্রবার দুপুরে বাড়ি এসে পৌঁছবে তাঁর মরদেহ। ঘরের ছেলেকে শেষবার দেখার অপেক্ষায় গোটা গ্রাম।
বিন্দিপাড়া, অখ্যাত এই গ্রাম এখন লোকমুখ ও সংবাদ জগতের মাধ্যমে গোটা দেশের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে। গোটা গ্রামে কার্যত বৃহস্পতিবার হাড়ি চড়েনি। যুদ্ধে বিপুলের প্রাণ হারানোর খবরটা আজ এত ঘন্টা পরেও যেন বিশ্বাস করতে পারছে না বিন্দিপাড়া। বিপুলদের বাড়ি পাশেই বিন্দিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাঠে তৈরি হচ্ছে শহিদকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর মঞ্চ। বৃহস্পতিবার শহীদের দেহ আসবে আলিপুরদুয়ারের হাসিমারা বায়ু সেনা ছাউনিতে। গাড়িতে করে শুক্রবার দুপুরে হাসিমারা থেকে বিপুলের বাড়িতে মৃতদেহ পৌঁছবে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিপুলের ভাই বকুলকে ভুটান থেকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বিপুলের স্ত্রী রূম্পা ও মেয়ে তমন্যাও শুক্রবার প্লেনে মিরাট থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরবেন। তাঁদের উপস্থিতিতে বিপুলের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। এদিন সারাদিন মুখভার ছিল আকাশেরও। আলিপুরদুয়ার জেলাজুড়ে ভারী বৃষ্টি। যেন বীর শহিদের শেষ যাত্রায় বিন্দিপাড়ার সঙ্গে চোখের জল মিশেছে প্রকৃতিরও। তবে বৃষ্টি উপেক্ষা করে চলছে শহিদ মঞ্চ বানানোর কাজ।
[আরও পড়ুন : বাগনানে বন্ধ স্কুলের ক্লাসরুমে তীব্র বিস্ফোরণ! আতঙ্কে ছোটাছুটি স্থানীয়দের]
২০০৩ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন বিপুল৷ ভাটিবাড়ি হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেই সেনাতে নাম লেখান তিনি৷ অবসর নিয়ে এক বছর পরেই বাড়ি ফিরে আসার কথা ছিল বিপুলের৷ বছরে একবার করে গ্রামের বাড়িতে আসতেন। তবে লকডাউনের জন্য এ বছর বাড়িতে আসতে পারেননি। তাঁর বৃদ্ধ বাবা নিরেন রায় জানান, ক্ষেত মজুর পরিবার। পরিবারের মেরুদন্ড ছিল বড় ছেলে বিপুল। সেই মেরুদন্ডটাই ভেঙ্গে গেল! কিছুতেই বিপুলের এই চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না বৃদ্ধ নিরেনবাবু। এদিন তিনি বলেন, “ভাবছি, পরিবারটার কি হবে। ছোটবেলা থেকেই সাহসী। সৈনিক হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল ওঁর মনে। যুদ্ধক্ষেত্রে ও প্রাণ দেবে এটা আমরা ভাবতে পারিনি।” বিপুলের মা শোকে পাথর।
[আরও পড়ুন : উনি ২০ বার চিনে গিয়েছেন চিনের দালালি করতে’, মোদিকে বেনজির আক্রমণ অনুব্রতর]
এদিকে শহিদ বিপুল রায়ের পরিবারের সাথে বৃহস্পতিবার দেখা করেন তৃণমূল কংQগ্রেসের বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী। পরিবারের সদস্যকে চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর সেই বার্তা নিয়েই শুক্রবার শহীদের বাড়িতে এসে পরিবারের সাথে দেখা করেন সৌরভ চক্রবর্তী। শহীদের মঞ্চের কাজ ঘুরে দেখেন বিধায়ক৷ তিনি বলেন,”বিপুলের বীর যোদ্ধা। আমাদের গর্ব। আলিপুরদুয়ার শহরে বিপুলকে শ্রদ্ধা জানাতে শহিদ বেদি করা হবে। গ্রামেও হবে শহিদ স্তম্ভ।” জানা গিয়েছে, শেষকৃত্যে হাজির থাকবেন মন্ত্রী গৌতম দেব। হাসিমারা থেকে মৃতদেহের পাশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বার্লা।
The post ‘পরিবারের মেরুদণ্ডটাই তো ভেঙে গেল’, শহিদ ছেলেকে শেষ দেখার অপেক্ষায় বিপুলের বাবা appeared first on Sangbad Pratidin.