সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: দুদিনের সফরে আজ রাজ্যে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি একাধিক সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধনও করবেন তিনি। আজ, শুক্রবার আরামবাগে ও কাল, শনিবার কৃষ্ণনগরে রাজনৈতিক জনসভা করবেন। আর এই জনসভার মধ্যে দিয়েই বাংলায় লোকসভা ভোটের প্রচারও যে মোদি শুরু করে দেবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে প্রধানমন্ত্রীর এই দু’দিনের বঙ্গ সফর ও দু’টি জনসভা রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। লোকসভা ভোটের দামামা বাজিয়ে আরামবাগ ও কৃষ্ণনগরের সভা থেকে মোদি কি বার্তা দেন সেদিকে নজর রয়েছে সকলের। পাশাপাশি বিজেপির ইন্ধনে জিইয়ে রাখা সন্দেশখালি ইস্যু নিয়েও প্রধানমন্ত্রী মুখ খুলবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
আরামবাগ ও কৃষ্ণনগরেই জনসভার পাশাপাশি অন্য প্রশাসনিক মঞ্চ থেকে একাধিক সরকারি প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। শুধু তাই নয়, দু’দিনের রাজ্য সফরে এসে এই প্রথম কলকাতায় থাকছেন মোদি। আজ রাজভবনে রাত্রিবাস করবেন। রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠকও রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। রাজভবনে দেখা করতে পারে রাজ্য বিজেপির এক প্রতিনিধিদলও। এর আগে এবার বেলুড়মঠে রাত্রিবাস করেছিলেন। আজ দুপুর ২টো ৫০ মিনিটে ঝাড়খণ্ড থেকে হেলিকপ্টারে আরামবাগে আসবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধনের পর আরামবাগেরই কালীপুর মাঠে জনসভাস্থলে যাবেন। আরামবাগে জনসভা শেষ করে বিকেল সওয়া পাঁচটায় কলকাতায় পৌঁছবেন তিনি। এরপর রাজভবনে রাত্রিবাস। তার পর শনিবার সকালে রাজভবন থেকে রওনা হয়ে ১০টা ২০ মিনিটে কৃষ্ণনগর পৌঁছবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেও একাধিক সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস রয়েছে। তার পর কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজ ময়দানে জনসভা করবেন। সভা শেষ করে দুপুর ১২টা ১০মিনিটে কৃষ্ণনগর থেকে পানাগড় এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওনা হবেন। সেখান থেকে দুপুর পৌনে দু’টোর সময়ে বিহারের উদ্দেশে রওনা হয়ে যাবেন তিনি।
[আরও পড়ুন: সাদা জুতো পায়ে, শাহজাহান যায়! আদালতে রাজকীয় মেজাজে প্রবেশ সন্দেশখালির ‘বাদশা’র]
চলতি বঙ্গ সফরে এসে পশ্চিমবঙ্গের জন্য ২২ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যার মধ্যে আরামবাগে রয়েছে রেলওয়ে, পোর্ট, অয়েল পাইপ লাইন, জ্বালানি সরবরাহ এবং জল প্রকল্প। কৃষ্ণনগরে বিদ্যুৎ, রেল এবং রাস্তা সংক্রান্ত একাধিক প্রকল্প রয়েছে যেগুলির শিলান্যাস ও উদ্বোধন করবেন তিনি। এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর সভা আরামবাগ ও কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে হলেও, লোক ভরাতে বাইরের জেলা এবং অন্যান্য লোকসভা কেন্দ্র থেকে দলের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আসতে হচ্ছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জমায়েতের যে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন তাতে কার্যত মাথায় হাত পড়েছে জেলা নেতাদের। কৃষ্ণনগরের মাঠে খুব বেশি হলে ৮০ হাজার লোক ধরবে। কিন্তু সেটা ভরানো নিয়ে স্থানীয় জেলার নেতারা সন্দিহান। তাই মুর্শিদাবাদের পাঁচটি লোকসভা কেন্দ্র থেকেও লোক আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আগামিকাল ১১টায় সভা কৃষ্ণনগরে। ফলে লোক আনা আরও মুশকিল। তাই বাইরে থেকে গাড়িতে, বাসে করে লোক আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বহরমপুর, জঙ্গিপুর থেকেও লোক আনতে হচ্ছে যাতে কোনওভাবে মুখ না পোড়ে দলের। এছাড়া, জমায়েতের টার্গেট বেশি রাখার পাশাপাশি খুব একটা বড় মাঠ কোথাও নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে, আজ আরামবাগের সভায় পূর্ব বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়া থেকে লোক আনা হচ্ছে। নিরাপত্তার বেষ্টনীতে মুড়ে ফেলা হয়েছে কালীপুর-সহ গোটা আরামবাগ। এসপিজির দখলে চলে গিয়েছে মাঠের নিরাপত্তা। এদিন বিজেপি নেতারাও আরামবাগ ও কৃষ্ণনগরের মাঠ পরিদর্শন করেছেন। এদিকে, আগামী ৬ মার্চ বারাসতে জনসভা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। মহিলাদের নিয়ে বারাসতে সভা হবে। মূলত সন্দেশখালি ইস্যুকে সামনে রেখে বারাসতের সভা। সেখানে সন্দেশখালি থেকে কিছু মহিলাদের নিয়ে এসে তাদের অভিযোগের কথা প্রধানমন্ত্রীকে শোনানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বিজেপি। বারাসতে সভা ৬ তারিখ হলেও, তার আগের দিন অর্থাৎ, ৫ মার্চই কলকাতায় চলে আসবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওইদিন রাতেও কলকাতায় থাকবেন তিনি। ফলে মার্চের প্রথম সপ্তাহেই তিনদিন বাংলায় মোদির কর্মসূচি রীতিমতো তাৎপর্যপূর্ণ। একইসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা ভোটের বাদ্যি বাজিয়ে দেবেন মোদি। আর রাজনৈতিক অংকের বিচারে আরামবাগ ও কৃষ্ণনগর লোকসভা আসন দু’টিকে এবার পজেটিভ দেখছে বিজেপি নেতারা। তাই ভোট প্রচারে প্রথম এই দু’টি লোকসভা কেন্দ্রকেই বেছে নিয়েছেন মোদি।