নন্দন দত্ত, সিউড়ি: ‘মাওবাদীদের মধ্যে আরও বেশি গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, খেয়োখেয়ি। তাই পিছিয়ে এসেছি তাদের পথ থেকে।’ শনিবার ময়ূরেশ্বর থানার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পরে এমনই স্বীকারোক্তি দিলেন প্রাক্তন মাওবাদী নেতা (Ex Maoist leader) বাবুল ওরফে বাপন সূত্রধর। বীরভূমের (Birbhum) বেলিয়া গ্রামের পুকুরপাড়া এলাকায় তাঁর বাড়ি ঘিরে রেখে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর কাছে 7MM একটি পিস্তল ও পাঁচ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। রবিবার তাকে রামপুরহাট আদালতে তোলা হলে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
বাবুল ওরফে বাপনের গ্রেপ্তারি নিয়ে গ্রামে এখন আলোচনা তুঙ্গে। এলাকার তৃণমূলের (TMC) বুথ সভাপতি অরুণ গড়াই দাবি করেন, ”বাপন তো ভালোই ছিল। আমাদের দলের হয়ে কাজ করত। তাঁর যেন সঠিক বিচার হয়, আমরা তা দেখব।” অন্যদিকে বাপনের স্ত্রী মুনমুন সূত্রধর জানান, স্বামী কাঠের কাজ জানত। সেই কাজ করত, চাষবাস করত। তবে ঘরে আগ্নেয়াস্ত্র রাখত কিনা তাঁর জানা নেই। বাবলু বলছেন, ”আমি তো বাড়িতে অস্ত্র রাখি না। ওটা পুলিশ গুঁজে দিয়েছে।” তবে তিনি যে মাওবাদী সংগঠনে যুক্ত ছিলেন তা স্বীকার করেছেন। তাঁর বক্তব্য, সে দলে আরও বেশি লড়াই। ক্ষমতার লড়াই।
[আরও পড়ুন: চোখ রাঙাচ্ছে JN.1, সাড়ে ৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ দেশে একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা]
তৃণমূল নেতা অরুণ গড়াই জানান, বামফ্রন্ট আমলে বাপনের বোনকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। নেতাদের কাছে ঘুরে ঘুরে তার বিচার পাননি। তখনই বিপথে চলে যান বাপন। গণসংগঠন করতে করতে যে মাওবাদীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন। ফের ধরা পড়ার পর তা জানিয়েছেন বাবলু। তবে মাওবাদী হলেও বোনের উপর সেই অত্যাচারের বদলা নিতে তিনি পারেননি। আজ আর বদলা নিতে ইচ্ছেও করে না। তাঁর দাবি, তিনি প্রতিহিংসার পথ থেকে সরে এসেছেন। ২০০৮ সালে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যান। আট বছর জেলবন্দি থাকার পরে ২০১৬ সালে ছাড়া পান। জেলে গিয়ে তাঁর উপলব্ধি হয়েছে, সশস্ত্র বিপ্লবের পথ আসল পথ নয়। বরং নিজেকে শুধরে নিয়ে কিছুটা বেকায়দাতেই পড়েছেন। তাঁর উপলদ্ধি, ”অন্যকে শাস্তি দিতে গিয়ে নিজেই শাস্তি পাচ্ছি আমি। তাই সমাজের মূল ধারায় ফিরতে চেয়েছি।”
[আরও পড়ুন: বছর শেষেও বিপাকে হেমন্ত সোরেন, ফের ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীকে তলব ইডির]
মুনমুন সূত্রধর জানান, স্বামীর সঙ্গে গত একবছর তিনি দূরত্ব বজায় রেখে চলেছেন। তবে তা মাওবাদী কার্যকলাপের জন্য নয়। তাঁর দাবি, পারিবারিক ঝগড়াই দূরত্বের কারণ। স্বামীর থেকে দূরে থাকলেও স্বামীকে গ্রেপ্তার করা যে ঠিক হয়নি, গ্রামবাসীদের মতো দাবি করেন মুনমুনও। বুথ সভাপতি অরুন গড়াইও বলেন, ”ছেলেটা একদম বদলে গিয়েছিল।” বাপনের বিরুদ্ধে থাকা বেশ কিছু মামলায় ক্রমাগত হাজিরা না দেওয়ায় ফের তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বের হয়। তার জেরে এই গ্রেপ্তারি।
উল্লেখ্য, পাশের জেলা মুর্শিদাবাদের (Murshidabad)নওদায় বাবলুর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা আছে। এছাড়া, খুন, খুনের ষড়যন্ত্র-সহ একাধিক অভিযোগ আছে। তবে বাবুলের মতে, মানুষের উপর যে বিশ্বাস হারিয়েছিল, তা তিনি ফিরে পেয়েছেন। তাঁর বিশ্বাস, মিথ্যা অভিযোগে তাঁর গ্রেপ্তারের একদিন বিচার হবে। নিজের একমাত্র ছেলের নাম রেখেছেন ‘বন্ধন’। যা তাকে বেঁধে রাখবে। সমাজের সঙ্গে এক বন্ধনে রাখবে।