shono
Advertisement

‘সিটি অফ জয়’নয়, কলকাতা শহরের অন্যরকম গল্প বলে পরিচালক ইশান ঘোষের ‘ঝিল্লি’, পড়ুন রিভিউ

প্রথম ছবিতেই নজর কাড়লেন পরিচালক গৌতম ঘোষের ছেলে ইশান।
Posted: 01:53 PM Nov 12, 2022Updated: 12:13 AM Nov 13, 2022

চারুবাক: পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটি বড়ো শহরের পেটের নিচে আরও একটা শহর থাকে। যে জায়গাটি ঝলমলে শহর, আকাশছোঁয়া বহুতল, শপিং মল, প্রাচুর্যের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত। সে জায়গা নিতান্তই গরিব, সাধারণ মানুষের আশ্রয়স্থল। দুর্গন্ধময়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, শিক্ষার কোনও সুযোগ নেই, সমাজবিরোধীদের প্রধান আশ্রয়স্থল, যেখানে তথাকথিত সভ্যতার আলো পৌঁছয়নি, পশুর চাইতেও অধম অবস্থায় মানুষ নামের কিছু জীব বাস করে। সেই জায়গাটাই শহরের “আন্ডার বেলি”। কলকাতা শহরের সেইরকম বহু জায়গা অবশ্যই আছে, তবে সব চাইতে কুখ্যাত এবং পঙ্কিল জায়গাটির নাম “ধাপা”। শহরের সব ধরনের সমস্ত জঞ্জাল ফেলার একমাত্র জায়গা।

Advertisement

সেখানে মানুষও থাকে। সেখানে জিনিস কুরোনি মেয়ে-পুরুষ আছে, হাড় গুঁড়ো করার কারখানা আছে, কারখানার শ্রমিক আছে, বাড়ি আছে। কিন্তু নেই শুধু স্বাভাবিক জীবনের কোনও রেখা কিংবা আলো। ওখানকার বকুল, গণেশ, গুড্ডু, চম্পা, বয়স্ক বিশ্বনাথ সকলেই ধাপার অতীব নোংরা পরিবেশের মধ্যে জন্মায়, জীবন কাটায়, মরেও যায়। না, সেজন্য কোনও প্রতিবাদ প্রতিরোধ নেই। তাঁরা মেনে নিয়েছে তাঁদের “ভাগ্য”কে।

কিন্তু, মানতে পারেননি তরুণ পরিচালক ইশান ঘোষ। বাবা গৌতম ঘোষের কাছে ক্যামেরা নিয়ে হাতেখড়ি হলেও, ইশান প্রথম ছবিতেই জানিয়ে দিলেন, কলকাতার পেটের নিচে মৃত্যুর চাইতেও করুন অবস্থায় বেঁচে থাকা বকুল-গনেশের দলও স্বপ্ন দেখে, দূরের আকাশে উড়ে যাওয়ার, যেভাবেই হোক, একটু ভাল থাকার। ওদের যাপিত জীবনকে নিয়ে এমন রাগী, বদমেজাজি,শৃংখলাহীন জীবনের ছবি আগে দেখা যায়নি। হ্যাঁ, কিউ একটি ছবি করেছিলেন “গান্ডু” নামে। কিন্তু ইশান ঘোষের “ঝিল্লি ” থেকে তফাৎ করে দিয়েছে পরিচালকের সংবেদনশীল মনন, পরিবেশনার আন্তরিক স্নেহ এবং বকুল চরিত্রটির পরিণতিতে। না, এই ছবিতে কোনও গল্প নেই। রয়েছে ধাপা এলাকার কয়েকটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ডায়েরি। যেখানে বন্ধুত্ব আছে, সহমর্মিতা আছে, ঠাট্টা আছে, পাগলামি আছে, মা বোনদের নিয়ে গালাগাল আছে, হয়তো বা একটু বেশিই! ইশানের ক্যামেরা একই সঙ্গে কিন্তু ওখানকার মানুষের জীবনের স্পন্দন ও ধুকপুকানিটিও ধরেছেন। কলকাতা নিয়ে এমন গল্প এর আগে বাংলা সিনেমায় দেখা যায়নি।

[আরও পড়ুন: না ভয় করবে, না হাসি পাবে, ক্যাটরিনার ‘ফোন ভূত’ আড়াইঘণ্টার মাথাব্যথা! পড়ুন রিভিউ ]

বাংলা সিনেমাও যে ক্যামেরার মুভমেন্ট এমন দুরন্ত হয়ে উঠতে পারে সেটা করে দেখালেন পরিচালক ইশান। এই ছবির আবহসংগীত তেমনই বিরল ঘরানার। ছবির প্রতিটি মুহূর্তের সঙ্গে তা একেবারে মিশে গিয়েছে। সৌম্যজিৎ ঘোষ ও রাজর্ষী দাসের আবহসংগীত বাদ দিলে যেন ছবির প্রায় প্রাণটাই হারিয়ে যাবে।

অরণ্য গুপ্ত প্রথম দিকটায় একটু অস্বস্তি কাটিয়ে শেষপর্যন্ত তিনিই এই ছবির প্রোটাগনিস্ট। প্রায় পাগল হয়ে যাওয়ার দৃশ্যটিতে গণেশরূপী বিতানের সঙ্গে দৃশ্যটি অন্য পর্যায়ে চলে যায়। গণেশ ওকে ধাপার নোংরা পরিবেশ থেকে সরিয়ে নিতে চাইলে, সে চিৎকার করে বলে ওঠে আমার মা এখানে জন্মেছে, আমিও জন্মেছি। থাকব এখানেই। তাঁর সেই আর্ত চিৎকার যেন শূন্যে মিলিয়ে যায়। বিমানের যাতায়াত ও শকুনের স্বাধীন উড়ে যাওয়া, ধাপাবাসীদের কাছে যেন এক স্বপ্নের উড়ান, যা অপূর্ণই থাকে তাদের সবার কাছে। ছবিতে কোনও আশার বাণী নেই, থাকার কথাও নয়। জীবন চলে বাস্তবের গতিতে, স্বপ্ন সেখানে অবাস্তব। বিতান, অরণ্য ছাড়া সৌম্যাদীপ গুহ(গুড্ডু), বিশ্বনাথ দে (বিশ্বদা), প্রত্যেকেই রীতিমতো ইশানের সঙ্গে একই যুদ্ধের কমরেড হয়ে সমাজ থেকে বাতিল (ঝিল্লি) হয়ে থাকা জীবন যুদ্ধকে পর্দায় এমন রাগ অনুরাগ দিয়ে বাস্তব করে তুলেছেন যে কখনও কখনও ছবিটিকে এক ধরনের তথ্যচিত্র হিসেবেও ভাবা যায়। আসলে ইশান তো তথ্যচিত্রর ভাবনা দিয়েই শুরু করেছিলেন এই ছবির কাজ, তাই বাবা পরিচালক গৌতম ঘোষের কাছ থেকে ডিএনএ মারফত পাওয়া চিন্তা ভাবনা, জীবনবোধটাও ঢুকে গিয়ে “ঝিল্লি” কে জীবনের এক জ্বলন্ত টুকরো তৈরি করে দিয়েছে।

[আরও পড়ুন: দুর্বল চিত্রনাট্যের চোরাবালিতে হারিয়ে গেল সোনাক্ষী-হুমার ‘ডাবল এক্সএল’, পড়ুন রিভিউ ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement