সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ব্যাঙ্ক হোক বা রেশন, পাসপোর্ট কিংবা প্রভিডেন্ট ফান্ড, প্যান কার্ড হোক বা মাসের শেষের পেনশন–সব কিছুর জন্যই দরকার আধার কার্ড (Adhaar Card)। আধার কার্ড সংযুক্ত না হলে শিগগির দেওয়া যাবে না ভোটও। কারণ ভোটার্স কার্ডের সঙ্গেও আধার সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রের। অন্ত্যেষ্টির জন্যও আধার কার্ড দেখানো প্রয়োজন। কিন্তু ভারতের মতো দেশের আবহে আধার কার্ডের উপযোগিতা আদৌ আছে কি না বা থাকলেও তা কতটা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলল গ্লোবাল রেটিং সংস্থা মুডিজ (Moody’s)।
স্মার্ট মোবাইল ফোনের স্ক্রিন লক খুলতে যাঁরা আঙুলের ছাপ ব্যবহার করেন তাঁরা প্রায়ই একটা সমস্যায় পড়েন। হাত ভেজা থাকলে কিংবা আঙুলে কোনও ধুলোময়লা লেগে থাকলে কোনওভাবেই খুলতে চায় না আঙুলের ছাপে লক খোলা মোবাইল। কর্মক্ষেত্রে যাঁরা আঙুলের ছাপ দিয়ে উপস্থিতি জানান দেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা দেখা যায়। আসলে ভারতের মতো আর্দ্র আবহাওয়ার দেশে এই ধরনের সমস্যা খুবই স্বাভাবিক। একই সমস্যা কার্যকর আধার কার্ডের ক্ষেত্রেও। কারণ, আধারের মতো বায়োমেট্রিক ব্যবস্থায় কাজ করা পরিষেবার জন্য যেমন পরিবেশ বা আবহাওয়া অনুকূল তা ভারতে নেই। রোদে পুড়ে, ঘামে ভিজে কাজ করছেন যাঁরা, তাঁদের আধার যাচাই সম্ভব হচ্ছে না বহু সময়ই। মুডিজ মেনে নিয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডিজিটাল আইডি প্রোগ্রাম ভারতের আধার কার্ড। যেখানে প্রতিটি নাগরিকের আঙুলের ছাপ এবং চোখের মণি বা আইরিশ স্ক্যান করে সংগৃহীত রয়েছে। অথচ তার ব্যবহারের ক্ষেত্রে হচ্ছে ‘সার্ভিস ডিনায়াল’–অর্থাৎ আধার জুড়তে গিয়ে আদতে পরিষেবাই মিলছে না।
[আরও পড়ুন: ইসলামে ‘অবৈধ’ বিয়ের মামলায় ইমরান খানকে সমন ইসলামাবাদ কোর্টের]
২০২৩ সালের জুলাইয়ের শেষ দিন পর্যন্ত সারা দেশে ৭৬ কোটিরও বেশি মানুষ তাঁদের আধার কার্ডের সঙ্গে রেশন কার্ডের নম্বর সংযুক্ত করার কাজ সেরে ফেলেছেন। ২৮ কোটি মানুষ রান্নার গ্যাসের সংযোগের জন্য যুক্ত করেছেন আধার কার্ড। যদিও নিজের পরিচিতি প্রমাণ করতে গিয়ে যখন আধার কার্ডের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি আঙুলের ছাপ দিয়ে নিজের পরিচিতি প্রমাণ করতে যান তখন বিপুল সংকট তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘ প্রয়াসের জন্য পাঁচ মিনিটের কাজ গড়াচ্ছে পনেরোতে। কখনও বা আধার যাচাই না হওয়ায় মিলছে না সুবিধাটাই। বহু ক্ষেত্রেই প্রান্তিক মানুষ, বিশেষত যাঁদের নানা ভর্তুকির সুবিধা প্রয়োজন, তাঁরাই বঞ্চিত হচ্ছেন শুধুমাত্র আধার তথ্য না মেলার কারণে। পিএম কিষান যোজনার সুবিধা তাঁরাই পাচ্ছেন, যাঁরা আধার তথ্য জমা করেছেন।
ইনফোসিসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নন্দন নিলেকানি প্রথম এই আইডেন্টিটি কার্ডের বিষয়ে পরিকল্পনা করেন। যা ক্রমেই গোটা দেশের মানুষের পরিচয়পত্র হয়ে দাঁড়ায়। তবে প্রতিটি নাগরিকের প্রতিটি পরিষেবার সঙ্গে আধার সংযুক্ত করার যে সিদ্ধান্ত মোদি সরকার নিয়েছে সংকট বাড়িয়েছে সেটাই। সরকারি হোক বা বেসরকারি, সব ক্ষেত্রেই পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে এই আধার কার্ডকে। প্রান্তিক এলাকার মানুষের সমস্ত সুবিধা দিতেই এমন করা হচ্ছে বলে সরকারের তরফে দাবি করা হলেও বহু সময়েই তাতে সুবিধার থেকে অসুবিধা বেড়েছে বই কমেনি।
একই কথা প্রতিধ্বনিত হয়েছে মুডিজের গলাতেও। কারণ কেন্দ্রের বিজেপি সরকার প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রেই আধার কার্ডকে সংযুক্ত করার পথে হেঁটেছে। অন্যদিকে, সব জায়গায় আধার কার্ড পরিচয়পত্র হিসাবে দেখানোর কারণে বহু ক্ষেত্রেই আধার কার্ডের তথ্য পৌঁছে যাচ্ছে অবাঞ্ছিত হাতে, যেখান থেকে হচ্ছে বিপুল জালিয়াতিও। আবার, প্রতি দশ বছরে আধার নবীকরণের জন্য যে নির্দেশিকা দায়ের হয়েছে তাতেও চলছে জালিয়াতি। গণবণ্টন ব্যবস্থা থেকে জন্ম হোক বা মৃত্যু- আধার জুড়েছে জীবনের সঙ্গে। কিন্তু তাতে কার্যত আঁধারই নামছে আম আদমির জীবনে।
যদিও এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরে পালটা দিয়েছে কেন্দ্র। ইলেকট্রনিকস ও ইনফরমেশন মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে ভরসাযোগ্য ডিজিটাল পরিচয়পত্র হল আধার কার্ড। সেই সঙ্গে মুডিজের রিপোর্টকেও নস্যাৎ করে দিয়েছে কেন্দ্র।