বোরিয়া মজুমদার, সিডনি: রূপকথার বিরানব্বই! সিডনিতে উপস্থিত যে কোনও পাকিস্তানির (Pakistan) সঙ্গে আপনি কথা বলুন। সে তিনি সাধারণ বাসিন্দা হন বা বিশ্বকাপ কভার করতে আসা সাংবাদিক, প্রত্যেকের মুখে এখন বিরানব্বই বিশ্বকাপ ঘুরছে! এঁরা প্রত্যেকে মনে করেন, সর্বশক্তিমানের অশেষ আশীর্বাদ না থাকলে এ জিনিস সম্ভব হত না। অনেকেই তো বাড়ি ফেরার টিকিট বুক করে ফেলেছিলেন। দোষ নেই। কে আর ভেবেছিল, নেদারল্যান্ডসের কাছে অভাবনীয় হারবে দক্ষিণ আফ্রিকা, আর বিশ্বকাপ (T20 World Cup 2022) সেমিফাইনাল খেলবে প্রায় রিটার্ন ফ্লাইটের টিকিট কেটে ফেলা পাকিস্তান!
অবশ্য তাতে পাকিস্তানিদের তেমন কোনও হেলদোল নেই। আফটার অল, সেমিফাইনাল খেলছে টিমটা। আর বাকি দু’টো ম্যাচ, যে দু’টোয় জিতলেই তারা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন! আজ বুধবার, সিডনিতে পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড ফাইনালে সমর্থকদের সিংভাগ যে পাকিস্তানের দিকে থাকবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ সিডনিতে প্রচুর এশীয়র নিবাস। শুনলে আশ্চর্য লাগতে পারে। কিন্তু সিডনির ভারতীয়রাও বুধবার পাকিস্তানকেই সমর্থন করছেন! দু’টো কারণে। এক, দু’টো সেমিফাইনাল থেকে দুই এশীয় দেশ জিতলে ফাইনালে ভারত-পাকিস্তান হওয়ার সম্ভাবনা। আর দুই, ভারত ফাইনাল খেললে নিউজিল্যান্ডের চেয়ে পাকিস্তান সহজ প্রতিপক্ষ। আইসিসি টুর্নামেন্টে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের রেকর্ড ভয়াবহ।
[আরও পড়ুন: সানিয়ার সঙ্গে বিচ্ছেদ হচ্ছেই! এবার শোয়েব মালিকের পোস্টে জল্পনা]
পাকিস্তানের দুশ্চিন্তা বলতে, দুই ওপেনার। এত দিন টি-টোয়েন্টিতে টিমের ‘পাওয়ার হাউস’ ছিলেন যাঁরা। অধিনায়ক বাবর আজম এবং মহম্মদ রিজওয়ান। ফখর জামানের পরিবর্ত হিসেবে এসে হ্যারিস দারুণ খেলেছেন। শাদাব খান, মহম্মদ নওয়াজ, ইফতিকার আহমেদও পারফর্ম করছেন। বোলিংটা তো বেশ ভাল। কিন্তু তারপরেও নিউজিল্যান্ড পাকিস্তানের তুলনায় অনেক বেশি ব্যালান্সড দল। বোলিং পাকিস্তানের প্রায় সমান সমান। সবুজ জার্সির শাহিন শাহ আফ্রিদি, হ্যারিস রউফ, মহম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র, শাদাব থাকলে ব্ল্যাক ক্যাপসদেরও আছে ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, লকি ফার্গুসন, মিচেল স্যান্টনাররা। আর ব্যাটিং পাকিস্তানের চেয়ে অনেক ভাল। ডেভন কনওয়ে আর ফিন অ্যালেন পাওয়ার প্লে-তে ওস্তাদ। কেন উইলিয়ামসন আছেন। মিডল অর্ডারে গ্লেন ফিলিপস। আর তাই, বাবর-রিজওয়ানকে লাগবে।
মঙ্গলবার পাকিস্তান টিম মেন্টর ম্যাথু হেডেন বলে গেলেন, বাবর দ্রুতই ফর্মে ফিরবেন। আর সেটা বিশ্বকাপের নকআউট পর্বেই ফিরবেন। প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় ওপেনার এ দিন বলে যান, ‘‘সেমিফাইনালে বাবরের আতসবাজি দেখলে অবাক হবেন না।’’ হলে ভাল। সংগঠকরাও চায়, পাকিস্তান জিতুক। কারণ তাতে ভারত-পাকিস্তান স্বপ্নের বিশ্বকাপ ফাইনালের একটা সম্ভাবনা থাকে। কিন্ত কাজটা কঠিন, খুব কঠিন। তবে পাক সমর্থকরা সে সব শুনবেন না। তাঁরা অক্লেশে দেখিয়ে দেবেন বিরানব্বই। সেই বিশ্বকাপ সেমিফাইনালেও পাকিস্তানের সঙ্গে দেখা হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের। আর ইমরানের পাকিস্তানকে জিতিয়ে দিয়েছিল ইনজামাম-উল-হকের ক্লাসিক। তিরিশ বছর পর বাবর পারবেন বিরানব্বইয়ের ইনজামাম হতে?