দীপঙ্কর মণ্ডল: পরীক্ষা শুরুর প্রথম সোয়া এক ঘণ্টা শৌচালয়ে যেতে পারবে না মাধ্যমিক (Madhyamik Examination 2022) পড়ুয়ারা। হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে এই ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্যের মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। মাঝে মাত্র একদিন। সোমবার সকাল ১১.৪৫ থেকে শুরু হতে চলেছে এই মেগা পরীক্ষা। বারোটা থেকে উত্তর লেখা শুরু। তিনটেয় পরীক্ষা শেষ। দুপুর ১.১৫ মিনিটের আগে হল থেকে কেউ বাইরে যাওয়ার অনুমতি পাবে না। আগে বাথরুম বা অন্য কারণে হলের বাইরে যাওয়ার অনুমতি মিলত ৪৫ মিনিট পরে।
ফি বছর পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে আসল হোক বা নকল মাধ্যমিক প্রশ্ন সোশ্যাল মিডিয়ার ঘুরতে শুরু করে। যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায়। অস্বস্তি পোহাতে হয় পুলিশ প্রশাসনকে। নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই ধরনের ঘটনায় জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসা লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রীর মনে প্রভাব পড়ে। উদ্বেগ দেখা দেয় অভিভাবকমহলেও। গত বছর কোভিডের কারণে মাধ্যমিক হয়নি। ২০২০’র পর এবার ফের হাতেকলমে পরীক্ষা। মাধ্যমিক শুরুর মাসখানেক আগে থেকে নিরাপত্তা ও নজরদারি নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ মহলের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়। শুক্রবারও কলকাতা পুলিশের সদর দপ্তরে লালবাজারে পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। শনিবার তিনি পরীক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করবেন।
[আরও পড়ুন: ‘ওদের খাবার দিয়েছি আমি, আপনি নন’, জ্যোতিরাদিত্যকে কটাক্ষ রোমানিয়ার মেয়রের, ভাইরাল ভিডিও]
কাজের সুবিধার্থে রাজ্যের পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিকে ২৪টি এলাকায় ভাগ করা হয়েছে। প্রত্যেক ভাগে একজন করে কনভেনর থাকবেন। তাঁদের অধীনে থাকবেন সেন্টার ইনচার্জ, অফিসার ইনচার্জ, ভেন্যু সুপারভাইজার, অ্যাডিশনাল ভেন্যু সুপারভাইজার ও পর্ষদ প্রতিনিধি। এই কয়েকজন ছাড়া পরীক্ষা চলাকালীন কেউ পকেটে মোবাইল রাখতে পারবেন না। এবার প্রথম পার্শ্বশিক্ষক ও চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের পরীক্ষা প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছে। নিজের ছেলেমেয়ে বা কোনও আত্মীয় পরীক্ষার্থী থাকলেও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্কুলে আসতে হবে। তবে তাঁদের পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ নিষেধ। প্রত্যেকটি ভাষার উত্তরপত্রের জন্য আলাদা আলাদা রংয়ের প্যাকেট বরাদ্দ হয়েছে। ইংরেজির জন্য সবুজ, নেপালীর জন্য লাল, ওড়িয়ার কমলা, ঊর্দুর মেরুন ও হিন্দির খাতা ঢুকবে নীল প্যাকেটে।
পরীক্ষার্থীর সঙ্গে পরীক্ষাকেন্দ্রের ভিতরে একজন ঢুকতে পারবেন। শুধুমাত্র পরীক্ষার প্রথমদিন মিলবে এই অনুমতি। তবে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে অর্থাৎ ১১.১৫ মিনিটে সেই অভিভাবককে বাইরে চলে আসতে হবে। বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন, দৃষ্টিহীন ও বধির পরীক্ষার্থীরা এবারও ৪৫ মিনিট বাড়তি সময় পাবে। কারও শ্রুতিলেখক থাকলে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশে পর্ষদের অনুমতি থাকা বাধ্যতামূলক। শুধু পরীক্ষার্থীই নয় শিক্ষক-শিক্ষিকারাও মোবাইল, স্মার্ট ঘড়ি, ক্যালকুলেটর-সহ কোনও বৈদ্যুতিন যন্ত্র পরীক্ষা চলাকালীন কাছে রাখতে পারবেন না।
প্রত্যেক পরীক্ষার্থী উত্তরপত্রের প্রথম পাতায় নিজের নাম, রেজিস্ট্রেশন নম্বর এবং রোল নম্বর সঠিক লিখেছে কিনা তা অ্যাডমিট ধরে মিলিয়ে নিতে হবে। পরীক্ষা না দিলেও অনেক সময় অ্যাটেডেন্স চলে আসে। এবিষয়ে ইনভিজিলেটরদের বাড়তি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে পর্ষদ। পরীক্ষা শুরুর ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট পরে কেউ চাইলে খাতা জমা দিতে পারবে। তবে সেই পরীক্ষার্থীর প্রশ্নপত্র জমা রাখতে হবে। পরীক্ষা শেষে নির্দিষ্ট ছাত্র বা ছাত্রী তার প্রশ্নপত্র ফেরত পাবে। পরীক্ষা শেষের ৩০ মিনিট আগে হলের দরজাগুলি বন্ধ করে সকলের খাতা জমা নেওয়ার পর তা মিলিয়ে দেখে দরজা খোলার নির্দেশ দিয়েছে পর্ষদ। উত্তরপত্র প্যাকেট করার সময় সর্বোচ্চ ৭৫টি খাতা একসঙ্গে রাখা যাবে। ট্রেনে উত্তরপত্র পাঠানোর সময় প্রতিটি পার্সেল ৫০ কিলোর মধ্যে রাখতে হবে। প্রয়োজনে থানায় এফআইআর (FIR) করে তা দ্রুত জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন পর্ষদ সভাপতি।