বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে হারিয়ে গিয়েছিল উৎসবের সেই চেনা ছবি। তবে এবারে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী (Janmashtami) উৎসবের মধ্যে দিয়ে নদিয়ার মায়াপুর (Mayapur) ইসকন মন্দিরে ফিরে এল সেই পুরনো ছবি। চেনা ছন্দে ফিরছে জন্মাষ্টমী উৎসব।
করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনেও এবার জাঁকজমক করেই জন্মাষ্টমী উৎসব পালন করছে ইসকন কর্তৃপক্ষ। সম্পূর্ণ ধর্মীয় রীতি-নীতি মেনে পালিত হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের ৫ হাজার ২৪৮ তম শুভ আবির্ভাব তিথি তথা জন্মাষ্টমী উৎসব। ইতিমধ্যেই ইসকনের অতিথিশালা সম্পূর্ণ ভরে গিয়েছে। শুভ জন্মাষ্টমী উৎসব স্বচক্ষে দেখার জন্য ইতিমধ্যেই মায়াপুর ইসকন মন্দিরে ভিড় করেছেন অনেক মানুষ। এ বিষয়ে ইসকন মন্দিরের জনসংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস জানিয়েছেন, ‘করোনা পরিস্থিতি এবার অন্যান্যবারের থেকে বেশ ভাল। সেই ২০১৯ সালের দোলের পর এবার জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আবার ভক্তদের প্রসাদ বিতরণ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অনেকেই এবার জন্মাষ্টমী উৎসব উপলক্ষে এসেছেন। আমরা আবার সেই চেনা ছন্দে ফিরছি।’ এবার ঝুলনের সময় থেকেই ভক্ত ও পর্যটকদের যাতায়াত বেড়েছে। শনি, রবির পর সোমবারও ছুটি। করোনার প্রভাব কিছুটা কমায় তাই এবার জন্মাষ্টমীতে শ্রীচৈতন্যভূমি নবদ্বীপ ও মায়াপুরে ফিরেছে উৎসবের আমেজ।
[আরও পড়ুন: আপনার জীবনে কখন আসবে ভাল সময়, শ্রীকৃষ্ণের এই ৭টি সংকেতেই মেলে উত্তর]
বৈষ্ণবীয় উৎসবগুলির মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী একটি অন্যতম বড় উৎসব। প্রায় ৫ হাজার ২৪৭ বছর আগে মথুরায় কংসের কারাগারে জন্ম নিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন উপলক্ষে উৎসব ঘিরে আড়ম্বর অন্তহীন হবারই কথা। সোমবার জন্মাষ্টমী উৎসব। পরদিন নন্দউৎসব এবং ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা ভক্তিবেদান্ত শ্রীল প্রভুপাদের জন্মতিথি। পরপর দু’ দিনের দু’ টি উৎসব ঘিরে মায়াপুরে উন্মাদনা চিরকালই অন্যরকম। নবদ্বীপেও জন্মাষ্টমী ধুমধামভাবে পালিত হয়। বিভিন্ন মন্দিরে অভিষেক হয় রাধাকৃষ্ণের মিলিত স্বত্বাস্বরূপ মহাপ্রভুর। সেই ব্যতিক্রমী উৎসবে সামিল হতে বহু মানুষ এবার এসেছেন। সব মিলিয়ে নবদ্বীপ ও মায়াপুরের শতাধিক মন্দিরে করোনার আগের মেজাজ অনেকটাই ফিরেছে।
জন্মাষ্টমীতে ইসকনের অন্যতম আকর্ষণ পুষ্পবৃষ্টি। বৃষ্টির মতো রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহের ওপর ঝরতে থাকে রকমারি ফুলের পাঁপড়ি। কয়েক কুইন্ট্যাল ফুলের পাঁপড়ির নিচে ঢাকা পড়ে যায় প্রায় চার ফুট উচ্চতার রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ। রসিক গৌরাঙ্গ দাস রবিবার জানিয়েছেন, ‘এখন অবস্থা অনেকটাই ভাল। মানুষ নিয়মিত আসছেন। তবে আমরা কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রন করছি। প্রতিদিন কয়েকহাজার মানুষ এমনিতেই আসছেন। জন্মাষ্টমীর পরদিন আমাদের নিজস্ব উৎসবে অনান্যবার বিদেশ থেকে ভক্তরা আসেন। এবার তারা না আসতে পারলেও শ্রীল প্রভুপাদের ১২৫ তম জন্মজয়ন্তী উৎসবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেকেই এসেছেন। আমাদের অতিথিশালা ইতিমধ্যেই ভরে গিয়েছে। সোমবার সাড়ে় ৪টে থেকে ১টা পর্যন্ত আবার বিকেল ৪টে থেকে ৮টা পর্যন্ত মন্দির খোলা থাকবে। আবার ভক্তদের প্রসাদ বিতরণের ব্যবস্থা শুরু করা হয়েছে। সোমবার ও মঙ্গলবার যাঁরা আসবেন, তাঁরা মন্দির দর্শন করে প্রসাদ নিয়ে হয় ফিরে যাবেন, নয়তো বাইরে কোথাও থাকতে পারেন। দোলের পর এই প্রথম আবার জন্মাষ্টমীর রাতে ভক্তদের প্রসাদ বিতরণ শুরু করা হবে। করোনা পরিস্থিতির জন্য এতদিন তা বন্ধ রাখা হয়েছিল।’
[আরও পড়ুন: Janmashtami 2021: এই নিয়ম মেনে করুন গোপালের পুজো, মনোবাসনা পূর্ণ হবে অবশ্যই]
যদিও স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবেই পালন করা হবে। এই প্রসঙ্গে রসিক গৌরাঙ্গ দাস জানিয়েছেন, ‘মন্দিরে প্রবেশ করার পর স্যানিটাজেশন, মাস্ক বাধ্যতামূলক। সেই সঙ্গে দর্শনপথ থাকছে একমুখী। একদিক দিয়ে প্রবেশ করে অন্যদিক দিয়ে প্রস্থান করবেন ভক্তরা। মন্দিরের মধ্যে বসা বা দাঁড়ানোর কোন অনুমতি নেই। এছাড়া মন্দিরের বাইরে অস্থায়ী মন্ডপে থাকছে টিভি। সেখানে প্রায় ৫ হাজার মানুষ বসে বা দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠান দেখতে পারবেন। অনলাইনে অনুষ্ঠান দেখার ব্যবস্থা তো থাকছেই। বিশ্বব্যাপী দুর্বলের ওপরে চলছে সবলের অত্যাচার, সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে চলছে মনুষ্যত্বের অবসান, এই অবস্থায় মানবসমাজ বিভ্রান্ত ও কিছুটা দিশাহারা। গোটা বিশ্বে ত্রাসের জন্য ধাবমান দুষ্টগ্রহ। এমন সংকটময় মুহূর্তে ভগবান শ্রীকৃষ্ণই সকলকে রক্ষা করতে পারেন। তাই এবারের জন্মাষ্টমী উৎসবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে আমরা সেই প্রার্থনা করছি।’ নবদ্বীপের ধামেশ্বর মহাপ্রভু মন্দিরেও উৎসবের আয়োজন এবার গতবারের তুলনায় বেশি।