গৌতম ব্রহ্ম: স্বাস্থ্য পরিষেবায় একাধিক গাফিলতি নিয়ে রুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। স্বাস্থ্যসাথী প্রত্যাখ্যান-অপব্যবহার থেকে রোগী রেফারের সমস্যা নিয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘সবকিছু আমাকে বলে দিতে হবে? নিজের কাজ নিজেকে বুঝে নিতে হবে। কোনও লবিবাজি চলবে না।’ নবান্নর বৈঠক থেকে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে কড়া হওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি। মাঝেমধ্যেই হাসপাতালে সারপ্রাইজ ভিজিট করুন, নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর।
জেলা থেকে ক্রমাগত রোগী রেফার নিয়ে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। জেলা হাসপাতালের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, “রেফার করা আপনারা কবে বন্ধ করবেন? প্রসূতিদেরও রেফার করা হচ্ছে।” প্রসববেদনা নিয়ে ৩-৪ ঘণ্টার রাস্তা পার করার জেরে বহু প্রসূতির মৃত্যু হচ্ছে বলেও দাবি মমতার। এই ‘রোগ’ সারানোর দাওয়াই হিসেবে স্বাস্থ্যসচিবকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর সাফ বার্তা, রেফার করলে রোগীর মৃত্যু হলে, যে রেফার করেছেন দায়িত্ব তাঁর। পাশাপাশি স্বাস্থ্য কমিশনের সাহায্যে রেফার নীতি তৈরির পক্ষেও সওয়াল করেন মমতা। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের জবাবে নারায়ণস্বরূপ নিগম জানান, রেফার রোগ আগের চেয়ে অনেকটাই কমেছে রাজ্য। ৮ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৪ শতাংশ। সমস্যা আরও কমাতে দ্রুত পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
[আরও পড়ুন: রবীন্দ্রভারতীর জোড়াসাঁকো ক্যাম্পাসে TMC কার্যালয় ভাঙতে হবে, নির্দেশ কলকাতা হাই কোর্টের]
শুধু রেফার রোগ নয়, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড (Swasthya Sathi) ফেরানো ও অপব্যবহার নিয়েও অসন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ফেরানো নিয়ে আগেও বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে সতর্ক করেছিলেন তিনি। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ফেরালে বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিলের কথাও বলেছিলেন তিনি। এদিনও সেকথা মনে করিয়ে দেন। এই কার্ড অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এসমস্ত সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতি মাসে জেলাশাসকদের বৈঠকে বসার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। যারা কার্ডের অপব্যবহার করছেন তাদের বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাশাপাশি, কলকাতার এনআরএস ও এসএসকেএম হাসপাতালে শিশুদের হার্টের অপারেশন চালুর পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী, যাতে শিশুসাথী কার্ডের টাকা বেসরকারি হাসপাতালে না যায়। বেশকিছু এলাকায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর কাজ বাকি রয়েছে। সেই কাজ সম্পন্ন করতে সাংসদ তহবিলের টাকা ব্যবহারের নির্দেশ দিলেন তিনি।
এদিন স্বাস্থ্যসচিবকেও গাফিলতির বিরুদ্ধে কড়া হওয়ার পরামর্শ মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর কথায়, “তুমি খুব উইক। স্ট্রং হও। প্রয়োজনে নরম আবার প্রয়োজনে কড়া হও।” মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, “মাঝে মাঝে হাসপাতালে সারপ্রাইজ ভিজিট করো। ফেয়ার প্রাইস শপে যাও। সাধারণ মানুষের লাইনে দাঁড়াও।” তবেই সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা বোঝা যাবে বলে মত মমতার। পাশাপাশি, স্বাস্থ্য পরিষেবা আরও উন্নত করতে অবিলম্বে নিয়োগের কথাও বলেন তিনি।