সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কারণ যদি হয় নদী রাজনীতি, তবে তার সবচেয়ে প্রভাবশালী ফলাফল অবশ্যই বন্যা৷ চলতি বর্ষার মরশুমে উত্তরবঙ্গ ভাসছে, অসমে বন্যা৷ প্লাবিত হিমালয়ের পাদদেশের নেপালও৷ আর এই নেপালই অভিযোগ তুলছে, তারা পুরোপুরি নদী রাজনীতির শিকার৷ নইলে অমন পাহাড়ি এলাকায় জল জমে বন্যা হওয়ার কথা নয়৷
[আরও পড়ুন: বর্ণবিদ্বেষী টুইটে বিবাদে জড়ালেন ট্রাম্প, সমালোচনার ঝড় মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে]
আসলে রাজনীতি এবং আগ্রাসন বরাবার হাত ধরাধরি থাকে৷ উন্নয়নের স্বার্থে প্রকৃতি নিয়ে রাজনীতি করতেও কসুর করেন না রাষ্ট্রনেতারা৷ প্রতিবেশী কয়েকটি দেশ – ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, চিন সকলের মধ্যে নানারকম রাজনৈতিক টানাপোড়েনের পাশাপাশি সম্প্রতি নদীর জলও একটি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ সীমান্ত এলাকাগুলিতে নদীর জলবণ্টন নিয়ে কখনওই ভারত-বাংলাদেশ-নেপাল-চিনের সম্পর্ক সুবিধের নয়৷ ঠিক এই জায়গায় এসেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কগুলিতে তিক্ততার ছোঁয়া লাগে৷ বিশেষত বর্ষার মরশুমে৷ চলতি বছর নেপালের বন্যা যেন সেই তিক্ততাকে আরও উসকে দিল৷
নেপালের অবস্থান হিমালয়ের একেবারে পাদদেশে৷ হিমালয়ই বেশিরভাগ নদীগুলির উৎস৷ নদীর চরিত্র অনুযায়ী, পাহাড় থেকে সমতলে নেমে আসে৷ নেপাল পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় সেখানে বৃষ্টির জল বা নদীর জল কোনওটাই জমে থাকার সুযোগ নেই৷ তাই প্লাবনেরও আশঙ্কা থাকার কথা নয়৷ অথচ এবছর নেপালে বন্যা৷ কারণ কী? নেপাল সরকারের অভিযোগ, ভারত সীমান্তের বহু জায়গায় নদীর গতি রুখতে বাঁধ দেওয়া হয়েছে৷ ফলে জল জমে যাচ্ছে নেপালের দিকে৷ বর্ষার মরশুমে বৃষ্টির সঙ্গে নদীর জল মিলিত হয়ে জলস্তর বাড়ছে, প্লাবন দেখা দিচ্ছে৷ অর্থাৎ ভারতের বাঁধ নেপালে বন্যার জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী বলে অভিযোগ৷ একই অভিযোগ আবার ভারতের তরফেও ওঠে৷
[আরও পড়ুন: তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে বালাকোট আতঙ্ক, এখনও নিরাপত্তায় গলদ খুঁজছে পাকিস্তান]
১৯৫৪ এবং ১৯৫৯ সালে কোশী এবং গণ্ডক নদীতে বাঁধ নির্মাণ নিয়ে ভারত-নেপালের চুক্তি হয়েছে৷ তবে তা নিয়ে বিতর্ক আছে৷ নেপালের অভিযোগ, চুক্তি বাস্তবায়নের পর দেখা গিয়েছে, এই বাঁধ নির্মাণে নেপাল সীমান্তের মানুষজনের কোনও সুবিধা হয়নি৷ পুরোটাই ভারতের লাভ৷ উলটোদিকে, ভারতও অভিযোগ তোলে, বর্ষার মরশুমে কোশী নদীর লকগেটগুলি খুলে দেয় নেপাল৷ তাতে ভেসে যায় বিহার৷ তাই কোশীর কপালে ‘বিহারের দুঃখ’ অপবাদও জুটেছে৷ কিন্তু শুধুই কি কোশী, গণ্ডকের বাঁধ নেপালে বন্যার কারণ? পরিবেশবিদরা অন্য কথা বলছেন৷ তাঁদের কথায়, নেপাল পাহাড়ি অঞ্চল বলে গর্ব করলেও, নিজেরা সেই পরিবেশ ধরে রাখতে পারেনি৷ পাহাড় কেটে, জঙ্গল কেটে উন্নয়নের নামে বাড়ি, রাস্তাঘাট তৈরি করেছে৷ তাতেই পাহাড়ের জমি থেকে শিকড় আলগা হয়েছে৷ সেটা বন্যার একটা বড় কারণ৷
যুক্তি, প্রতিযুক্তি যতই থাক, নদী রাজনীতিকে শুধুমাত্র দুষলেই হবে না৷ যে কোনও প্রাকৃতিক বিষয় থেকে বাঁচতে পরিবেশ রক্ষাই একমাত্র স্থায়ী উপায়৷ যা কোনও একটি দেশের হাতে নয়, পৃথিবীর প্রতিটি দেশেরই সেই দায়িত্ব আছে৷ দায়িত্বপালনের দায়ও আছে৷
The post ভারতের বাঁধে নেপালে বন্যা! নদী রাজনীতিতে প্রতিবেশীকে দুষছে হিমালয়ের দেশ appeared first on Sangbad Pratidin.