শাহজাদ হোসেন, ফরাক্কা: প্রবল বৃষ্টি। বন্যা। তারই মাঝে ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন মা এবং জামাইবাবু। ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন। অন্যমনস্ক হয়ে কখন যে হাতছাড়া হয়ে গেল সে, তা বুঝতেও পারেননি অভিভাবকরা। তারপর কেটে গিয়েছে ২৩ বছর। ছেলের অপেক্ষায় চোখের জলে ভাসতেন যুবকের মা। তবে রবিবার ফিরল সুদিন। মুম্বইয়ের (Mumbai) এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তৎপরতায় মায়ের কাছে ফিরলেন ছেলে।
মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) ফরাক্কা ব্লকের পলাশি রেলবাজারের বাসিন্দা প্রদীপ হালদার। ৩৭ বছর বয়সি প্রদীপ বাবা অগ্নি এবং মা আদুরি হালদারের সন্তান। একটু বড় হওয়ার পর থেকে মা বুঝতে পারেন ছেলের মানসিক বিকাশ সেভাবে হচ্ছে না। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে যায় প্রদীপ মানসিক ভারসাম্যহীন।
[আরও পড়ুন: বাঁশদ্রোণীতে বৈদ্যুতিন তার জড়ানো অবস্থায় মহিলার দেহ উদ্ধার, মৃত্যুর কারণে ধোঁয়াশা]
ছেলের অসুস্থতা বুঝতে পারার পর আর একটুও সময় নষ্ট করেননি তাঁর মা। শুরু হয় চিকিৎসা। জঙ্গিপুরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা শুরু হয় প্রদীপের। ১৯৯৮ সালে মুর্শিদাবাদে বন্যা হয়। সেই সময় জঙ্গিপুরে ছেলেকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন প্রদীপের মা। সঙ্গে ছিলেন তাঁর জামাইবাবুও। আচমকাই নিখোঁজ হয়ে যান প্রদীপ। ছেলেকে তন্নতন্ন করে খোঁজেন আদুরি। তবে খোঁজ মেলেনি। বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।
তারপর থেকে প্রতিনিয়ত ছেলেকে খুঁজতেন আদুরি। মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেটা আদৌ বেঁচে আছে তো, সে প্রশ্ন তাঁর মনকে কুড়ে কুড়ে খেত। এভাবেই এক এক করে কেটে যায় ২৩টা বছর। একসময় আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন আর বোধহয় ছেলে কোলে ফিরবে না। তবে সন্তানের পথ চেয়ে বসে থাকা মায়ের কোল আলো করে ছেলেকে ফেরাল মুম্বইয়ের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। চোদ্দ বছর বয়সে প্রদীপ যখন হারিয়ে যান তখন ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করেন। চিকিৎসার বন্দোবস্তও করা হয়। চিকিৎসাতেই সেরে ওঠেন প্রদীপ। নিজের বাড়ির ঠিকানা বলেন। বর্তমানে সম্পূর্ণ সুস্থ প্রদীপ। তেইশ বছর পর ছেলেকে ফিরে পেয়ে বেজায় খুশি তাঁর মা। আনন্দেও চোখের জল বাঁধ মানছে না তাঁরা।