স্টাফ রিপোর্টার: সুকান্ত-শুভেন্দু জুটির উপর তিতিবিরক্ত দিল্লি। এক বছর পর আবার কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মিঠুন চক্রবর্তীকে বলল ‘বাংলায় তুমি সময় দাও’। আর তারপরই বঙ্গ বিজেপিকে অক্সিজেন দিতে শাহ-নাড্ডার নির্দেশে দলের রাজ্য দপ্তরে মিঠুন। একুশের নির্বাচনের আগে প্রচারে ৫৫দিন সময় দিয়েছিলেন। সোমবার বিজেপির রাজ্য দপ্তরে সাংবাদিক সম্মেলনে মিঠুন জানালেন, এবার আরও বেশিদিন সময় দেবেন। দিল্লি যেভাবে তাঁকে কাজে লাগাবে তিনি কাজ করবেন।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির (BJP) বেলুনকে যেভাবে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছিল, তা কার্যত চুপসে গিয়েছে। দলে বিদ্রোহ, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার গোটা গেরুয়া শিবির। বিধায়ক-সাংসদরা দল ছাড়ছেন। কার্যত মুষলপর্ব শুরু হয়েছে বঙ্গ বিজেপিতে। তার উপর পুরসভা থেকে শুরু করে একের পর এক উপনির্বাচনে হার। রাজ্যে দলের সংগঠন নিয়ে বারবার ভুল রিপোর্ট দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে কার্যত বিভ্রান্ত করেছেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। সংগঠনের ব্যর্থতা ঢাকতে সন্ত্রাসের অজুহাত খাড়া করে দিল্লির নেতৃত্বকে বারবার ভুল বুঝিয়েছে রাজ্য বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবির। রাজ্যে এসে দলের নেতাদের পারফরম্যান্স নিয়ে কার্যত বিরক্তি প্রকাশ করে গিয়েছেন অমিত শাহ থেকে জে পি নাড্ডাও।
[আরও পড়ুন: ‘ফুলপ্যান্ট পরে পরীক্ষা দিতে গেলে যদি পাশ না করি!’, স্রেফ আশঙ্কায় বিষ খেল ছাত্র]
সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তারপর ২০২৪-এর লোকসভা ভোট। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে দলের যা টালমাটাল অবস্থা তাতে বঙ্গ বিজেপি নেতাদের উপর চরম বিরক্ত দিল্লি। রাজ্য নেতাদের চূড়ান্ত অনাস্থা কেন্দ্রীয় নেতাদের। তাই মিঠুন চক্রবর্তীকে (Mithun Chakraborty) বাংলায় পাঠিয়ে দলকে ফের চাঙ্গা করতে চাইছেন মোদি-শাহরা। পঞ্চায়েত ভোটেও মিঠুনকে কাজে লাগাতে চায় দল। যদিও গেরুয়া শিবিরের অন্দরেই প্রশ্ন, একুশের ভোটের আগেও প্রচারে নেমেছিলেন মিঠুন। কিন্তু ‘মহাগুরু’কে হাতিয়ার করেও ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি। বাংলায় বিজেপির স্বপ্নভঙ্গ হওয়ার পর অবশ্য মিঠুন আর রাজ্যে বিজেপির কোনও কর্মসূচিতে আসেননি। যোগাযোগও রাখেননি দলের সঙ্গে।
হঠাৎ করে আবার রাজ্য বিজেপি দপ্তরে মিঠুনের আসা নিয়ে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের বক্তব্য, “মিঠুনের কোনও প্রভাব নেই। মিঠুন কোনও জায়গায় দাঁড়িয়ে লড়াই করতে পারে না। বলিউডে প্রভাব হারিয়ে উটিতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। হোটেল খুলেছিল। ওর সেসবই করা ভাল। সেই মিঠুন আর নেই। একবছর আগে পাঠিয়ে কোনও লাভ হয়নি। একবছর পরে যারা পাঠিয়েছে তারা বুঝবে। কিছু নেওয়ার জন্য যারা দল পরিবর্তন করে তারা রাজ্যের কী পরিবর্তন করবে। বাংলার মানুষ এসব পছন্দ করে না।”
বিজেপি সূত্রে অবশ্য খবর, মানিকতলা বিধানসভার উপনির্বাচনে মিঠুন চক্রবর্তীকে প্রার্থী চাইছে দলের জেলা নেতৃত্ব। মাস ছ’য়ের মধ্যেই উপনির্বাচন হবে। সাধন পাণ্ডের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক ছিল মিঠুন চক্রবর্তীর। তবুও একুশের ভোটে মানিকতলা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবের হয়ে প্রচার করেন তিনি। দিল্লির নেতৃত্ব চাইছে আগামী লোকসভা নির্বাচনে উত্তর কলকাতা আসন থেকে মিঠুনকে প্রার্থী করতে। মিঠুন অবশ্য এদিন দাবি করেন, কোনও সভাতেই তিনি প্রার্থী হবেন না। যদিও মানিকতলা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে আর কল্যাণকে প্রার্থী না করার ভাবনা রয়েছে রাজ্য বিজেপির। কল্যাণও হারের রেকর্ড গড়তে চান না। সজল ঘোষকেও মানিকতলায় প্রার্থী হতে বলা হয়েছিল। সজলও হারতে চান না। ফলে মানিকতলায় মিঠুনকে প্রার্থী করলে তাঁর মহাগুরু ইমেজ রয়েছে। তবে মিঠুন শিবিরও এখানে হারার ভয়ে ঝুঁকি নিতে চাইছে না বলে খবর। কারণ কল্যাণের হয়ে প্রচারে গিয়েই মিঠুন বুঝেছেন মানিকতলায় হার নিশ্চিত। যেহেতু পাণ্ডে পরিবারেরই কেউ দাঁড়াবে ওখানে। তাই ধুয়েমুছে বিজেপি সাফ হয়ে যাবে।
[আরও পড়ুন: মায়ের সঙ্গে সন্তানের দুর্ব্যবহার কখনওই কাম্য নয়, পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাই কোর্টের]
সোমবার রাজ্য বিজেপি দপ্তরে প্রায় দেড় ঘণ্টা সুকান্ত মজুমদার, রাহুল সিনহাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মিঠুন চক্রবর্তী। ছিলেন অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ, কল্যান চৌবে প্রমুখ। রাজ্য দপ্তরে দলের নেতা-কর্মীরা অভ্যর্থনা জানান মহাগুরুকে। দলীয় বৈঠকে মিঠুন রাজ্য নেতাদের বলেছেন, তিনি আগামী দিনে বিজেপির সঙ্গেই থাকবেন। এরপরই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বলিউডের এই অভিনেতা। একুশের ভোটে বাংলার মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করলেও মিঠুনের বক্তব্য, ৩ থেকে আসন বেড়ে ৭৭ হয়েছে। ভোট বেড়েছে। তিনি খুশি। একেবারেই বাজিমাত হয়ে যায় না। একবছর পর তিনি এলেন কেন? জবাবে বলেন, কিডনিতে পাথর হয়েছিল। অসুস্থ ছিলেন। তাঁর দাবি, “আমি রাজনীতি করি না। মানুষ নীতি করি। মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। মানুষের জন্য কিছু করতে গেলে ক্ষমতার দরকার হয়।” বিজেপির ক্যাডারদের উৎসাহ কম রয়েছে বলে স্বীকার করে তাঁর দাবি, এই উৎসাহ বাড়বে।