সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাশিয়ায় (Russia) ক্রমেই জটিল হচ্ছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি। দুর্নীতি, দমননীতি-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে ক্ষোভ। এহেন পরিস্থিতিতে রুশ বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনির মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ দেখান হাজার হাজার মানুষ।
[আরও পড়ুন: নেপালে তীব্র হচ্ছে ওলি বিরোধী বিক্ষোভ, নেতৃত্বে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ড]
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, শনিবার রাজধানী মস্কোর পুশকিনস্কয়া স্কোয়ারে প্রায় ৪ হাজার মানুষ জড়ো হয়ে নাভালনির মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদ দেখান। একইভাবে গোটা দেশে, এমনকী সাইবেরিয়ার প্রত্যন্ত প্রান্তেও সরকার বিরোধী সমাবেশে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ। রুশ পুলিশ সূত্রে খবর, প্রশাসনের অনুমতি না নিয়েই সমাবেশ করা হয়েছে। বাধা দিতে গেলে পুলিশকর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন প্রতিবাদীরা। এই ঘটনায় ৩৯ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। ২ হাজার ৬০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন অ্যালেক্সেই নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনিও।
প্রায় পাঁচ মাস পর জানুয়ারি মাসের ১৭ তারিখ জার্মানি থেকে মস্কো ফিরেছেন নাভালনি। তারপরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাশিয়ার কারা কর্তৃপক্ষ আগেই জানিয়েছিল, ২০১৪ সালের আর্থিক দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি মামলায দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল নাভালনিকে। তবে আদালত তিন বছর জেলের সাজা দিলেও কারাগারে দিন কাটাতে হয়নি তাঁকে। কারণ, দোষী সাব্যস্ত হলেও নাভালনির সাজা মকুব (‘সাসপেন্ডেড সেন্টেন্স’) করে দেওয়া হয়। কিন্তু শর্ত মোতাবেক তাঁকে থানায় বা সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের কাছে সময়ে সময়ে হাজির দিতে হয়। কিন্তু আদালতের বেঁধে দেওয়া শর্ত মানছেন না নভালনি। তাই দেশে ফিরলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে। শুধু তাই নয়, কয়েকদিন আগে ফের একটি দুর্নীতি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। আপাতত আদালতের নির্দেশে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলে থাকতে হবে নাভালনিকে।
উল্লেখ্য, ২০২০-এর ২০ আগস্ট সাইবেরিয়ার টমস্ক থেকে বিমানে মস্কো ফিরছিলেন নাভালনি (Alexei Navalny)। মাঝ আকাশে আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। উপায় না দেখে ওমস্ক শহরে বিমানের জরুরি অবতরণ করিয়ে শুরু হয় চিকিৎসা। নাভালনি ঘনিষ্ঠরা দাবি করেন, টমস্ক বিমানবন্দরে তাঁর চায়ে বিষ মেশানো হয়েছে। চিকিৎসকরা জানান, নাভালনির স্নায়ুতন্ত্র ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছিল। তারপর কোমায় আচ্ছন্ন হয়ে যান তিনি। সেটা বিষের প্রভাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছিল। এরপর নাভালনির শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকায় জার্মানির বার্লিনে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা পরীক্ষানিরীক্ষার পর বিষ প্রয়োগের ব্যাপারটি নিশ্চিত করেন। তারপর সুইডেন ও ফ্রান্সের গবেষণাগারও সাফ জানায়, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর বিরোধী নাভালনির উপর সোভিয়েত জমানার ভয়াবহ নার্ভ এজেন্ট নভিচক প্রয়োগ করা হয়েছিল।