সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতীয় রেলের (Indian Railways) অফিসারদের দশটা-পাঁচটার ‘সুখের দিন’ কার্যত শেষ। আর পাঁচজন বাকি রেলকর্মীদের মতো এবার তাঁদেরও দুই শিফটে কাজ করতে হবে। দায়িত্ব নিয়েই এই নির্দেশ কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী (Railway Minister) অশ্বিনী বৈষ্ণোর (Ashwini Vaishnaw)। তাঁর নির্দেশ মতো, এবার সকাল সাতটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত প্রথম শিফট। এরপর দুপুর তিনটে থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত দ্বিতীয় শিফটে কাজ করবেন রেলের আধিকারিকরা। অর্থাৎ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কর্মচঞ্চল থাকবে রেলের অফিস। তিনি কাজপাগল বলেই দাবি করেন বৈষ্ণোর পরিচিতরা। তাই মন্ত্রকের দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রেলের কর্মসংস্কৃতির চাকাও ঘুরিয়ে দিলেন নতুন রেলমন্ত্রী।
বুধবারই রেলমন্ত্রী হয়েছেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রাক্তন ব্যক্তিগত সচিব এবং অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অশ্বিনী বৈষ্ণো। তারপরেই এই নির্দেশিকা জারি করেছেন তিনি। রেল মন্ত্রকের জনসংযোগ আধিকারিক ডি জে নায়ার এই নতুন দুই শিফটের কথা জানান। তিনি বলেন, “রেলমন্ত্রী রেলের সব কর্মীদের দু’টি শিফটে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। খুব দ্রুত কর্মীদের সময়সূচি সংক্রান্ত নির্দেশিকা দেওয়া হবে।” রেলকর্মীদের কর্মস্থলে নতুন সময় বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি দৈনিক ন’ঘণ্টা কাজ করার বিষয়টিতেও সরকারি সিলমোহর দিল মন্ত্রীর এই নির্দেশ।
[আরও পড়ুন: কে হবেন বিজেপির রাজ্যসভার দলনেতা? মন্ত্রিসভার রদবদলের পর শুরু জল্পনা]
রেলমন্ত্রীর পাশাপাশি বৈষ্ণো দেশের নয়া তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রীও। সেই মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়েই বৃহস্পতিবার টুইটারকে একপ্রস্থ কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন তিনি। প্রথম দিনেই তিনি জানিয়ে দেন, ভারতে ব্যবসা করতে হলে ভারতের আইনই মানতে হবে। মন্ত্রীর এই কড়া মনোভাবের পর নতুন তথ্যপ্রযুক্তি আইনকে ঘিরে কেন্দ্রের সঙ্গে চলা দীর্ঘদিনের টালবাহানায় অবশেষে খানিকটা সুর নরম করেছে টুইটার। আর ভারতীয় রেলের দায়িত্ব নিয়ে বৈষ্ণোর নতুন নির্দেশিকায় রাজনৈতিক মহল মনে করছে, সরকারি কাজে গতি আনতে প্রধানমন্ত্রী ঠিক যে কাজটি চাইছেন, নতুন রেলমন্ত্রী শুরুর দিন থেকে সেই কাজটি শুরু করলেন।
বিজেপির টিকিটে রাজ্যসভায় আসার দু’বছর পরেই নরেন্দ্র মোদির নতুন মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পেয়েছেন রাজস্থানের মানুষ অশ্বিনী। নিজে গভীর রাত পর্যন্ত কাজে ডুবে থাকতে ভালবাসেন ৫০ বছর বয়সি প্রাক্তন এই আইএএস। তাঁর কাজের ক্ষিপ্রগতির সঙ্গে এবার পাল্লা দিতে হবে রেলের বড় অফিসারদেরও। মোদির মন্ত্রিসভার রদবদলের পর রেলের কর্মসংস্কৃতিতেও যে বড়রকম ভোলবদল হতে চলেছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। মন্ত্রকে এসে অশ্বিনী প্রথম থেকেই বুঝিয়ে দিলেন কর্পোরেট সংস্থার ধাঁচেই কাজ হবে সরকারি ক্ষেত্রেও।
[আরও পড়ুন: ‘মহামারী এখনও বিদায় নেয়নি’, দেশবাসীকে কড়া সতর্কবার্তা কেন্দ্রের]
রেলের ব্যবসা বাড়ানোর লক্ষ্যে আগেই রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে কিছু রদবদল হয়েছিল। এবার ভারতীয় রেলকে ব্যবসায়িক দিক থেকে আরও লাভবান করার লক্ষ্য নিয়েছেন নতুন মন্ত্রী। এতদিন দশটা-পাঁচটা কাজ করতেন রেলকর্মীরা। এবার রেলে দুই শিফটে কাজের এই নির্দেশিকায় কর্পোরেট সংস্থার ছাপ স্পষ্ট।
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ করে ১৫ বছর আমলা হিসাবে দায়িত্ব সামলেছেন অশ্বিনী। তারপর আমেরিকায় এমবিএ পড়েন। কোর্স শেষে দেশে ফিরে সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে নামী কর্পোরেট সংস্থায় কাজ করেন। পরে গুজরাটে নিজে গাড়ির যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী সংস্থা গড়ে তোলেন। সরকারি আমলা হিসাবে ও কর্পোরেট জগতে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়েই এবার রেলের শীর্ষ পদে বসেছেন মোদির আস্থাভাজন অশ্বিনী।