সুকুমার সরকার, ঢাকা: ভারতের সমর্থন ও অঙ্গুলিহেলনেই ভোট করিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার! গোটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কলকাঠি নেড়েছে নয়াদিল্লি! গোড়া থেকেই এমন অভিযোগ করছে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। আমেরিকা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রসংঘ পর্যন্ত ‘ভোটসন্ত্রাস’ ইস্যু তুলে ধরেছে তারা। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের তথাকথিত কলকাঠি নাড়ার অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হয় মার্কিন বিদেশ দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারকে। কিন্তু নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে একটি শব্দও খরচ করেননি তিনি। বিতর্কিত প্রশ্নটি এড়িয়ে যান মিলার।
৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয় গণতন্ত্রের বৃহত্তম উৎসব। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিপুল জনমত নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছেন আওয়ামি লিগের প্রধান শেখ হাসিনা। টানা চতুর্থবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেছেন মুজিবকন্যা। উৎসবের আবহে ভোট হলেও নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে ‘অসন্তষ্ট’ আমেরিকা। বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে হয়নি বলে তোপ দেগে চলেছে বাইডেন প্রশাসন। নির্বাচনী আবহে বিরোধী দলের বহু নেতা, কর্মীদের জেলবন্দি থাকা খুব অভিপ্রেত বিষয় নয় বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিনিধিরা। এই ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে ক্রমাগত নিশানা করছে ওয়াশিংটন।
মঙ্গলবার ম্যাথিউ মিলারের সাংবাদিক সম্মেলনে ফের একবার উঠে আসে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ। সেখানেই মিলারকে প্রশ্ন করা হয়, কানাডার একটি তদন্তে রাশিয়া ও চিনের পাশাপাশি বাংলাদেশের নির্বাচনেও ভারতের হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে, আপনি এনিয়ে কী বলবেন? উত্তরে মিলার বলেন, “আপনি যে কানাডিয়ান তদন্তের কথা উল্লেখ করেছেন, সেই সম্পর্কে আমার কাছে কোনও প্রতিক্রিয়া নেই। এটা কানাডার বিষয়। আমরা গণতান্ত্রিক নীতিমালাকে এগিয়ে নিতে যেতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রেখেছি। যা সকল বাংলাদেশির জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার চাবিকাঠি।”
[আরও পড়ুন: আরও মজবুত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, এক বছরে ১৬ লক্ষ বাংলাদেশিকে ভিসা দিল ভারত]
বলে রাখা ভালো, নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করা নিয়ে বিএনপির অভিযোগ ছিল, “বাংলাদেশের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ভারত। পশ্চিমা বিশ্বের চাপ ও বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলোর দাবিকে উপেক্ষা করে দেশটি যে অবস্থান নিয়েছে তা ভুল।” বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মইন খান বলেছিলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবন স্পষ্টতই বাধাগ্রস্ত করছে ‘বন্ধু’রাষ্ট্র ভারত। ভারতের কট্টর বিরোধী হিসাবে পরিচিত বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভির অভিযোগ ছিল, “ভারতের একতরফা সমর্থনের কারণে আরেকটি ভোটারবিহীন নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার, যা তাদের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল।”
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে কানাডার ফেডারেল কমিশনের তরফে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ তুলে ভারতের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করবে কমিশন বলে খবর। ২০১৯ ও ২০২১ সালের নির্বাচন ভারত কোনওভাবে প্রভাবিত করেছে কি না তা যাচাই করতে সরকারের পক্ষ থেকে কয়েকটি নথি জমা দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৯ জানুয়ারি থেকে কমিশন প্রাথমিকভাবে ওই নথির ভিত্তিতে শুনানি শুরু করবে। আগামী ৩ মে অন্তর্বর্তী রিপোর্ট পেশ করতে পারে কমিশন। এবং এই বছরের শেষে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া কথা রয়েছে কমিশনের। বিশ্লেষকদের মতে, কানাডার এই অভিযোগের ভিত্তিতে এখনই কোনও মন্তব্য করতে চাইছে না আমেরিকা।