সুব্রত বিশ্বাস: ট্রেনের মেরামতিতে আর খামতি রাখা যাবে না। কাজের সময়ে প্রতিটা সেকেন্ডও জরুরি। এবার পুরো সময়টারই সদ্ব্যবহার করতে চায় রেল। কোচ ও ওয়াগন রক্ষণাবেক্ষণের ডিপোগুলোতে খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে সময় নষ্ট বন্ধ করার পাশাপাশি একেবারে হাতে গরম খাবার তড়িৎগতিতে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে রেল। ওয়ার্কশপগুলোর ক্যান্টিনে এবার সব খাবারই তৈরি হবে মেশিনে। দ্রুততার সঙ্গে গরম খাবার পাওয়া ও তা খেয়ে তড়িঘড়ি কাজে যোগ দেওয়ার লক্ষ্যে এই প্রকল্প নিয়েছে রেল। পূর্ব রেলের লিলুয়া ওয়ার্কশপে বিশ্বকর্মাপুজোর দিনেই এই ধরণের মেশিনের সূচনা হয়েছে।
রীতিমতো পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে এখানে কাজ শুরু করেছে এই মেশিন। লিলুয়া ওয়ার্কশপের চিফ ওয়ার্কস ম্যানেজার যতীশ কুমার জানান, সময় সাশ্রয় ও গরম খাবার পরিবেশনের জন্য এই যন্ত্র কাজ করবে। সম্পূর্ণ ম্যাকানাইজড এই মেশিনে প্রতি সেকেন্ডে পাঁচটি করে রুটি বেরিয়ে আসবে। আটা মাখা থেকে, লেচি তৈরি, রুটি বেলা ও আলু ছোলা সবই হবে মেশিনে। বাইশ লক্ষ টাকার এই মেশিনে একেবারে হাতে গরম খাবার পাওয়া যাবে। এতকাল হাতে রুটি তৈরি করতে সময় লাগত। ফলে এক সঙ্গে প্রচুর কর্মীকে খাবার দেওয়ার অসুবিধাও হত। এবার তা আর লাগবে না। ফলে কর্মীরাও খাবার খেয়ে সময় মতো কাজে চলে আসতে পারবে। এতে কাজ করার সময়ও পাওয়া যাবে যথেষ্টভাবে।
ট্রেনকে দুর্ঘটনা মুক্ত করা ও উপযুক্ত মানের রাখতে ওয়ার্কশপগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। লিলুয়া ওয়ার্কশপও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক্ষেত্রে। এই ডিপোতে রয়েছে ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন সপ। যেখানে কোচ ও ওয়াগন মেরামতি হয়। চাকার অংশ ট্রলি ও বডি মেরামতির আলাদা বিভাগ রয়েছে। এখন প্রায় সবই এলএইচবি কোচ হওয়ায় বগিতে আগের মতো ম্যানুয়ালি পেইন্ট করা হয় না। এখন স্যান্ড ব্লাস্টিং করে জং তোলা হয়। তার পর পিইউ পেইন্ট করা হয়। জে-সপে তৈরি হয় বডির সব স্টিল প্লেট।
এছাড়াও রয়েছে ক্রেন সেকশন, ওয়েলডিং সেকশন। ডব্লুটিএর কে-সপে হুইল ও অ্যাকসেল পরীক্ষা হয় আল্ট্রা সাউন্ডে। রয়েছে আরও গুরুত্বপূর্ণ বহু বিভাগ। হাজার দশেকের মতো কর্মী এই গুরুত্বপূর্ণ কাজ সামলান। পিরিওডিক্যাল ওভারহলিং অর্থাৎ নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে প্রায় চার ঘণ্টা সময় লাগে একটি ট্রেনের ক্ষেত্রে। সেই সময়ের মধ্যে কাজ সারতে হলে প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাতে হবে। এজন্য সময় যাতে অহেতুক ব্যায় না হয়, তাই খাবার তৈরিতেও রেলে যন্ত্রের প্রবেশ বলে জানিয়েছে আধিকারিকরা।