নন্দন দত্ত, বোলপুর: অসম প্রেমের পীঠ বীরভূমের নানুর (Nanur)। সেই ইতিহাস গোটা এলাকাজুড়ে। রামী আর চণ্ডীদাসের সেই প্রেমের গ্রামে হিন্দুর কালীপুজো আর মুসলমানের সত্যপীর যেন অসম প্রেমে বাঁধা পড়েছে। গ্রামে হিন্দুদের কালীপুজোয় (Kali Puja) সাহায্য করেন মুসলমানরা। হিন্দুর শবদেহ কাঁধে মুসলমানদের উৎসবে যোগ দেন হিন্দুরা। কালীপুজোয় মানত থেকে পীর-পীরানি, গাজি-বিবির দরগায় হত্যে দেয় দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। প্রেমের ভিত্তিভূমি নানুর বোমা-গুলি, সংঘর্ষ নিয়ে একসময় বারবার সংবাদে শিরোনামে এসেছে। সেই নানুরের বাসাপাড়ায় হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে মেলবন্ধনের চিত্রটা চমকে দেয় সবাইকে। মন্দির নির্মাণ থেকে শুরু করে কালীপুজো, ভাইফোঁটায় মেতে ওঠেন হিন্দু, মুসলিম (Hindu-Muslim) – সকলে একসঙ্গে।
বাসাপাড়ায় বহু আগে একটি সর্বজনীন কালীপুজো শুরু হয়। নানুর বাসাপাড়া সড়কের রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য মন্দিরটি (Temple) ভাঙা হয়। পরবর্তীকালে এলাকার ভরত মাঝি, বরকা হাঁসদারা জমি কিনে মন্দির নির্মাণ করার পরিকল্পনা করেন। সংখ্যালঘু প্রধান এই এলাকায় মুসলিমদের সাহায্য ছাড়া যে কালী মন্দির নির্মাণ করা সম্ভব নয়, তা জানতেন এলাকাবাসীরা। মন্দির তৈরির সময় বছর দুয়েক আগে ১২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হয়েছে এই কালী মন্দিরের। সেই কালী মন্দির নির্মাণে হিন্দু ভাইদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করেন বাসাপাড়ার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন। পুরোহিতের সঙ্গে হাত মেলায় মাদ্রাসার মৌলবী, মৌলানারা।
[আরও পড়ুন: দীপাবলির আগে দুঃসংবাদ, প্রবল তুষারঝড়ে উত্তরাখণ্ডে মৃত্যু বাংলার পর্বতারোহীর]
নানুরের বাসাপাড়া গ্রামে গিয়ে জানা গেল, এর আগে মসজিদ (Masjid) কিংবা মাদ্রাসায় অনেক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে এলাকার হিন্দুরা। আবার হিন্দু ভাইদের কালীপুজো ও ভাইফোঁটা নিতে আসে মুসলিমরা। তাই গ্রামে কালীপুজো মানে অন্য এক সম্প্রীতির অনুভূতি।
[আরও পড়ুন: আগামী বছরের ছুটির তালিকা ঘোষণা নবান্নর, আরও আনন্দ পুজো ও ভাইফোঁটায়]
ওই গ্রামেই বাস জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আবদুল করিম খানের। তিনি জানান, মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ইচ্ছায় তৈরি হয়েছে মা কালীর মিলন মন্দির। সারা রাজ্যজুড়ে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে যে বিভেদের চেষ্টা শুরু হয়েছে, কলকাতার একবালপুরে যে অসম লড়াই হয়েছে, নানুর বাসাপাড়ায় কালীপুজো ও ভাইফোঁটার আনন্দ দৃষ্টান্ত সেখানে স্থাপন করবে। নানুরে কালীমন্দিরে কালী পুজোর আয়োজনে তাই উদ্যোগী মুসলমান ভাইয়েরা। গ্রামবাসীরা জানায় ভাইফোঁটা (Bhaiphonta) দিনেও হিন্দু বোনেরা মুসলিম ভাইদের কপালে ফোঁটা দিয়ে মিষ্টিমুখ করবে। এ গ্রামে ঈশ্বর-আল্লার কাছে আশীর্বাদ চাইবেন মঙ্গল কামনায়।