শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: অভুক্ত, ক্লান্ত পরিযায়ী শ্রমিক (Migrant Labourer) দু’মুঠো খাবার চেয়েছিলেন। তাঁকে খাবার দেওয়া হল। তবে তা মানুষের খাবার মতো নয়। পথকুকুরদের জন্য তৈরি করা খাবার দেওয়া হল ওই ব্যক্তির পাতে। খিদের জ্বালায় সেই খাবারেই পেট ভরালেন তিনি। কিন্তু এই দুঃসময়ে এমন অমানবিক ঘটনা ঘিরে শোরগোল পড়েছে জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri)ধূপগুড়িতে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এহেন অবিবেচকের মতো কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আর এই ভিডিও তুলে ভাইরাল করার অভিযোগে প্রিয়াঙ্কুশ বড়ুয়া নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।
এই করোনা অতিমারীর (Corona pandemic) সময়ে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা করোনা আক্রান্ত পরিবার থেকে দুস্থ, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। তাদের সেসব উদ্যোগ নিঃসন্দেহে সাধুবাদযোগ্য। ধূপগুড়িতেও একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কাজ করছে দিনরাত এক করে। কখনও করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, পরিবারের সদস্যদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা, কখনও দরিদ্রদের সাহায্যে এগিয়ে আসা। কিন্তু মঙ্গলবার এমনই এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, পরিবেশপ্রেমী একটি সংগঠন পথকুকুরদের খাবার দেওয়ার সময় ভিনরাজ্যের এক পরিযায়ী শ্রমিককে সেই খাবারই তুলে দিচ্ছে। এমনকী সেই সংগঠনের এক সদস্যকে বলতে শোনা গিয়েছে, “কুকুরদের জন্যই খাবার এনেছিলাম। কিন্তু উনি অভুক্ত বলে খাবার চাইলেন, তাই দিয়েছি।”
[আরও পড়ুন: আগামী সপ্তাহেই আছড়ে পড়বে ‘যশ’, বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রস্তুতি শুরু জেলাগুলিতে]
এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, শহরের পরিস্থিতি কি এতটাই খারাপ যে কুকুরের খাবার মানুষকে দিতে হচ্ছে? যেখানে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন করোনা আক্রান্ত পরিবার-সহ দুস্থ ও অসহায়দের হাতে বিনামূল্যে খাবার, ওষুধপত্র তুলে দিচ্ছে, সেখানে এই ভিডিও দেখার পর সরব হয়েছেন অনেকেই। যদিও সেই পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের দাবি, পথকুকুরদের একদম টাটকা খাবার দেওয়া হয় এবং পশুদের খাওয়ানোর আগে তাঁরা নিজেরা খেয়ে দেখেন। সংগঠনের এক সদস্যের কথায়, “আমরা বাজার থেকে ফ্রেশ মাংস কিনে এনে রান্না করি। এরপর নিজেরা খেয়ে দেখি। তাছাড়া আমরা মনে করি না, কারও বাড়িতে পশুদের জন্য আলাদা করে খাবার রান্না করা হয়। লকডাউনের সময় সব দোকান বন্ধ। এই মানুষটার চোখ দিয়ে জল পড়ছিল, তাই বাধ্য হয়েই তাঁকে ওই খাবার দেওয়া হয়েছিল।”
[আরও পড়ুন: প্রথমে বোমাবাজি, তারপর গুলি, বিজেপির ‘তাণ্ডবে’ গুরুতর জখম তৃণমূল কর্মী]
গতবছর লকডাউনে ও এবছরও অনেক মানুষের পাশে দাঁড়ানো স্থানীয় বাসিন্দা তথা সমাজসেবী অসীম পাল বলেন,”এটা মেনে নেওয়া যায় না। কুকুরদের খাবারের সঙ্গে মানুষের খাবারের পার্থক্য থাকবেই। তাছাড়া ধূপগুড়ি শহরের পরিস্থিতি এতটাও খারাপ হয়নি যে পশুদের খাবার মানুষকে খেতে হবে। এখানে অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে যারা বিনামূল্যে অনেকের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। তাছাড়া পৌরসভা-সহ অনেক সহৃদয় ব্যক্তি রয়েছেন।” ধূপগুড়ির বাসিন্দা তথা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্ণধার অনিরুদ্ধ দাশগুপ্ত বলেন, “এটা দুর্ভাগ্যের। যাঁরা এটা করেছেন, হয়তো অজান্তেই করে ফেলেছেন। তবে ধূপগুড়িবাসী হিসাবে মনে হচ্ছে ধূপগুড়ির বদনাম হয়ে গেল। তাকে বলার দরকার ছিল, দশ মিনিট বসুন, আমরা খাবারের ব্যবস্থা করছি। কেননা, এটা কুকুরের খাবার।”