চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: বসন্তে পাহাড়, জঙ্গল আর নীল জলরাশি ঘেরা মাইথন আরও আকর্ষণীয়। রাজ্যের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্থলে নয়া দিশা দেখাচ্ছে ‘পলাশ উৎসব’। মন কেমন করা দোলে শহুরে বসন্ত প্রেমিকরা একদিনের জন্য ছুটে যান কবিগুরুর সাধের শান্তিনিকেতনে। কিন্তু শান্তিনিকেতনের বাইরে বসন্ত উপভোগের নতুন হাতছানি এখন ছোট নাগপুর মালভূমের আগুনরঙা পলাশ। রূপনারায়ণপুর ‘সংবেদনা’ আয়োজিত ‘পলাশ উৎসব’ জনপ্রিয় হচ্ছে ক্রমশ। তারই টানে সেখানে ভিড় জমাচ্ছে ভ্রমণপ্রিয় বাঙালি।
এবারের ‘পলাশ উৎসব’ পড়ল ১৫ বছরে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়েছে তাঁদের আমন্ত্রণ পত্র। মাইথনের জল, জঙ্গল আর পাহাড়ের মাঝে বসন্ত উপভোগের পরিকল্পনাকে সহজে বাস্তবায়িত করার চেয়ে আনন্দের আর কী-ই বা হতে পারে? নৌকায় দামোদর পেরিয়ে দ্বীপের মধ্যে জঙ্গলের ভিতর – এমন এক উৎসব যেখানে ফকিরি গানের তাল কাটে না বেসুরো গলাতেও। যেখানে সোনাঝুরির ছায়ায় ফুটে থাকা জংলি ফুল মাড়িয়ে দেয় না কাচভাঙা পানীয়ের বোতল। শান্তির নির্জনতা খানখান হয় না যেখানে। দোল উৎসবের আগের দিন অর্থাৎ রবিবার সন্ধ্যায় শুরু হয়েছে অনুষ্ঠান। দোল উৎসবের দিন সোমবার ভোর ৬ টা থেকে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে, চলবে রাত পর্যন্ত। মাইথনের কাছে ছোট্ট দ্বীপ, কেওটজালির পলাশ বনে।
[আরও পড়ুন: দেশে করোনা হানার জের, অরুণাচল প্রদেশে বিদেশিদের প্রবেশে জারি নিষেধাজ্ঞা]
আসানসোল থেকে যেতে হলে রূপনারায়ণপুর পেরিয়ে বৃন্দাবনী গ্রাম হয়ে, নৌকা করে দামোদর পেরিয়ে পৌঁছতে হবে কেওটজালির পলাশ বনে। নিঝুম জঙ্গলের মাঝে চলে উৎসব। গানে-কবিতায়-নাচে-গল্পে-ছবি আঁকার আনন্দে মেতে উঠতে একসঙ্গে হুল্লোড়, খাওয়াদাওয়া। পলাশ প্রকৃতিকে আপন করে নেওয়ার উৎসব। আর পাঁচটা ভিড়ের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। এমন এক জঙ্গল যেখানে আগুনরঙা পলাশ তো আছেই, সঙ্গে দেখা মিলবে হলুদ পলাশেরও। রোজকার রুটিনে বাঁধা মাপা জীবনের বাইরে জঙ্গলে অন্য অ্যাডভেঞ্চার।
‘সংবেদনা’র কোষাধ্যক্ষ দিবাকর দাস জানান, “কবিগুরুর বসন্ত উৎসবের ঘরানা, সীমান্তের এই এলাকায় ছিল না। হিন্দি ভাষাভাষীদের এলাকায় বরং ফাগুয়ার চল রয়েছে। একটা দিন অন্যভাবে কাটানোর এমন উৎসব সম্ভবত এ বাংলায় খুব একটা দেখা যায় না। তাই প্রকৃতিকে ভালোবেসে ‘পলাশ উৎসব’ জনপ্রিয় হচ্ছে ক্রমশ। কলকাতা হোক বা জেলা, যে কেউ আসতে পারেন, পরিবার বা আত্মীয় নিয়ে। হঠাৎ করে পৌঁছে গেলেও কেউ বিমুখ হবেন না।”
[আরও পড়ুন: কলকাতার এই ঐতিহ্যবাহী পরিবারগুলির দোল উৎসব সম্পর্কে জানেন?]
বেশ কয়েক বছর ধরে অনুষ্ঠানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করছেন বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী রত্না সোম। তিনি জানান, বসন্ত এসে গেলেই ‘পলাশ উৎসব’-এর অপেক্ষা থাকে। ২০০৫ সালে, ৩০ জনকে নিয়ে শুরু করা এই উৎসবে এখন অংশগ্রহণ করেন ৫০০ জন। সারা বছর প্রকৃতির পলাশ বনকে আগলে রাখে রূপনারায়ণপুরের ‘সংবেদনা’। নিয়মিত পত্রিকাও প্রকাশিত করে তাঁরা, নাম ‘পলাশ কথা’। সেখানে লেন্সবন্দি পলাশের সৌন্দর্যের সঙ্গে থাকে পলাশ নিয়ে নানা কথা। শীতের মরসুমের পর চৈতি হাওয়াতেও মাইথন টুরিজমের চুম্বকাকর্ষণ ‘পলাশ উৎসব’।
ছবি: মৈনাক মুখোপাধ্যায়।
The post ফাগুন প্রকৃতির রূপ দেখাচ্ছে ‘পলাশ উৎসব’, বসন্তে ঘুরে আসুন মাইথন appeared first on Sangbad Pratidin.