shono
Advertisement

Neeraj-এর হাত ধরে অ্যাথলেটিক্সে প্রথম সোনা, নিজের স্বপ্ন সত্যি হওয়া দেখা হল না মিলখার

নীরজের সোনা যেন মিলখা-ঊষাদের অধরা স্বপ্নের উত্তরাধিকার।
Posted: 07:19 PM Aug 07, 2021Updated: 08:07 PM Aug 07, 2021

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শূন্যে উড়তে উড়তে নেমে আসা জ্যাভলিনটা যখন মাটিতে গেঁথে গেল, স্কোর দেখে সকলেই আশায় বুক বেঁধেছিলেন। ৮৭.৫৮ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছিল সেই জ্যাভলিন। প্রথম থ্রোয়ে ৮৭.০৯ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করার পর দ্বিতীয় থ্রোয়ে নিজেকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন নীরজ চোপড়া (Neeraj Chopra)। তখন থেকেই শুরু হয়েছিল বুক দুরুদুরু অপেক্ষা। হবে কি এবার? যত সময় এগিয়েছে তত যেন পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে ইতিহাস কেবল সময়ের অপেক্ষা। তবু এক অবিশ্বাসের দোলাচলে ছিল দেশ। মনে পড়ছিল একের পর এক নাম। মিলখা সিং (Milkha Singh), পিটি ঊষা (PT Usha)- কিংবদন্তি ভারতীয় অ্যাথলিটরাও যে অলিম্পিকে সোনা জেতেননি! নর্ম্যান প্রিচার্ড জিতেছিলেন। দু’টি রুপো। কিন্তু তিনি যে ব্রিটিশ ভারতীয়।

Advertisement

শেষ পর্যন্ত স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। নতুন ইতিহাস গড়েছেন নীরজ। তাঁর বর্শার ফলায় শেষ পর্যন্ত সোনা ছুঁয়েছে দেশ। ব্যক্তিগত ইভেন্টে দ্বিতীয়। আর অ্যাথলিট হিসেবে প্রথম সোনা। টোকিও অলিম্পিক (Tokyo Olympic) নানা কারণেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সবথেকে বেশি পদক জিতে নিজেদের সর্বকালের সেরা পারফরম্যান্স করেছে ভারত। আর সেই সাফল্যের চুড়োয় চেরি ফলের আভা নীরজের স্বর্ণপদক। নিজের স্বর্ণপদক মিলখাকেই উৎসর্গ করে গেলেন তিনি। সেই সঙ্গে তাঁদেরও, যাঁরা দেশের হয়ে পদকজয় থেকে সামান্য দূরেই থমকে গিয়েছিলেন।

[আরও পড়ুন: Tokyo Olympics: ‘মোটা বাচ্চা’ থেকে সোনার ছেলে, সহজ ছিল না নীরজের লড়াই]

ইতিহাস বিজয়ীদের মনে রাখে। কিন্তু তা বলে যাঁরা একটুর জন্য পারেননি? তাঁরাও যে গোটা দেশের কাছে এক মস্ত প্রেরণা হয়ে থেকেছেন। দেশের হয়ে কোনও অ্যাথলিট সোনা জিতবেন, এই স্বপ্ন চোখে নিয়েই তাঁরা অবসরের জীবনে ফিরেছেন। কিছুদিন আগেই প্রয়াত হওয়া দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা অ্যাথলিট ‘উড়ন্ত শিখ’ মিলখা সিং জানিয়েছিলেন, মারা যাওয়ার আগে দেখে যেতে চান নতুন ইতিহাস। ১৯৬০ সালের রোম অলিম্পিকে ফোটো ফিনিশে চতুর্থ হওয়ায় অধরা থেকে গিয়েছিল পদক। ১/১০ সেকেন্ডের জন্য আসেনি সাফল্য। সারা জীবনে অসংখ্য সাফল্য মিলখার মুকুটে জুড়েছে। কিন্তু অলিম্পিকে পদক জেতা হয়নি। তাই তাঁর স্বপ্ন ছিল একটাই। যা তিনি পারেননি সেটা করে দেখাক অন্য কোনও ভারতীয়। মিলখা নেই। শনিবাসরীয় বিকেলে বহু ভারতীয়র মন তাই সাফল্যের আনন্দেও সামান্য ভারাক্রান্ত। প্রবীণ মিলখা যদি আজ থাকতেন?

১৯৮৪ সালের লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকে মিলখাকেও কার্যত টপকে গিয়েছিলেন পিটি ঊষা। ১/১০০ সেকেন্ডের জন্য তিনি পদক পাননি। কেবল তিনি নয়, মনখারাপে ভুগেছিল গোটা দেশ। ঊষার দুর্দম প্রতিভা যে দেশকে সোনা এনে দেবে সেব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন সকলে। কিন্তু হয়নি। কিংবদন্তি হয়েও ইতিহাস ছোঁয়া হয়নি তাঁরও।

[আরও পড়ুন: Tokyo Olympics: একটুর জন্য অধরা ইতিহাস, চতুর্থ স্থানে শেষ করে পদক হাতছাড়া অদিতির]

২০১৬ সালের রিও ডি জেনেইরো অলিম্পিকে দীপা কর্মকারকে ঘিরেও স্বপ্নের পারদ ছিল তুঙ্গে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ০.১৫০ পয়েন্টের জন্য ব্রোঞ্জ মিস। এরও ১২ বছর আগে ২০০৪ এথেন্স অলিম্পিকে কেরিয়ারের সেরা ৬.৮৩ মিটার লাফিয়েও পঞ্চম স্থানেই থামতে হয়েছিল অঞ্জু ববি জর্জকে। অথচ মাত্র একটি কিডনি নিয়ে তাঁর লড়াই গোটা দেশকে উদ্বুদ্ধ করে আজও। তবু সোনালি কেরিয়ারে অলিম্পিকে পদকশূন্য থাকাটা নিশ্চয়ই একটা কাঁটার মতো থেকে গিয়েছে। আর তাই তিনিও মনে মনে নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখেছেন, তিনি না পারলেও কেউ পারুক।

নীরজ পেরেছেন। কিন্তু আসলে ‘সোনার ছেলে’র এই সাফল্য় যেন এক ধারাবাহিক স্বপ্নের উত্তরাধিকার। কোনও ভারতীয় অ্যাথলিটের পোডিয়ামে ওঠার স্বপ্ন। দশকের পর দশক পেরিয়েও সেই স্বপ্ন অধরা থেকে গিয়েছিল। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে অবশেষে মুঠোয় ধরা দিল সেই স্বপ্নিল মুহূর্ত। মিলখা, ঊষাদের সাফল্যকে সঙ্গে নিয়েই নয়া খতিয়ান লিখলেন নীরজ চোপড়া। তাই এই সাফল্য তাঁর হয়েও প্রকৃত প্রস্তাবে যেন স্বপ্নের এক যৌথ খামার। 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement