shono
Advertisement

হিংসুটে বা মুখরা নয়, এক অন্য শাশুড়ি-বউয়ের গল্প দেখাল ‘মুখার্জিদার বউ’

দেখতে যাওয়ার আগে জেনে নিন কেমন হল ছবিটি? The post হিংসুটে বা মুখরা নয়, এক অন্য শাশুড়ি-বউয়ের গল্প দেখাল ‘মুখার্জিদার বউ’ appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 03:24 PM Mar 08, 2019Updated: 03:24 PM Mar 08, 2019

শম্পালী মৌলিক: এতদিনে সকলেই জেনে গিয়েছেন শাশুড়ি-বউমার গল্প নিয়ে ছবি ‘মুখার্জিদার বউ’। আসছে নারী দিবসে। টেলিভিশন খুললেই তো শাশুড়ি-বউমার কূটকচালির কাহিনি। তাহলে এই ছবি কেন হলে গিয়ে দেখতে যাবে দর্শক? আদতে শাশুড়ির-বউয়ের ওই চেনা গল্পের ভিন্ন দিক দেখাতে এসেছে এই ছবি। নবাগত পরিচালক পৃথা চক্রবর্তীকে এ জন্য কৃতিত্ব দিতে হয়। প্রশংসা প্রাপ্য কাহিনিকার সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়েরও।

Advertisement

আর বোঝাই যায় ‘উইন্ডোজ’ থেকে আসা এই ছবির নেপথ্যে নন্দিতা-শিবপ্রসাদের অবদান কতখানি। একটা সিনেমা হয়তো রাতারাতি সমাজ বদলাতে পারে না কিন্তু সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির দিকে আঙুল তুলতে পারে। পারে দর্শকের মনোভাবকে অন্যদিকে চালিত করতে, ঠিক সেটাই করার ক্ষমতা রাখে ‘মুখার্জিদার বউ’। সাধারণ গল্প হয়েও অসাধারণ।

টেলিভিশনে দেখা মা-বউ-শাশুড়ির চরিত্রগুলোর সঙ্গে প্রায়ই আমরা রিলেট করতে পারি না। কিন্তু আসক্তের মতো দেখতে থাকি। এই ছবির শাশুড়ি-বউয়ের (অনসূয়া-কনীনিকা) সঙ্গে কিন্তু আমরা রিলেট করতে পারি ছবিটা দেখতে দেখতে। কারণ তাদের সম্পর্কের তিক্ততা, রাগ-অভিমান, আনন্দ, যন্ত্রণাগুলো আমাদের মতোই। খুব ছোট ছোট দৈনন্দিন সাংসারিক ঘটনার সিঁড়ি বেয়ে ছবি একটু একটু করে ক্লাইম্যাক্সের দিকে এগিয়েছে। আর প্রত্যেকটা ঘটনায় প্রাণ সঞ্চার করেছে অভিনেতাদের রক্তমাংস ছোঁয়া অভিনয়। অনসূয়া এবং কনীনিকাকে তো মলাটচরিত্রে কেউ সেভাবে ভাবেননি, তাঁরা কিন্তু প্রমাণ করে দিলেন সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে জানেন। এই ছবিতে অনসূয়া মাস্টারস্ট্রোক দেখিয়েছেন। কনীনিকা ‘হামি’-তে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন, এ ছবিতেও দুর্দান্ত।

পঙ্কজ-বীরেন্দ্র বনাম হেমন্ত-উত্তম, ‘মহালয়া’য় উঠে এল অনেক অজানা ইতিহাস ]

ছবির কাহিনি কেমন? শ্বশুরের পারলৌকিক ক্রিয়ার দিনটা দিয়ে ছবি শুরু। একটি-দু’টি দৃশ্যেই বোঝা যায় মুখার্জিবাড়িতে শাশুড়ি-বউমার সম্পর্কে চড়াই-উতরাই আছে আর পাঁচটা বাড়ির মতোই। আবার নিয়মভঙ্গে বিধবা শাশুড়ির পাতে মাছ দিতে বলে বউমা-ই, প্রতিবেশীর বাঁকা চোখ অগ্রাহ্য করে। গল্প এগোতে বুঝি স্বামীর মৃত্যুর পর বৃদ্ধা বড় একা। ছেলে খোকনকে (বিশ্বনাথ) পুরোপুরি বউয়ের কবজায় ছেড়ে দিতে পারে না। বাঙাল বউয়ের রান্নার খুঁত ধরে সে ক্রমাগত। বাইরে থেকে বউমা বাড়ি ফিরে দেখে শাশুড়ি আলমারি হাতড়াচ্ছে। কিংবা গুরুজির ছবি টাঙানো নিয়ে দু’জনের মধ্যে লেগে যায় কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ। রুচির এতই তফাত যে, একসময় টিভি আলাদা হয়ে যায় দু’জনের। একজন সিরিয়ালে আসক্ত, অন্যজন নয়। অতএব বউমা নিজের টাকায় নতুন টিভি আনে। ব্যস, এ যেন সংসার পৃথক হয়ে যাওয়ার মতো। ছেলে বলে, আমাদের বাড়িতে একটার জায়গায় দুটো কিছু আসেনি কখনও। বউ যেন অপরাধী এক্ষেত্রে। অথচ শাশুড়ির শরীর খারাপ হলে, রাতে ভয় করলে বউমাই পাশে গিয়ে শোয়। একসময় অশান্তি চরমে পৌঁছয়। দুই নারীর যুদ্ধে ছোট্ট মেয়ে ‘ইচ্ছে’র মাথা ফেটে যায়।

