সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একের পর এক নেতার বিদ্রোহে জেরবার বঙ্গ বিজেপি (BJP)। এবার আচমকা ‘বিদ্রোহের সুর বারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংয়ের (MP Arjun Singh) গলাতেও! পাটশিল্পের দুরবস্থা প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সাংসদ। এমনকী, এই শিল্পের হাল ফেরাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সঙ্গে আন্দোলনে নামতে আপত্তি নেই সাংসদের। স্বাভাবিকভাবেই অর্জুন সিংয়ের এহেন মন্তব্যে বাড়ছে বিতর্ক।
কেন্দ্রীয় সরকার পাটের দামের উদ্ধসীমা বেঁধে দেওয়ার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছেন অর্জুন। কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলকে চিঠি লিখে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি করেছিলেন। কিন্তু গোয়েল তাতে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেননি। তারপর থেকেই গোয়েলের বিরুদ্ধে একপ্রকার খড়্গহস্ত নিয়েই মাঠে নেমে পড়েছেন তিনি। অর্জুনের অভিযোগের তীরের সামনে গোয়েল থাকলেও আসলে তিনি কেন্দ্রের মোদি সরকারের দিকেই নিশানা করেছেন তা সোমবার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
ঠিক কী বলেছেন অর্জুন সিং? বারাকপুরের সাংসদের কথায়, “আমি পাটশিল্প এলাকায় জন্মেছি। এই শিল্পে কাজ করেছি। কিন্তু যখন চোখের সামনে চটকল শিল্পকে ধ্বংস হয়ে যেতে দেখে একজন মন্ত্রী চুপ করে থাকে, তাহলে কিছু বলার থাকে না।” নিজেকে সরকার অংশ এবং বিজেপি সাংসদ হিসেবে উল্লেখ করে আরও বলেন, “ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বলে আসছি আপনার জন্য এই শিল্প ধ্বংস হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও তিনি কিছু বলছেন না। উলটে জবাব দিচ্ছেন, ধ্বংস হলেই বা কী!” এর পরই রাস্তায় নামার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
[আরও পড়ুন: জামিন পাওয়ার পরই ফের গ্রেপ্তার জিগনেশ মেবানি, কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা]
হুঁশিয়ারির সুরে অর্জুন বলেন, “কেন্দ্র সরকার এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ না করলে রাস্তায় নামতে হবে। সবক’টি ট্রেড ইউনিয়নকে নিয়ে আন্দোলন করতে হবে। এনিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাকলে, সেখানও যাব। এটা নিয়ে লড়াইয়ের দরকার আছে।” আচমকাই অর্জুনের গলায় কেন্দ্র বিরোধিতার সুর যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল।
এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, “বাংলার স্বার্থে কাজ হচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবে মোহভঙ্গ তো হবেই।” উলটো দিকে বিদ্রোহ সামাল দিতে বিজেপির বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সাফাই, বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্র ভাবনাচিন্তা করছে। রাজ্যের পাটশিল্পের কথা কেন্দ্রকে ভাবতে হবে। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলছেন, “কেন্দ্রের কোনও নীতি পছন্দ না হলে সমালোচনা করতেই পারে। কিন্তু আন্দোলনে নেমে কী লাভ! তার চেয়ে যারা বিষয়টি সমাধান করতে পারবে, তাদের সঙ্গে বৈঠক দরকার।”
অর্জুন বেসুরো হতেই প্রমাদ গুণছেন রাজ্য বিজেপি নেতারা। এমনিতেই গোষ্ঠী কোন্দল নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে প্রতিনিয়ত জবাবদিহি করতে হচ্ছে রাজ্য বিজেপির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীকে। এরপর দলীয় সাংসদের বিদ্রোহ তাদেরকে আরও বিপাকে ফেলে দিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ সাবধানী মন্তব্য করেছেন ঠিকই কিন্তু তাতে বিপদ কমবে বলে মনে হয় না।
[আরও পড়ুন: ‘ভারত টেকনোলজিক্যাল পাওয়ার হাউস’, মোদির সঙ্গে বৈঠকে নতুন সম্পর্কের সূচনা EU প্রেসিডেন্টের]
পাটচাষি ও পাট শ্রমিকদের সমস্যাকে সামনে রেখে অর্জুন কেন্দ্র সরকারের নীতির বিরুদ্ধে সরব হলেও এই সমস্যার বীজ আরও গভীরে নিহিত বলেই বিজেপি সূত্রের খবর। রাজ্য বিজেপি ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর কর্মকান্ডে একেবারেই সন্তুষ্ট নন ব্যারাকপুরের সাংসদ। সঙ্গে রাজ্য যেভাবে বিজেপি প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে তাতে নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়েও অর্জুন চিন্তিত বলেই দাবি করেছেন রাজ্য বিজেপির এক নেতা। তার কথায়, রাজ্য বিজেপির যা অবস্থা তাতে কোনো নেতাই কাজ করতে পারছেন না। এভাবে চলতে থাকলে তো ভোটে জেতা মুস্কিল।