সুমিত বিশ্বাস: পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় বিশেষ করে পুরুলিয়ায় আমন ধানের চাষের পর বিঘার পর বিঘা জমি খালি পড়ে থাকে। অথচ পশ্চিমাঞ্চলের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম ও মেদিনীপুর জেলাগুলিতে আমন ধানের চাষের পর ডালশস্য বা তৈলবীজের চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ওই সময় এই চাষ করে এলাকার কৃষকরা মোটা টাকা মুনাফা করতে পারবেন। এই চাষকে ঘিরে গ্রামীণ অর্থনীতিও চাঙ্গা হবে। এর ফলে বছরের বেশ কয়েকটা মাস চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত থেকে কৃষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার বদল ঘটতে পারে।
[টিআরএফএ প্রকল্পে ডালের উৎপাদন বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ মেটেলি কৃষি বিভাগের]
এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এ রাজ্যে আমন ধানের চাষের পর প্রায় ১১ লক্ষ হেক্টর জমি অনাবাদী অবস্থায় পড়ে থাকে। তার মধ্যে পুরুলিয়ায় আমন চাষের পর পড়ে থাকা জমির পরিমাণ প্রায় ১ লক্ষ হেক্টর। খাদ্য, শক্তি, কর্মবিনিয়োগ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তৈলবীজ চাষের গুরুত্ব অপরিসীম। রাজ্য সরকারের কৃষি দপ্তরও চাইছে এই চাষের এলাকা বাড়ুক। তাই এই চাষের পদ্ধতি ও প্রযুক্তি নিয়ে বর্তমানে ঢালাও প্রচার চালাচ্ছে। কৃষকদের উৎসাহও দেওয়া হচ্ছে।
[জৈব সারে সতেজ শসা চাষে কৃষকদের উৎসাহ দিতে উদ্যোগ কৃষি দপ্তরের]
পুরুলিয়ায় গ্রামীণ বিকাশ ট্রাস্ট ডাল চাষের ক্ষেত্র বাড়াতে কৃষকদের সচেতন করতে নানাভাবে প্রচার করছে। গত দু’বছরে তারা প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে ডালশস্য ও তৈলবীজ চাষ করেছে। তৈরি করেছে একাধিক প্রদর্শনী ক্ষেত্রও। মানবাজার-১, হুড়া ও আড়শা এলাকায় এই কাজ নিরলসভাবে তারা করে চলেছে। আগামী দিনে মানবাজার-১ ব্লকে তারা ৮১০ হেক্টর তৈলবীজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। কৃষি অর্থনীতিতে দানা শস্যের পরই বলা যায় তৈলবীজের স্থান। শরীরের প্রয়োজনীয় ফ্যাট এই তেল থেকে পাওয়া যায়। এই রাজ্যে প্রায় ন’ধরনের তৈলবীজের চাষ করা যায়। সরিষা, তিল, বাদাম, সূর্যমুখী, সয়াবিন, নাইজার, তিসি ও রেড়ি। তার মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে সরষে, বাদাম, তিল ও সূর্যমুখী চাষ সম্ভব।
[মাটির বদলে পাইপে চাষ, ভিন্ন ধারার কৃষি পদ্ধতিতে মিলছে সাফল্য]
সরষে: মূলত তিন প্রকার সরষের চাষ হয়। টোরি, শ্বেতসরিষা ও রাই। টোরি চাষের ক্ষেত্রে উন্নত জাতগুলি হল অগ্রনী (বি—৫৪), পাঞ্চালী। এই চাষের ক্ষেত্রে বেলে দোআঁশ বা দোআঁশ মাটি প্রয়োজন। যেসব জমি জল নিকাশের সুবিধাযুক্ত সেখানে এই চাষ ভালভাবে করা সম্ভব। আশ্বিন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে কার্তিকের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বীজ বোনা যায়। একর প্রতি আড়াই থেকে তিন কেজি বীজ প্রয়োজন হয়। আর শ্বেত সরিষাতে উন্নত জাত হল বিনয় (বি—৯), সুবিনয় ও ঝুমকা। টোরি চাষের মতো বেলে দোআঁশ বা দোআঁশ মাটি এই চাষের ক্ষেত্রে সহায়ক। তবে শ্বেত সরিষার বীজ কার্তিক মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে বুনে ফেলা উচিত। রাই-র উন্নত জাত হল সীতা (বি—৮৫), বরুনা, সরমা ও ভাগীরথী। এই চাষও দোআঁশ মাটিতে সম্ভব। কার্তিকের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে বীজ রোপন করা উচিত। শ্বেত ও রাই সরষেতেও টোরির মতোই একর প্রতি আড়াই থেকে তিন কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
[বিকল্প হিসাবে পাঙ্গাস মাছ চাষে গুরুত্ব হলদিয়ার মৎস্যচাষীদের]
সূর্যমুখী: সব ধরনের মাটিতে সূর্যমুখী চাষ করা সম্ভব। তবে জল নিকাশি ব্যবস্থা থাকা দরকার। মাটির পিএইচ ৬-৬.৫ হলে ভাল। তবে সূর্যমুখী লবণাক্ত মাটিতেও ভাল হয়। জনপ্রিয় হাইব্রিড জাতগুলি হল পিএসি-৩৬ ও সূর্য-৫১। একর প্রতি দু’কেজি বা বিঘা প্রতি ৬৫০ গ্রাম হাইব্রিড বীজের প্রয়োজন।
[বাজার ছেয়ে গিয়েছে ‘নকল’ কই মাছে, লোক ঠকাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা]
তিল: উন্নত জাত হল তিলোত্তমা, কৃষ্ণা ও রমা। জল নিকাশের সুবিধাযুক্ত, দোআঁশ মাটি প্রয়োজন। একর প্রতি আড়াই থেকে তিন কেজি বীজের প্রয়োজন।
[বাঙালির স্বাদের আহ্লাদ মেটাচ্ছে আদিসপ্তগ্রামের পাঁচ শতকের পুরনো মাছের মেলা]
চিনাবাদাম: এই চাষে উন্নত জাত হল জেএল-২৪ ও জে-১৮। দোআঁশ মাটি এই চাষের ক্ষেত্রে উপযুক্ত। এই চাষে খোসা ছাড়ানো বাদাম একর প্রতি ২৫ থেকে ৩৫ কেজি লাগবে। এমএইচ-২ উন্নত জাতটির জন্য ৫০ কেজি খোসা ছাড়ানো বাদামের প্রয়োজন।
The post ধান জমিতে রাঢ় বঙ্গে ডাল ও তৈলবীজ চাষের বিপুল সম্ভাবনা appeared first on Sangbad Pratidin.