এরপর কী হয়? এইখানে আসে অনুঘটকের মতো আরাত্রিকার (ঋতুপর্ণা) চরিত্রটি। মধ্যবিত্ত বাঙালি আজও সাইকায়াট্রিস্টের কাছে যাওয়াকে মনে করে পাগলের ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া। এ ছবির মা-ছেলেও তার ব্যতিক্রম নয়। অন্যদিকে বউমা খুঁজছে তার হারিয়ে যাওয়া আইডেনটিটি। দেখা যায় দুই নারীই ‘মুখার্জিদার বউ’ মাত্র হয়ে রয়ে গিয়েছে। নেই তাদের নিজস্ব পরিচয়। এইখানে শাশুড়ি-বউমা এক। যে শাশুড়িমা (অনসূয়া) তার শাশুড়ির কাছে বাসি রুটি পেয়েছিল, সে-ই বউমাকে (কনীনিকা) দিয়েছে মাছের সবচেয়ে ছোট্ট পিসটা। যে শাশুড়ি দাদাদের সঙ্গে ব্যাঙাচি ধরতে যেতে পারেনি, সে-ই বউমার চাকরির চিঠি গোপন করেছে। পাছে সংসার ভেঙে যায় বউমা বারমুখো হলে। নিজের অবচেতনেই সমাজ তাকে শিখিয়েছে নিজের সমস্ত না পাওয়া আরও এক নারীর থেকে উসুল করে নিতে। এই হিংসার পরম্পরা থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলে ‘মুখার্জিদার বউ’। বলে, বন্ধু চল। কীভাবে? সেটা হলে গিয়ে দেখাই ভাল।

‘পারমিতার একদিন’ কালজয়ী সিনেমা। সে ছবির মতো না হলেও ছোট ছোট ভাললাগা মুহূর্ত দিয়ে গাঁথা ‘মুখার্জিদার বউ’। ছাদের ওপরে কনীনিকার চুল বেঁধে দেওয়ার মুহূর্তে অনসূয়া অসাধারণ। বা যখন নিজের মনটা খুলে মেলে ধরছেন। আর অদিতি (কনী) এক সাধারণ গৃহবধূ। সারাদিন ঘর সামলাচ্ছে। সকালে রান্না, শাশুড়ির ভ্রুকুটি, মেয়েকে স্কুলে পৌঁছনো, বরের দেখভাল, বাচ্চার পড়াশোনা সবই একা হাতে। এহেন অদিতির চরিত্রে কনীনিকা একশোয় একশো।

রুক্ষ বাস্তবের প্রতিচ্ছবি, ঘাত-প্রতিঘাতে দীর্ণ ‘সোনচিড়িয়া’-য় অভিনয় বড় প্রাপ্তি ]

বলতেই হবে অপরাজিতা আঢ্যর কথা। ছোট্ট রোল। প্রতিবেশীর চরিত্রে তিনি যতটুকু সুযোগ পেয়েছেন অনবদ্য। গৃহকর্মনিপুণা অসুখী বধূর ঘর ছাড়ার মুহূর্তে তিনি অসাধারণ। কী অভিব্যক্তি! কনী আর তাঁর একটি দৃশ্য মনে থেকে যাবে বহুদিন। যেখানে অদিতি পুতুলকে সাহস দেয় বাড়ি ছাড়ার জন্য, নিজে রোজগার করার জন্য। আরাত্রিকার চরিত্রে ঋতুপর্ণার স্নিগ্ধ উপস্থিতি বড় ভাল লাগে। তবে এই চরিত্রটির নির্মাণে পরিচালক আরও যত্ন নিলে বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পেত। বিশ্বনাথ চমৎকার খোকনের চরিত্রে। স্বল্প উপস্থিতিতে বাদশা মৈত্রও মানানসই। মন কাড়ে ছোট্ট আদলীনা ‘ইচ্ছে’র চরিত্রে। তবে ছবিটা আরও একটু ছোট হতে পারত। আর চিত্রনাট্য কিছুটা গতিময় হলে মন্দ হত না। ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তর মিউজিক ভাল। ইমন, শোভন, ঈশান, নিখিতার গান শুনতে চমৎকার। ক্যামেরায় সুপ্রিয় দত্তর কাজ যথাযথ। একটি দৃশ্যের কথা না উল্লেখ করলেই নয়, যেখানে খোকন স্ত্রীকে বলে, তার টাকায় সংসার চলে। অতএব সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তার। অর্থাৎ কি না অর্থবলই শেষ কথা। স্ত্রী তাকে মনে করিয়ে দেয়, হ্যাঁ, টাকা তার। আর সংসার গড়ার, ধরে রাখার নেপথ্যের পরিশ্রমটা তার। খোকন চুপ করে যায়। অর্থাৎ আর্থিক জোর উপার্জন করতে পারলে মেয়েদেরও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা জন্মায়। মনে মনে এই ভয়টা কিন্তু আসলে পুরুষতন্ত্রের। তাই শাশুড়িও বউমার চাকরির সম্ভাবনা বিলুপ্ত করেছিল পরম যত্নে। যাতে সারাটা জীবন কারও বউ, কারও মা হয়েই কেটে যায়। স্বতন্ত্র পরিচয় না তৈরি হয়। ছবির একদম শেষে আর ‘মুখার্জিদার বউ’ নয়, শোভারানি আর অদিতির নাম স্পষ্ট করে উচ্চারিত হয়। কীভাবে, দেখতে হবে।

The post হিংসুটে বা মুখরা নয়, এক অন্য শাশুড়ি-বউয়ের গল্প দেখাল ‘মুখার্জিদার বউ’ appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement