সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২০১৮ থেকে কর ফাঁকি দেওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে। এমনই দাবি কেন্দ্রের। সৌজন্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এক অভিনব পদক্ষেপ। প্রযুক্তির দৌলতে আগামী বছর থেকে কর ফাঁকি কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে অসাধু ব্যবসায়ীদের পক্ষে।
কিন্তু কী সেই পদক্ষেপ?
[ক্রেডিট কার্ডের বিলেও এবার কড়া নজর আয়কর বিভাগের]
কেন্দ্রের একটি সূত্র বলছে, ‘গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স’ বা জিএসটি থেকে প্রাপ্ত তথ্যকে কেন্দ্র এবার সুকৌশলে ব্যবহার করবে কর ফাঁকির প্রবণতা রুখতে। কেন্দ্র চাইছে জিএসটি থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে একটি বৃহৎ তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে। সেই তথ্য অনুযায়ী মিলিয়ে দেখা হবে কোনও সংস্থা বা তার মালিক ঠিক কত টাকা আয়ব্যয় করছেন ও ঠিকঠাক কর জমা দিচ্ছেন কি না কেন্দ্রের ঘরে। সবকিছু পরিকল্পনামাফিক চললে ২০১৮ থেকেই কর ফাঁকি কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠবে বলে দাবি কেন্দ্রের।
পণ্য ও পরিষেবা কর কাঠামোকে অনলাইনে নিয়ে আসার পিছনে কেন্দ্রের এই সুচিন্তিত পরিকল্পনাই ছিল বলে জানিয়েছেন এক শীর্ষ আমলা। এই প্রথম কেন্দ্রে জিএসটি রিটার্ন নিয়ে এত বড় কাটাছেঁড়ায় বসছে। নয়া কর কাঠামোয় ব্যবসায়িক লেনদেন লুকানো কঠিন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারও জমা দেওয়া তথ্য নিয়ে কেন্দ্র যদি কাটাছেঁড়ায় বসে, তাহলে কোনও ব্যক্তি কত টাকা কর দিয়েছেন, কত টাকা আয় করেছেন ও বিনিয়োগ করেছেন, সেই সব তথ্য লুকানো কঠিনই নয়, কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কারচুপি ধরতে কেন্দ্রের ‘ডেটা অ্যানালিস্ট’ বিশেষজ্ঞদের স্রেফ কয়েক সেকেন্ড লাগবে। এখানেই শেষ নয়, কারও চালচলন সন্দেহজনক মনে হলে তাঁর আরও গভীর তথ্য, যেমন ফোনের কল লিস্ট, সোশ্যাল মিডিয়ায় গতিবিধি, বেড়াতে যাওয়ার টিকিটের দাম, আইটি রিটার্ন ফাইল এমনকী একাধিক স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির নিরিখে তাঁর জিএসটি ফাইল মিলিয়ে দেখে নিতে পারবেন কেন্দ্রীয় আধিকারিকরা।
[তৈরি থাকুন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আপনার বাড়িতেও আয়কর হানা!]
এমনিতেই নোট বাতিলের পর ব্যাঙ্কে বিপুল টাকার পাশাপাশি প্রচুর তথ্যও জমা পড়েছে। ফলে কেন্দ্রের পক্ষে কর জমা দেওয়ায় গরমিল ধরার জন্য হাতে প্রচুর তথ্য চলে এসেছে। এমনকী অনলাইনেও কারও গতিবিধি এখন ট্র্যাক করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। ভেবে দেখুন আপনি সারাদিনে যা যা সার্চ করেন ইন্টারনেটে, সেই সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন মাঝেমধ্যেই আপনার ফোনে বা ডেস্কটপে দেখতে পান। কখনও ভেবে দেখেছেন এরকম কেন হয়? কারণ, বিভিন্ন ওয়েবসাইট আপনার অনলাইন গতিবিধির উপর নজর রাখে। একইভাবে আপনার আর্থিক লেনদেনও কেন্দ্রের নজরে রয়েছে। ‘রোবট-অডিট’ চালিয়ে প্রত্যেক করদাতার আয়ব্যয়ের হিসাব দেখে নিতে পারে কেন্দ্র। কেন্দ্রের এই অত্যন্ত গোপন প্রকল্পের নাম ‘প্রজেক্ট ইনসাইট’। কারও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে নজর দিলেই আয়কর বিভাগের অফিসাররা কত কী যে জেনে যান, সেটা আমার-আপনার ধারণারও বাইরে। এবার এই সব তথ্যকে এক জায়গায় একত্রিত করে ঝাড়াই বাছাইয়ে নামছে কেন্দ্র। কারও আয় ও খরচের মধ্যে ব্যাপক অসামঞ্জস্য ধরা পড়লেই বাড়িতে চলে আসবে নোটিস। তারপরও অভিযুক্ত সাড়া না দিলে তদন্ত এগোবে আইনি পথে।