shono
Advertisement
New Bengali Drama

বাস্তব-পরাবাস্তব মিলে মিশে একাকার ‘চন্দ্রাহতের কুটির’ নাটকে

এই নাটকে প্লট ভাঙার ধারাবাহিক খেলা আছে।
Published By: Suparna MajumderPosted: 03:23 PM Jul 20, 2024Updated: 04:02 PM Jul 20, 2024

চারুবাক: বন্ধুপ্রতীম লেখক রবিশঙ্কর বল তাঁর সৃজনের মাঝ পর্বে এসে বাস্তবকে সরিয়ে পরাবাস্তব ও জাদুবাস্তবতাকে কলমে তুলে নিয়েছিলেন! বলতেন 'প্লট ভাঙো, গল্প বলো'। সেই মতেই লেখা 'চন্দ্রাহতের কুটির'। না, উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের নাটকের কলমে গত ৭ জুলাই মিনার্ভা মঞ্চে ওই নামে যে নাটক দেখলাম, সেখানে রবিশঙ্করের সঙ্গে উজ্জ্বলের চিন্তা ভাবনা, স্বপ্নও মিশে রয়েছে।

Advertisement

রবিশঙ্কর তাঁর চিন্তায় কলমে মিশিয়েছিলেন সপ্তদশ শতকের জাপানি হাইকু কবি মাৎসুও বাশোর সমাজ দর্শন, শিল্প ভাবনা! নাটককার উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের কৃতিত্ব, তিনি রবিশঙ্কর ও বাশোর জীবন ও শিল্প দর্শনকে অবিকৃত রেখে পুরো মঞ্চ জুড়ে আজকের জটিলতম জীবনের এক বীভৎস মজা, আনন্দ ও তার সারশূন্যতার উদযাপনও করেছেন। ব্যঙ্গ বিদ্রুপের তীব্র, তীক্ষ্ণ খোঁচায় রক্তাক্ত করেছেন দর্শকদের। এই সময়ের বাংলা নাটকের মানচিত্রে অন্যতম উজ্জ্বল নাম পৃথ্বীশ রাণা। তাঁর পরিকল্পিত নির্দেশনায় শুধু নয়, গানের তিন রথী - তন্ময় রায়(সঙ্গীত), বিশ্বজিৎ বিশ্বাস (আবহ) ও দেবরাজ ভট্টাচার্য (সৃজনশীল সঙ্গীত) এবং মঞ্চ ও আলোর পরিকল্পক অভ্র দাশগুপ্তের সামগ্রিক প্রচেষ্টায় সেই সন্ধ্যায় ঘটেছিল এক অপূর্ব নাট্যাভোজের আয়োজন।

[আরও পড়ুন: যিশু-নীলাঞ্জনার সম্পর্কে ভাঙন? মুখ খুললেন রুদ্রনীল, ‘কষ্ট পাচ্ছি’, লিখলেন পরিচালক রাজর্ষি]

এই নাটকে প্লট ভাঙার ধারাবাহিক খেলা আছে। গল্প আছে কোলাজের মতো। আজকের বাঙালি লেখক মনোতোষ (পার্থসারথি সরকার) এবং প্রবীণ জাপানি লেখক দার্শনিক মাৎসুও বাশো (নীলাঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়) তো আছেনই, সেই সঙ্গে 'চন্দ্রাহতের কুটির'-এ অর্থাৎ এক ঝাঁক উন্মাদের শিবিরে উপস্থিত নানা পেশা ও নেশার মানুষ কেশব, বঙ্কিম, রনো, চেরি, রেহানা, বেলা। সবাই মিলে এক নরক গুলজারের আসর যেন। কথায় কথায় এসে পরে বিশ্ব রাজনীতি, এই দেশ ও রাজ্যের রাজনীতিও। দীর্ঘ আলোচনা, তর্ক, গানের পরেও অস্থির অসম্পূর্ণ জীবনের রেশ রয়ে যায়। শুধু জীবনেরই নয়, ওদের মুখে রয়ে যায় উন্মাদ সমাজের এক মানচিত্রও। বোঝা যায় বাশো মনোতোষরা আসেন কিছু বার্তা নিয়ে, কিন্তু সেই বার্তা বহন করে নিয়ে চলার লোক নেই। পুরো সমাজ পরেই থাকে 'চন্দ্রহতের কুটির'-এই।

এই প্রযোজনার (ডার্ক স্টুডিওস ও নাটকীয়) সবচাইতে বড় আকর্ষণ হচ্ছে ঝলমলে উজ্জ্বল প্রাণোচ্ছ্বল উপস্থাপনা। নাচে গানে, মঞ্চ পরিকল্পনায়, আলোর ঝলকানিতে এবং শব্দের ব্যবহারে সত্যিই বড় চমক। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল 'ভঙ্গি' দিয়ে চোখ ভোলানো হচ্ছে না তো? মন ভোলানোর মতো বক্তব্য তো ভঙ্গীকে পেছনে ফেলে সামনে এসে দাঁড়ালো না তেমন স্পষ্ট করে! রবিশঙ্করের গল্প ও বাশোর হাইকুতে যে স্বপ্ন ও বাস্তবের আভাস ছিল সেটা রয়ে গেল উপস্থাপনার বৈভবের আড়ালেই।

তবে হ্যাঁ, মঞ্চ উচ্ছলিত এক ঝাঁক শিল্পী কিন্তু সুন্দর ছন্দে নিজেদের বেঁধে রেখেছিলেন, বা বলতে পারি পৃথ্বীশের কৃতিত্বেই ঘটেছে সেই ছন্দোবদ্ধ ব্যাপারটি। নাটকের শুরুতে প্রায় সব চরিত্রই ঢুকে পড়ে মঞ্চে। একেবারে ফোরফ্রন্টে দেখা যায় একটি চরিত্র পেট পরিষ্কার করার জন্য বেশ কসরত করছিলেন এবং শেষ দৃশ্যে সেই একই চরিত্র গোপাল ভাঁড়ের মতো প্রাতঃকৃত্য শেষ করার পর নির্মল আনন্দে নিষ্ক্রান্ত হলেন। দর্শকরাও যদি একইভাবে নাটকের মূল বক্তব্যকে আত্মীকরণ করে হল থেকে বেরোতে পারতেন তাহলে পৃথ্বীশের জন্য হাততালির পাওনা হতো দ্বিগুণ।

[আরও পড়ুন: ৩০তম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারপার্সন থাকছেন না রাজ! পদ সামলাবেন কে?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • এই নাটকে প্লট ভাঙার ধারাবাহিক খেলা আছে।
  • গল্প আছে কোলাজের মতো।
Advertisement