shono
Advertisement

Breaking News

৪৫০ বছর পুরনো রীতি! মূর্তি নয়, পটেই পূজিতা পঁচেটগড় রাজবাড়ির দুর্গা

বিজয়ায় থাকে খিচুড়ি ভোগ।
Posted: 03:22 PM Sep 25, 2022Updated: 03:22 PM Sep 25, 2022

রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: দেবী এখানে মাটির প্রতিমা নন, এই রাজবাড়িতে দশভুজা পূজিত হন পটে আঁকা চিত্রে। আগে মহালয়া থেকে পুজো শুরু হয়ে যেত। সময়ের সঙ্গে হারিয়েছে রাজ আমলের সেই জৌলুস। এখন ষষ্ঠী থেকে পুজো শুরু হয়। পুজো ঘিরে সাজো-সাজো রব পড়ে যায় পঁচেটগড় রাজবাড়ির দুর্গা দালানে।

Advertisement

ইতিহাসের পাতা ওলটালে দেখা যাবে, প্রায় ৪৫০ বছর আগে পঁচেটগড় রাজবাড়িতে শুরু হয় দুর্গাপুজো। যদিও সেই সময়কাল নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। ওড়িশার কটক জেলার আটঘর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন বাড়ির আদিপুরুষ কালুমুরারি মোহন দাস মহাপাত্র। এই দুঃসাহসিক যুবক আকবরের রাজ কর্মচারী ছিলেন। ওড়িশার রাজা মুকুন্দদেব আকবরের সঙ্গে সঙ্গবদ্ধ হয়ে উভয়ের সাধারণ শত্রু গৌড়ের রাজা গৌড়েশ্বর সুলেমন কররানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হন। সেই যুদ্ধে কালুমুরারির অসামান্য কৃতিত্ব প্রকাশ পায়।

[আরও পড়ুন: শুভেন্দু-দিলীপের ছবিতে মালা, বিজেপির ‘অপমৃত্যু’তে মহালয়ায় তর্পণ মদনের]

কথিত আছে, সেই সময় পটাশপুর পরগনায় এসে বাদশাহ প্রদত্ত নানকর ভূমি লাভ করে জমিদারি সূচনা করেন কালুমুরারি। প্রথমে কল্যাণপুরে থাকতেন। পরে পঁচেট গ্রামে খাঁড়ে বিশাল গড় নির্মাণ করেন তিনি। পরবর্তীকালে সেখান থেকে উদ্ধার হয় এক শিবলিঙ্গ। সেই শিবলিঙ্গকে কেন্দ্র করে কালুমুরারি মোহন দাস মহাপাত্র তৈরি করেন পঞ্চেশ্বর মন্দির। এখানে বেনারস থেকে আরও চারটি শিবলিঙ্গ এনে স্থাপন করা হয়। ধীরে ধীরে পঞ্চেশ্বর নামটির প্রচার হতে থাকে। সে সময় রাজবাড়িতে শক্তি সাধনা হত। সেই শক্তি সাধনা করতে গিয়ে শুরু হয় দুর্গাপুজো।

সেই রাজাও নেই আরও রাজত্বও নেই। রাজত্ব না থাকলেও রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় আজও রয়ে গিয়েছে। সেকালের প্রাচীন নিয়মকানুন মেনেই আজও পুজো হয়। প্রতিবছর ষষ্ঠীতে ঢাক, ঢোল, কাঁসর, ঘন্টা ধ্বনি সহযোগে পঁচেটগড় রাজবাড়ির প্রাচীন পুকুর থেকে দুর্গাপুজোর ঘট স্থাপন করা হয়। মূলত ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত চলে রাজবাড়ির পুজো। তবে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন এসেছে বাড়ির পূজোয়। রাজপরিবার শৈব থেকে বৈষ্ণব হয়েছে। ফলে এক অলৌকিক কারণে বন্ধ হয়ে যায় মূর্তিপুজো। জমিদার বাড়িতে শোলা ও পটে আঁকা দুর্গাপুজোর শুরু তখন থেকেই। এখনো অবশ্য শোলা বাদ পড়েছে।

[আরও পড়ুন: ঠাকুর দেখতে গেলেই বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা, মণ্ডপে মণ্ডপে মশারি টাঙানোর বার্তা দেবে পুরসভা]

বছরের অন্যান্য দিনগুলো রাজবাড়ির বর্তমান সদস্যরা বাইরে থাকলেও পুজোর কয়েকটা দিন বাড়িতেই ফিরে আসেন। পুজোর আয়োজনে রাজবাড়ির বাড়ির সদস্যদের পাশাপাশি এলাকাবাসীও সামিল হন। অষ্টমী ও নবমী দুদিন রাজবাড়িতে অঞ্জলি দিতে প্রচুর মানুষ আসেন । সপ্তমী থেকে ফল, লুচি, সুজি, বিভিন্ন সবজির ভাজা-সহ পকান্ন ভোগ দেওয়া হয় দেবীকে। নবমীতে থাকে অন্নভোগের ব্যবস্থা। দর্শনার্থীদের পাশাপাশি গ্রামের মানুষকে বিতরণ করা হয় অন্নভোগ। বিজয়ায় থাকে খিচুড়ি ভোগ।

করোনা পরিস্থিতিতে গত দু’বছর নামমাত্র পুজো হলেও এবার পুজোয় খোলা থাকবে রাজবাড়ির সিংহদরজা। পুজোর দিনগুলিতে রাতে দর্শনার্থীদের থাকার জন্য থাকছে সুব্যবস্থা। চেখে দেখার সুযোগ থাকবে রাজবাড়ির রকমারি ঐতিহাসিক পদ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement