চারুবাক: সিনেমার ব্যাকরণ এবং ইডিয়ম পরিচালক অরিন্দম শীল শুধু রপ্তই করেননি, সেগুলো সুচারু ভঙ্গিতে সাজিয়ে গুছিয়ে ব্যবসায়িক সিনেমার শরীরে জড়িয়ে দেওয়ার নৈপুণ্যেও বেশ সাবলীল হয়ে উঠেছেন। সিনেমার ভাষাকে ভেঙেচুরে, অতীত, বর্তমান সীমারেখা মুছে দিয়ে একটি উপভোগ্য, নাটকীয় অথচ মজাদার সিনেমার উদাহরণ দেখা গেল তাঁর নতুন ছবি “মায়াকুমারী”তে। সিনেমার ভিতর অন্য এক সিনেমা তো আছেই, রয়েছে পুরনো দিনের সঙ্গে আজকের সিনেমার টেকনিক্যাল সংঘাতের কথা এবং সেটা পেরিয়ে দুই কালকে একটা জায়গায় এনে একাকার করে দেওয়া!
পুরনো কালের পর্দায় এবং পর্দার বাইরেও জনপ্রিয় জুটি কাননকুমার ও মায়াকুমারীর প্রেম এবং এখনকার সময়ে কাননকুমারের নাতি আহির ও নতুন নায়িকা রুনির সম্পর্কের এক সরলরেখা টেনে দুই সময়ের ছবির, ছবি তৈরির পরিবেশ এবং মায়াকুমারীর হঠাৎ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে সুন্দর একটি রহস্যঘন চিত্রনাট্য লিখেছেন শুভেন্দু দাস মুন্সী। আর অরিন্দম সেই চিত্রনাট্যে ময়াকুমারী ও রুনির ব্যক্তিত্বের সমতা,সম্পর্ক – সংঘাতকে এক সুষম সিনেমার আকার দিয়েছেন। একাধিকবার দু’জন দু’জনের সঙ্গে যেনো মিলে মিশে গিয়েছেন। তাঁর এই প্রকরণ ভাবনার প্রশংসা করতেই হয়। দুটি দু’সময়ের মানুষ কীভাবে এক হয়ে ওঠে ও একাকার হয়ে যায় ক্যামেরার সামনে সেটা দেখার মতো। সময়ের প্রতি যত্নবান থেকে তিনি ছবির গানের কথা ও সুরের ব্যবহারেও নজর দিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: কবিতার মতো ছবি শ্রীজাতর ‘মানবজমিন’, দারুণ অভিনয়ে মন জয় পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ]
ছবির শুরুতেই “মধুমাসে ফুল ফোটে বাগানে কাননে…”, “প্রেমে যদি এতই কাঁটা সেই ফুল তুললি কেন….”, ”চোখের জলে সাগরের স্বাদ সাগর ভাল লাগে…”, আর ” ওলো সই বল দেখি তুই সে আমি কে…” এই চারটি গানকে পুরো ছবির প্রিলুড হিসেবে ব্যবহার চমৎকার। এবং বিক্রম ঘোষের সুরের চলনে, গায়কদের গায়কিতে চল্লিশ পঞ্চাশ দশকের আমেজ মনে পরে। চিত্রনাট্যে বারবার কানন দেবী, সুচিত্রা সেনের কথা এসেছে, কাননকুমারকে “কুমার সাহেব” নামে ডাকায় প্রমথেশ বড়ুয়া সাহেবের কথা মনে আসতেও পারে। বাংলা সিনেমার নস্ট্যালজিয়ায় ডুবে যাওয়ার একটা সুযোগ করে দিলেন অরিন্দম।
আরও ভাল লাগল ঋতুপর্ণা, আবির, অরুণিমা,ইন্দ্রাশিস,সৌরসেনী, অর্ণ, অম্বরীশদের সামগ্রিক অভিনয়। প্রত্যেকেই যে যাঁর সময় ও পরিবেশ মনে রেখে অভিনয়ে যত্নবান। প্রস্থেটিক মেকআপ নিয়ে আবির, অরুণিমা ও ঋতুপর্ণা তিনজনই যদিও একটু অস্বস্তিতে পড়েছিলেন সেটা বোঝা যাচ্ছিল, কিন্তু সেটা উতরে যায় অভিনয়ের উৎকর্ষতায়। শিল্পীদের মধ্যে আর একটি নাম রজতাভ দত্ত, যিনি হয়েছেন পুরনো দিনের গীতিকার এবং মায়াকুমারীর স্বামী শীতল। তাঁর অভিনয় অবশ্যই আলাদা ভাবে নজর কাড়ে। অরিন্দম জানিয়েছেন, বাংলা সিনেমার শতবর্ষের প্রতি এই ছবি তাঁর শ্রদ্ধার্ঘ্য! নিশ্চিত ভাবেই মায়াকুমারী বিনম্র নিবেদন!