রিংকি দাস ভট্টাচার্য: বহু আশঙ্কা জিইয়ে রেখে বিদায় নিল বর্ষা। পুজোর আকাশ ঢাকা পড়ল অনিশ্চয়তার মেঘে। ১০ অক্টোবর খাতায়-কলমে বর্ষা বাংলার চৌহদ্দি থেকে সরে যায়। কিন্তু সময়ের পাঁচ দিন আগে শুক্রবার অর্থাৎ ৫ অক্টোবর এ রাজ্য থেকে বিদায় নিল বর্ষা। আর এদিনই হাওয়া অফিস জানিয়ে দিল পুজোর মুখে রাজ্যের উপরে ঢুকছে নিম্নচাপের খাঁড়া। তা সত্যিই নেমে এলে অঝোর বর্ষণের মধ্যে সূচনা হবে দেবীপক্ষের।
[ইসলামপুর কাণ্ডের জের, শিক্ষকদের সব ধরনের বদলি স্থগিত করল রাজ্য]
হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, মহালয়া অর্থাৎ আগামী সোমবার বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরির বিলক্ষণ সম্ভাবনা। ৪৮ ঘণ্টা অথাৎ ১০ অক্টোবরের মধ্যে সেটি শক্তি বাড়িয়ে প্রথমে গভীর নিম্নচাপ, পরে আরও শক্তি সঞ্চয় করে সেটি ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিতে পারে। যার জেরে পুজোর আগে পণ্ড হতে পারে বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসবের প্রস্ত্ততি। শুক্রবার কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের উপ মহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এবং সংলগ্ন এলাকায় নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে সোমবার নাগাদ। যার জেরে আগামী বৃহস্পতিবার ১১ থেকে রবিবার ১৪ তারিখ পর্যন্ত কলকাতা-সহ রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। মূলত স্থানীয়ভাবে বজ্রগর্ভ মেঘ থেকেই বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। এদিকে নিম্নচাপের কথা চাউর হতেই ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে বাঙালির মন। হাওয়া অফিসও খুব একটা সুখবর দিচ্ছে না। বরং আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিচ্ছে, নিম্নচাপে ভোগান্তির বিস্তর সম্ভাবনা।
“নিম্নচাপের অভিমুখ কোন দিকে বা নিম্নচাপটি আদৌ শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে কিনা, তা বুধবারের আগে বলা যাবে না।”-জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ট্রেন্ড বলছে, বঙ্গোপসাগরে তৈরি নিম্নচাপের অভিমুখ বাংলা-ওড়িশার দিকেই হয়। এক আবহাওয়াবিদের কথায়, সাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপটির অভিমুখ ওড়িশার দিকে হলেও কলকাতা এবং উপকূলবর্তী এলাকায় তার প্রভাব পড়বে। আর ঘূর্ণিঝড়টি অভিমুখ বদল করে বাংলায় ঢুকে পড়লে ভাসবে বাঙালির শারদোৎসব।
[প্রেসিডেন্সি হস্টেল বিতর্কে হস্তক্ষেপ রাজ্যের, কর্তৃপক্ষকে বেঁধে দেওয়া হল সময়সীমা]
হাওয়া অফিস ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে মুখ খুলতে না চাইলেও দিল্লির মৌসম ভবন কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কার কথা শুনিয়ে রেখেছে। মৌসম ভবন সূত্রে খবর, নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় হলে তার নাম হবে ‘তিতলি’। নামটি দিয়ে রেখেছে পাকিস্তান। আর মৌসম ভবনের এই আশঙ্কাকে জোরদার করছে গত কয়েক বছরে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ঘটে যাওয়া কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগের তালিকা। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর বর্ষা যখন বিদায় নিচ্ছে, তখনই হঠাৎ মূর্তিমান অসুরের মতো হাজির হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় ‘ফাইলিন’। ওড়িশা তছনছ করে দিয়েছিল সেই ঘূর্ণিঝড়। তার প্রভাব পড়েছিল এ রাজ্যেও। পুজোর আনন্দ মাটি হয়ে গিয়েছিল। ‘দায়ে’র মতো ফাইলিনও ওড়িশার গোপালপুরে আছড়ে পড়ে। অতি প্রবল সেই ঘূর্ণিঝড়ের এক বছরের মাথায়, ২০১৪-র ঠিক একই সময়ে বিশাখাপত্তনম ও শ্রীকাকুলামের মাঝামাঝি জায়গায় আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় ‘হুদহুদ’। ফাইলিনের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২১৫ কিলোমিটার। আর হুদহুদ হাজির হয়েছিল ১৯৫ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়ে। তার জেরেই এই দু’বছর ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হয় ওড়িশা ও অন্ধ্র উপকূলে। এ বার তেমন কোনও বিপত্তি যে হবে না, তা হলফ করে বলতে পারছে না আলিপুরও।
[মমতার ব্রিগেডে আমন্ত্রণ সিপিএমকেও, ডাকা হচ্ছে রাহুল-সোনিয়াকে]
এদিকে পুজোর দশদিন আগে নিম্নচাপের কথা শুনে চিন্তার ভাঁজ পুজোকর্তাদের৷ থিমকে অটুট রাখতে মহানগরীর তাবড় পুজো আয়োজকরা ইতিমধ্যেই পুরো পুজো মণ্ডপ ত্রিপলে ঢেকে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তারা। তবে এগুলি সব বড় বাজেটের পুজো। পুজোর প্রায় দোরগোড়ায় এসে নিম্নচাপের খবরে কম বাজেটের পুজোগুলির কার্যত মাথায় হাত। প্রতিযোগিতার বাজারে মহালয়ার আগেই শহরের পুজোর উদ্বোধন শুরু হয়ে গিয়েছে। এদিনই মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করছেন শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ের পুজো। ছোট পুজোগুলোতে চলছে ফিনিশিং টাচ।এই পরিস্থিতিতে দেবীর কাছে উদ্যোক্তাদের একটাই প্রার্থনা, মহিষাসুরকে বধের আগে, বর্ষাসুরকে বধ করো মা!
The post পুজোর মুখেই নিম্নচাপের খাঁড়া, আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’ appeared first on Sangbad Pratidin.