সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কে বলে রাঁচির পর শুধু চেন্নাইয়ের সঙ্গেই আত্মিক যোগ মহেন্দ্র সিং ধোনির? তাঁর রেকর্ডের রোশনাইয়ে উজ্জ্বল দেশের আনাচ-কানাচ। এদেশের সব স্টেডিয়াম তাঁর কোনও না কোনও ঐশ্বরিক ইনিংসের স্মৃতিতে তৃপ্ত। ব্যতিক্রমী নয় বিশাখাপত্তনমও। ধোনির সঙ্গে ভাইজ্যাগের রোম্যান্টিকতা তো ২২ গজের ইতিহাসের এক আলোকময় অধ্যায়। রবিবাসরীয় সন্ধেয় দিল্লির বিরুদ্ধে ধোনির (MS Dhoni) ইনিংস দেখে সেই নস্ট্যালজিয়াতেই ডুব দিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
সালটা ছিল ২০০৫। ভারতের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে এসেছে পাকিস্তান। এই ভাইজ্যাগ স্টেডিয়ামেই তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামলেন লম্বা চুলের তরুণ ধোনি। হাঁকালেন ১৫টি বাউন্ডারি এবং ৪টি ছক্কা। ১২৩ বলে ১৪৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে বিধ্বস্ত করলেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের। মাঝে কেটে গিয়েছে প্রায় দুটো দশক। গঙ্গা-যমুনা দিয়ে গড়িয়ে গিয়েছে বহু জল। অবসর নিয়ে বহু ক্রিকেটার বদলে ফেলেছেন নিজেদের পেশা। কালের নিয়মে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে বহু খেলোয়াড়ের নাম। কিন্তু ধোনি রয়েছেন ধোনিতেই। ১৯ বছর পরের এক ৩১ মার্চে দর্শকদের যেন টাইম মেশিনে বসিয়ে পৌঁছে দিলেন সেই আগের ভাইজ্যাগে। যেখানে আরও একবার ব্যাট হাতে নামলেন লম্বা চুলের ধোনি।
[আরও পড়ুন: জলপাইগুড়িতে মৃতদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ মমতার, মুছিয়ে দিলেন চোখের জল]
এখন তিনি বিয়াল্লিশের তরুণ। বলে না দিলে বোঝার কোনও উপায় নেই। সেই ফিটনেস। সেই জয়ের খিদে। সেই চিলের মতো ছোঁ মেরে ক্যাচ ধরার অভ্যেস। কোনও কিছুতেই যে 'চল্লিশে চালশে'র ছাপ নেই। হাতে ব্যাট নিলেও সেই সমান তীক্ষ্ণ, বিধ্বংসী রূপ। বোলারদের অসহায় করে সেই একই স্টাইলে একহাতে ছক্কা হাঁকাচ্ছেন। ফিনিশারের যে তকমা প্রায় দেড় দশক আগে গায়ে চাপিয়েছিলেন, তা এখনও বোঝা হয়ে ওঠেনি। বরং তাতে আরও বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন যেন। তাই জাদেজার সঙ্গে গল্প করতে করতেই ৪টে বাউন্ডারি আর ৩টে ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ১৬ বলে অপরাজিত ৩৭ রানের ইনিংস উপহার দিতে পারেন দর্শকদের।
কোনও এক ঐশ্বরিক শক্তিতে যেন সময়কে আটকে দিয়েছেন তিনি। আশপাশের আলো-হাওয়া-পরিবেশ-পরিস্থিতি, মুখগুলো বদলে গেলেও একা দাঁড়িয়ে অমলিন, অপরিবর্তিত ধোনি। আজও এভাবে তাঁকে দেখে বিস্মিত হন অনুরাগীরা? না, হন না। কারণ তিনি তো ধোনি। তিনি সব পারেন। তাঁর পক্ষে কিছুই অসম্ভব নয়। এ শব্দ তাঁর অভিধানে স্থান পায়নি কখনও। তাই তো আজও তিনি ভক্তদের বলে দেওয়ার সুযোগ করে দেন, "মাহি মার রহা হ্যায়।" প্রথম উইকেটকিপার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ৩০০টি আউট করার নজির গড়তে পারেন।
[আরও পড়ুন: ভোটের ময়দানে জোটবদ্ধ INDIA, নির্বাচন কমিশনের কাছে ৫ দফা দাবি বিরোধীদের]
ম্যাচের কী ফল হল কী যায় আসে? ম্যাচ আসবে-যাবে। কেউ হারবে, কেউ জিতবে। কিন্তু মনের মণিকোঠায় চিরতরে থেকে যাবে এই বিস্ময়কর স্মৃতিগুলি। যা ধোনির দান। 'ক্রিকেট ঈশ্বর' বলে হয়তো তাঁকে সম্বোধন করা হবে না কখনও। তবে রক্ত-মাংসের এহেন অবতারকেই বা কুর্নিশ জানাতে কার্পণ্য কোথায়? তিনি যে হেরেও হৃদয়ের ২২ গজ জিতে নিতে জানেন।