সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দশমীর বিসর্জনের সময় উত্তরবঙ্গের মাল (Mal River) নদীতে হড়পা বানের বিপদ থেকে অনেককে বাঁচিয়ে তুলেছিলেন স্থানীয় যুবকরা। বিপর্যয়ের রেশ কাটতে তাঁরাই হয়ে উঠেছিলেন আসল ‘হিরো’। অন্যের প্রাণ বাঁচানো সেই ৭-৮ জন যুবককে চাকরিও দিয়েছে রাজ্য সরকার। তার সপ্তাহ তিনেক পর গুজরাটের (Gujarat) মোরবিতে কেবল ব্রিজ ভেঙে পড়ার ঘটনাতেও এমনই ‘মসিহা’ হয়ে এসেছিলেন ১০ থেকে ১২ জন যুবক। উদ্ধারে এগিয়ে এসেছিলেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরাও। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ার সেতু থেকে মাচ্ছু নদীতে পড়ে যাওয়া মানুষজন উদ্ধার করতে তাঁরাই প্রথম ঝাঁপিয়ে পড়েন। অনেকেরই প্রাণরক্ষা হয়। কিন্তু তারপরও আক্ষেপ মিটছে না পঙ্কজ, অজয়, রমেশদের। কারণ, যাঁদের প্রাণরক্ষা করতে পেরেছেন, তার চেয়ে ঢের বেশি মানুষের প্রাণ চলে গিয়েছে যে। এখনও পর্যন্ত ১৪১ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। এখনও নদীতে ডুবুরি নামিয়ে চলছে তল্লাশি অভিযান।
রবিবার সন্ধে প্রায় ৭টা নাগাদই বিপদের আঁচ পেয়েছিলেন মাচ্ছু নদীর তীরবর্তী স্থানীয় বাসিন্দারা। সেসময় তাঁরা কাজ করছিলেন। আচমকাই ভেসে আসে আর্তনাদ। কিছু বোঝার আগেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে নদীর উপর প্রায় আড়াইশো মিটারের কেবল ব্রিজটি। ১০ থেকে ১২ জন যুবকের ওই দলটি বুঝেই গিয়েছিল, বড় বিপর্যয় ঠেকানোর সাধ্য নেই তাঁদের। তবু জলে ঝাঁপিয়ে পড়েন। লক্ষ্য ছিল, তলিয়ে যাওয়া থেকে যদি কাউকে বাঁচানো যায়। লক্ষ্যে অনেকটাই সফল হন তাঁরা। অনেককেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। নাহলে মৃত্যুমিছিল যে কোথায় থামত, কেউ জানে না।
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অ-মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব, বড় পদক্ষেপ কেন্দ্রের]
বছর চব্বিশের পঙ্কজ কুমারের কথায়, “আমি বাড়ির কাছে বসে গল্প করছিলাম। এক বন্ধু এসে জানাল, ব্রিজে অনেক লোক উঠে গিয়েছে। পরিস্থিতি ঠিক সুবিধার মনে হচ্ছে না। ঠিক তারপরই আমরা জনতার সমবেত চিৎকার শুনতে পেলাম।” আরেক উদ্ধারকারী বত্রিশ বছরের অজয় বলছেন, “আমি ও আমার ১০ জন বন্ধু খবরটা পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে নদীতে ঝাঁপ দিই। যাঁরা তলিয়ে যাচ্ছিল, তাঁদের টেনে তুলি। সবাই মিলে হয়ত ৩০ জনের প্রাণ বাঁচাতে পেরেছি। কিন্তু অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও বাচ্চাদের বাঁচাতে পারিনি। পুলিশ তো এসেছে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর। ততক্ষণ আমরাই সব করছিলাম।” অজয় কিন্তু ভিনরাজ্যের বাসিন্দা। তিনি বেনারস থেকে গুজরাটে গিয়েছিলেন নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে।
[আরও পড়ুন: ‘কঠিন সময়ে ভারতের পাশেই রয়েছে আমেরিকা’, মোরবি দুর্ঘটনায় মোদিকে বার্তা বাইডেনের]
মোরবির আরেক বাসিন্দা রমেশ জিলারিয়ার বারবার আক্ষেপ করছেন, দড়ি ও অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েও নিজের বন্ধু, নিজের ভাইজির প্রাণরক্ষা করতে পারেননি। মৎস্যজীবী সুলেমানের কথায়, “নদীটা ২০ মিটার গভীর। কেউ কেউ ব্রিজ থেকে পড়েই তলিয়ে গিয়েছেন।” বিশ্বের সেতু দুর্ঘটনার ইতিহাসে ইতিমধ্যেই ঢুকে পড়েছে মোরবি (Morbi Bridge Collapse)। এই ক্ষত সম্ভবত কোনওদিনই ভুলতে পারবেন না ভুক্তভোগীরা। আর যাঁরা অন্যের প্রাণ বাঁচালেন, তাঁদেরও মনে শান্তি নেই।