ধীমান রায়, কাটোয়া: শ্বাসকষ্টে ছটফট করছে ৩ দিনের শিশু। শিশুটিকে কোলে নিয়ে ছুটোছুটি করছেন বাবা। অভিযোগ, হাসপাতালে ভরতি থাকাকালীনও চিকিৎসার বন্দোবস্ত করেনি কেউ। তার যত্নের কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। হাসপাতালে সেই সময় ছিলেন না চিকিৎসক। আর নার্স ব্যস্ত স্মার্টফোন নাড়াচাড়ায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় দুধের শিশুটির। অমানবিক ঘটনার সাক্ষী ভাতার স্টেট জেনারেল হাসপাতাল (Bhatar State General Hospital)। ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন নিহত শিশুর পরিজনেরা।
তিনদিন আগে জন্মগ্রহণের পর থেকে সুস্থই ছিল নবজাতক (Newborn Baby)।হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালেই মৃত্যু হয় শিশুটির।পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার স্টেট জেনারেল হাসপাতালে বুধবার শিশুমৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন পরিবারের লোকজন।অভিযোগ, এদিন সকাল ৬ টা নাগাদ হঠাৎ শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা বারবার নার্সদের ও হাসপাতাল কর্মীদের কাছে অনুনয় বিনয় করেন চিকিৎসার ব্যবস্থার জন্য।কিন্তু শিশুটির সময়ে চিকিৎসাই করা হয়নি।
[আরও পড়ুন: ‘শীঘ্রই তৃণমূলে যোগ দেবেন ৬-৭ জন বিজেপি সাংসদ’, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মন্তব্যে নয়া জল্পনা]
ভাতারের আড়া গ্রামের গৃহবধূ পূর্ণিমা দাস গত সোমবার সকাল ৭ টা নাগাদ প্রসব বেদনা নিয়ে ভাতার হাসপাতালে ভরতি হন। সেদিনই সকাল ৯টা নাগাদ তিনি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। এটিই পূর্ণিমার প্রথম সন্তান। হাসপাতাল সূত্রে খবর, নবজাতকের ওজন ছিল আড়াই কেজি। পূর্ণিমার স্বামী সুশান্ত দাস বলেন, “আমার স্ত্রীর কাছে আমার পিসি ছিলেন। আমি মঙ্গলবার রাতে বাড়ি চলে যাই। বুধবার সকাল ৬টায় হাসপাতালে আসি। আজই ছুটি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এসে দেখি আমার ছেলের শরীর খারাপ। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। চোখে পিচুটি। তখন নার্সদের কাছে যাই। অসুস্থতার কথা জানাই। কিন্তু নার্সরা জানান ডাক্তারবাবু সাড়ে আটটা-নটা নাগাদ আসবেন। তখন দেখবেন।” সুশান্ত দাসের অভিযোগ, নার্সরা তখন মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। বারবার অনুরোধ করা হলেও সন্তানের চিকিৎসা হয়নি। নার্সরা তাঁদের বলেন, গরম জল এনে সদ্যোজাতর চোখ দুটি পরিষ্কার করে দিতে। তা করেও দেন। তারপর ৭টার সময় শিশুর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। সদ্যোজাতকে কোলে নিয়ে নার্সদের কাছে যান বাবা। তখন তারা জানায় শিশুটি মারা গিয়েছে।
মৃত শিশুর কাকা বিনয় দাসের অভিযোগ, “হাসপাতালের গাফিলতির কারণে বাচ্চাটি এভাবে মারা গিয়েছে। সময়ে অক্সিজেন বা ওষুধের বন্দোবস্ত করলে এটা হত না। ভাতার হাসপাতাল নামেই স্টেট জেনারেল হাসপাতাল। এভাবে যদি চিকিৎসায় অবহেলা করা হয় তাহলে গরিব মানুষরা কোথায় যাবে?” নিহত শিশুর পরিবারের লোকজন লিখিতভাবে ভাতার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। উপযুক্ত তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। ভাতার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সংঘমিত্রা ভৌমিক বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। ঘটনার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেও জানিয়েছি।” হাসপাতালে পুলিশি প্রহরা থাকায় বিক্ষোভের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।