সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: “এক অশান্ত সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে আমার দেশ৷ শুধু বাইরের শত্রুই নয়, দেশের ভিতরেও এখন প্রচুর শত্রু৷ আর সেই শত্রুদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব একা জওয়ানদের নয়, আমাদেরও৷” একথা যাঁর, সেই মানুষটির সঙ্গেই আজ পরিচয় করিয়ে দেব সংবাদ প্রতিদিনের পাঠকদের৷ না ইনি কোনও ক্রিকেট খেলোয়াড় বা অভিনেতা নন৷ তবু অনলাইনে তাঁর জনপ্রিয়তা যে কোনও আন্তর্জাতিক তারকাকেও টক্কর দেবে৷ তাঁর কাছে মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ নেয় দেশের সবচেয়ে বিপজ্জনক এলিট কমান্ডো ফোর্স৷ ২৬/১১-র পর ইনি মুম্বই পুলিশের ‘স্পেশ্যাল অ্যান্টি আর্বান টেররিস্ট ট্যাকটিক্স ইন্সট্রাকটার’৷ দেশের পদাতিক সেনা ও স্পেশ্যাল কমান্ডোদের প্রশিক্ষক শিফুজি শৌর্য ভরদ্বাজ৷ শাওলিন ফেরত শিফুজি এখন লালফৌজ বা পাক রেঞ্জার্সের কাছে ত্রাস।
ছোট্ট একটি ঘটনার কথা বললেই এঁকে চিনতে আমজনতার অসুবিধা হবে না৷ টাইগার শ্রফের ‘বাঘি’ সিনেমার অ্যাকশন সিকোয়েন্সগুলি মনে আছে? ২৬ বছরে শ্রফকে অনস্ক্রিনে ওরকম মারামারি করতে দেখে অনেকেরই গায়ের রোম খাঁড়া হয়ে গিয়েছিল৷ কিন্তু খুব কম মানুষই টাইগার শ্রফের অ্যাকশন গুরুকে চেনেন৷ শৌর্য হলেন সেই ব্যক্তি৷ সিনেমাতে টাইগারের অনস্ক্রিন গুরুর চরিত্রে দেখাও গিয়েছে তাঁকে৷ শুধু টাইগার শ্রফ নন, দেশের প্রথম সারির প্রায় সব পরিচালকের সঙ্গেই কাজ করেছেন শৌর্য৷ তিনি বলছেন, প্রাচীন ভারতে এমন সামরিক কলাকৌশল ছিল, যা এখনকার যে কোনও হলিউডি সিনেমাকেও টক্কর দিতে পারে৷ কেরলের প্রাচীন মার্শাল আর্ট কালারিপায়াত্তুতেও দক্ষ শৌর্য৷ সিনেমার সঙ্গে তাঁর যোগ কিন্তু কোনও বানিজ্যিক কারণে নয়৷ প্রায় ভুলে যাওয়া দেশের মার্শাল আর্ট ফর্মকে জনপ্রিয় করে তুলতে সিনেমাকে হাতিয়ার করেছেন তিনি৷ বন্দুক-পিস্তল নয়, শৌর্য পছন্দ করেন খালি হাতে শত্রুকে ধরাশায়ী করতে৷
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় কমান্ডো ট্রেনারদের মধ্যে একজন শৌর্য৷ ইউটিউব, ফেসবুকে শিফুজি শৌর্য ভরদ্বাজ একজন পরিচিত নাম৷ ‘মিশন প্রহার’-এর প্রচারে গোটা দেশ চষে বেড়ান৷ অন্তত ১ কোটি মহিলাকে আত্মরক্ষার বিশেষ ট্রেনিং দেওয়াই ‘মিশন প্রহার’-এর মূল লক্ষ্য৷ পাশাপাশি, দেশের যুবকদের উদ্বুদ্ধ করতে নিয়মিত ইউটিউব চ্যানেলে বক্তব্য পেশ করেন৷ ভারতীয় সেনাকে কেউ অপমান করলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন৷ দেশের যুবকরা শুধু ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে নয়, রণভূমে নেমেও বিশ্বাসঘাতকদের গুঁড়িয়ে দিতে পারে, সেই বিশ্বাস রাখেন৷ সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের সত্যতা নিয়ে যখন দেশের ভিতরেই কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন, তাঁদের থামিয়ে দেন শৌর্য৷ বলেন, “সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের খুঁটিনাটি আমি প্রকাশ্যে আনব না, কিন্তু আজ যাঁরা অভিযানের সত্যতা নিয়ে টেলিভিশন চ্যানেল আলো করে বসেন, তাঁদের জিজ্ঞেস করতে চাই- সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ও ট্যাকটিকাল ওয়ারফেয়ার-এর পার্থক্যটুকু বোঝেন? ঠান্ডা ঘরে বসে, কেন্দ্রীয় নিরাপত্তাবাহিনী পরিবেষ্টিত হয়ে জ্ঞান না দিয়ে একদিন, শুধু একদিন সিয়াচেনে দাঁড়িয়ে দেশের সীমান্ত পাহারা দিন৷”
ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে একটি আঙুল উঠলেও ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেন না সেনাবাহিনীর এই শিক্ষক৷ উরি হামলায় তাঁর জওয়ান ভাই, ছাত্ররা রক্তাক্ত হয়েছিল৷ যুদ্ধের রীতি ভেঙে ঘুমন্ত জওয়ানদের উপর হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তান৷ সেই অভিশপ্ত রাত ভুলতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন এক ইউটিউব ভিডিও-য়৷ জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের আচরণও তাঁকে ততটাই রক্তাক্ত করে৷ ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের জন্য চোখের জল ফেলাকে ‘অপরাধ’ তকমা দেন শিফুজি শৌর্য ভরদ্বাজ৷ কোনও প্রোটোকল মানেন না, রেগে গেলে মুখের ভাষার লাগাম মানে না৷ কাশ্মীরে ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠলে বলেন, “একজন ভারতীয় সেনাও কোনও মহিলার গায়ে হাত দেন না৷ তাঁদের বোন-মায়ের চোখে দেখেন৷” স্পষ্ট বলেন, কেঁদে কোনও লাভ নেই৷ কেউ দেশের নাম খারাপ বললে পাল্টা প্রতিবাদ করো৷ তার জন্য শারীরিকভাবে সক্ষম হও৷ এতটাই সক্ষম, বলশালী হও যাতে তোমার সামনে কেউ দেশের বিরুদ্ধে একটিও কথা না বলতে পারে৷
‘মিশন প্রহার’ ছাড়াও তাঁর হাত ধরেই ভারতে হয়েছে ‘মিশন প্রচণ্ড ভারত’, ‘মিশন মেরি মিট্টি’। যোগা শিরোমণি শিবশঙ্করজি ও চিনের শাওলিন টেম্পলের গ্র্যান্ড মাস্টার শি দে ইয়াং-এর কাছে শিক্ষা নিয়েছেন তিনি। এছাড়া নাগা মহালাল বাবুজি-র কাছে তিনি আধ্যাত্মিকতার পাঠ নিয়েছেন। দেশের এমন কোনও টেলিভিশন চ্যানেল নেই, যেখানে তিনি বক্তৃতা দেননি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সি-হক কমান্ডো, স্পেশাল আর্মড ফোর্স, কাউন্টার টেররিস্ট গ্রুপ, এসটিএফ ও অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াডকে প্রশিক্ষণ দেন শিফুজি। সেনাবাহিনীর ফাইটিং রেজিমেন্টের স্পেশ্যাল কমান্ডো ট্রেনার তিনি। জানা যায়, শিফুজির আসল নাম দীপক দুবে। শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনের শুরু বাড়ি থেকেই। বাবা-মায়ের ছায়ায় ক্রমশ আত্মনির্ভর হয়ে ওঠেন। তাঁর প্রথম শিক্ষাগুরু ছিলেন সেনসেই খেম বাহাদুর গুরুং (খ্যাতনামা গোর্খা ফাইটার)। এরপর কুং ফু ও মার্শাল আর্ট। আর এখন গোটা বিশ্ব থেকে ডাক পান সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য৷ তিনি নিজে অবশ্য বলছেন, “ভারতের মতো দেশ হয় না৷ যে দেশে গোর্খা রেজিমেন্টের সদস্য একজন মুসলিম সেনানায়কের অধীনে থেকে আরেকজন হিন্দুকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রাণের মায়া ত্যাগ করে উদ্ধার করে আনে৷ সেই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কেউ কটূক্তি করলে কষ্ট হবে না বলুন!”
The post শত্রুদের মাথাব্যথা বাড়াচ্ছে দেশের সবচেয়ে বিপজ্জনক কমান্ডো ট্রেনার appeared first on Sangbad Pratidin.