সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গতকাল, আজ, আগামিকাল। সাধারণত এভাবেই অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতের ধারণা করা হয়েছে। সময়কে একটি মাত্রা ধরলে নির্দিষ্টভাবে এই হিসেবেই চলতে অভ্যস্ত আমরা। যা বিগত, তা অতীত। এই মুহূর্তে যা, তা বর্তমান এবং যা আগত, তাই-ই ভবিষ্যৎ। তবে উচ্চ পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণা বলছে অন্য কথা। ‘কাল’ অর্থাৎ সময় নামে মাত্রার খেলা বড় বিভ্রান্তিকর। তাই যা মনে হচ্ছিল অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ, সাম্প্রতিকতম গবেষণা তার সবটাই প্রায় খারিজ করে দিচ্ছে। আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানীরা অংক কষে বলছেন, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ একইসঙ্গে রয়েছে। যা কিছু এই মুহূর্তে ঘটছে, আর যা পরের মুহূর্তে ঘটবে – দুটোর মধ্যে তফাৎ নেই।
মানসিকতার বদল আনতে বসতি রাঙিয়ে দিচ্ছেন এই শিল্পী
তবে সময়ের এই একমাত্রিক ধারণা বহু আগেই দিয়ে গিয়েছে ভারতীয় দর্শন। অদ্বৈতবাদের যোগাবশিষ্ঠ রামায়ণ এবং বৌদ্ধ ধর্মের সর্ব-অস্তিবাদে এই ধারণাকেই তুলে ধরা হয়েছে। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ বস্তুত এক। যে যেদিক থেকে দেখবে, তার কাছে সেটাই প্রতিফলিত হবে। এমনকী এমআইটি-র পদার্থবিজ্ঞানীদের এই গবেষণা কিন্তু এক দার্শনিকের দ্বারা প্রভাবিত। এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর ব্র্যাডফোর্ড স্কো-র নতুন তত্ত্ব অনুযায়ী, কাল স্থির। বরং আমরা সেই কালের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চলেছি। যেভাবে সমুদ্রে জাহাজ ভেসে যায়। স্কো-র এই তত্বকে সামনে রেখে উচ্চ পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন সূত্র, তত্ব একত্রিত করে নতুনভাবে গবেষণা শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। নতুন অংকের গতিপ্রকৃতি দেখে তাঁরাই বলছেন, বস্তুত অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের ভাগ নেই। সবটা একইসঙ্গে অস্তিত্বশীল।
ছ’দশক ধরে মূক-বধিরের অভিনয়! সত্যি জেনে বিচ্ছেদের মামলা স্ত্রী’র
গবেষকদের আরও ব্যাখ্যা, আইনস্টাইনের থিওরি অফ রিলেটিভিটি অনুযায়ী স্পেস-টাইম বা স্থান-কালের যে ধারণা, তা কিছুটা পুরনো। ধরা যাক, কোনও এক মুহূর্তে আমরা কোনও এক স্থানে রয়েছি। পরের মুহূর্তে অন্য কোথাও সরে যাওয়ার অর্থ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্থানও বদলে ফেলা। টাইম-স্পেস একইসঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে। কিন্তু কোয়ান্টাম ফিজিক্সের আধুনিক গবেষণা অনুযায়ী বিশ্লেষণটা এরকম যে, সময় স্থির। ব্যক্তির গতির কারণে স্থান পরিবর্তন, যা একেবারেই গতিজাত। কোনওভাবেই একে সময়ের সরণ বলা যায় না। প্রাচ্য দর্শনও সেকথাই বলছে। ব্যক্তি নিরপেক্ষ হলে, গোটা বিষয়টিই অন্যরকমভাবে প্রতিভাত হবে। তবে দর্শনের মতবাদ আর তা গাণিতিক, বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ হওয়ার মধ্যে বিশাল ফারাক। একে বিজ্ঞানের অন্যতম সাফল্য বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। যদিও সময় নিয়ে এই নতুন গবেষণার ফলাফল আরও নিশ্চিত হওয়ার পরই প্রকাশ করতে চায় এমআইটি-র পদার্থবিদ্যা বিভাগ। কারও কারও মতে, সময়ের আচরণ নিয়ে পদার্থবিজ্ঞান যতই কাঁটাছেড়া করুক অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতের ফারাক একেবারে লুপ্ত হয়ে যাওয়ার বাস্তব সত্য অনুধাবন করা কঠিন।
The post কারও কোনও ‘ভবিষ্যৎ’ নেই! চমকে যাওয়ার মতো ইঙ্গিত বিজ্ঞানের নয়া গবেষণায় appeared first on Sangbad Pratidin.