অংশুপ্রতিম পাল, খড়গপুর: স্তন্যপান করছিল দু’বছরের মেয়েটি। আর সেই সময় প্রেমিকের সঙ্গে ফোনালাপে মত্ত ছিল মা। অভ্যেসমতো মায়ের স্তনবৃন্ত কামড়ে ফেলেছিল শিশুটি। বাধা পড়েছিল মায়ের প্রেমালাপে। আর সেই ‘দোষে’ কোলের সন্তানকে বালিশ চাপা দিয়ে মারল মা। খুন করেই ক্ষান্ত থাকেনি বরং গল্প বানিয়ে নিজের দোষ ঢাকতেও চেয়েছিল সে। তবে শেষরক্ষা হল না। পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার এই ঘটনায় অভিযুক্ত মহিলা ও তার প্রেমিককে আটক করল পুলিশ।
শনিবার দুপুরে পিংলা থানার বাখনাবাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তরবাড় গ্রামে দু’বছরের শিশুকন্যার মৃত্যু হয়। তার মা পুজা প্রতিবেশীদের জানায়, দুপুর বেলায় বাড়ির উঠোনে লেপ রোদে দিয়েছিল। সেই লেপের মধ্যেই খেলছিল শিশুটি। পুজা রান্না করছিল। পরে এসে দেখে, মেয়ে লেপের মধ্যে আপাদমস্তক জড়িয়ে রয়েছে। লক্ষ্য করে, বুক ওঠানামা করছে না। নাকের কাছে হাত দিয়ে দেখে শ্বাসপ্রশ্বাস পড়ছে না শিশুটির। যদিও এই ‘গল্প’ বিশ্বাস করেনি পুলিশ। প্রতিবেশীরাও সন্দিহান ছিল। পুজার উপর চাপ তৈরি করে প্রতিবেশীরা। এরপরই বদলে যায় বয়ান।
[আরও পড়ুন: সৌদি আরবে নিষিদ্ধ বিতর্কিত তবলিগি জামাত, চিহ্নিত হল ‘সন্ত্রাসবাদের আখড়া’ হিসেবে]
পুজা জানায়, স্তন্যপান করার সময় তার বৃন্তে কামড়ে দিয়েছিল শিশুটি। যন্ত্রনায় ক্রোধে শিশুটিকে বালিশ চাপা দিয়ে দেয় সে। তার দাবি, সে বুঝতে পারেনি এর জেরে
মেয়ে মারা যাবে। যদিও এই তত্ত্ব মানতে রাজি নয় পুলিশ। প্রশ্ন ওঠে, শিশু হঠাৎই স্তনবৃন্তে কামড় দিলে অনেক মা যন্ত্রণা, ক্রোধ সামলাতে না পেরে শিশুকে চড়-থাপ্পড় মারতে পারে। সেটা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। কিন্তু বালিশ চাপা দিয়ে মারবে কেন? এরপরই কেঁচো খুড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়ে। উঠে আসে প্রতিবেশী দেবাশিস মণ্ডলের নাম। জানা যায়, পুজার স্বামী দেবাশিস জানা কর্মসূত্রে আন্দামানে থাকেন। স্বামীর অনুপস্থিতিতে প্রতিবেশী দেবাশিস সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে ওই বধূ। সেই প্রেমে বাধা পড়ায় সন্তানকে হত্যা করেছে পুজা।
গৃহবধূর বোন জানিয়েছেন, পুজার সঙ্গে দেবাশিসের প্রেমের সম্পর্ক ছিল, এটা খোদ পুজাই তাকে জানিয়েছিল। দেবাশিসের সঙ্গে কথা বলার জন্য নিজের গয়না বিক্রি করে ফোনও কিনেছিল ওই বধূ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর তিনেক আগে বিয়ে হয় পুজার। দীপ্তি তাঁদের একমাত্র সন্তান। শ্বশুর-শাশুড়ি থাকলেও ঘটনার সময় তাঁরা বাড়িতে ছিলেন না। শ্বশুর কাজে গিয়েছিলেন। শাশুড়ি ছাগল চড়াতে গিয়েছিলেন।
[আরও পড়ুন: ফাঁকা গাড়িতে একা শুয়ে লাস্যময়ী যুবতী, তল্লাশি করতেই মিলল লক্ষ-লক্ষ টাকার জালনোট]
প্রতিবেশীরা পরে দেবাশিস মন্ডলকে ধরে আনে। দুজনকেই মারধর করা হয়। পরে পুলিশ এসে দুজনকেই আটক করে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খড়গপুর) রানা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন পিংলায় শিশুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় মা ও এক যুবককে আটক করে জেরা করা হচ্ছে।