গৌতম ব্রহ্ম: মাত্র সাড়ে সাতশো গ্রাম! এটুকু ওজন নিয়ে জন্মেই ধারে-ভারে দুর্দম কোভিডকে (COVID-19) হারিয়ে দিল ক্ষীণতনু একরত্তি। তৈরি করল নয়া নজির। পশ্চিমবঙ্গে এ যাবৎ নথিভুক্ত কোভিডজয়ী শিশুদের মধ্যে এই নবজাতকই সবচেয়ে কম ওজন বিশিষ্ট বলে দাবি করছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা।
গত ১৩ এপ্রিল পার্ক সার্কাসের কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ (National Medical College) হাসপাতালে কন্যাশিশুটির জন্ম দেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ধূলাহাট আমিরপুরের বধূ সালেহার খাতুন। ২৮ সপ্তাহের মাথায় প্রসব। ফলে নবজাতকের ফুসফুস-সহ বহু অঙ্গই পরিণত হয়নি। ওজন ছিল মাত্র ৭৫০ গ্রাম। এত কম ওজনের সদ্যোজাতকে বাঁচানো সত্যিই মুশকিল। তার উপর ওই ‘প্রিম্যাচিওর’ শিশুর শরীরে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ছোবল বসায় ভয়ংকর কোভিড। ওজন তখন মাত্র ৫০ গ্রাম বেড়েছে।
[আরও পড়ুন: নিম্নচাপের জেরে সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ, বৃষ্টিতে ভাসবে কোন কোন জেলা? জানাল হাওয়া অফিস]
ছোট্ট দেহে শ্বাসকষ্ট। রক্তে নামতে থাকে অক্সিজেনের মাত্রা। ভেন্টিলেশনে রেখে মিনিটে ৪-৫ লিটার অক্সিজেন দিতে হচ্ছিল। একটা সময় সেপসিস বাসা বাঁধে শরীরে। সব মিলিয়ে তুমুল সংকট। ন্যাশনালের এসএনসিইউয়ের ডাক্তার-নার্সরা এক মুহূর্তের জন্যও হাল ছাড়েননি। নিওন্যাটালজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ভাস্বতী ঘোষালের নেতৃত্বে টানা দু’মাস মরণপণ লড়াই করে তাঁরা কার্যত মৃত্যুর মুখ থেকে ছিনিয়ে এনেছেন শিশুটিকে। ভাস্বতী জানালেন, “কাজটা নিঃসন্দেহে খুব কঠিন ছিল। আমাদের টিম প্রাণপণ চেষ্টা করে অসাধ্যসাধন করেছে। এত কম ওজনের শিশুর কোভিডজয়ের নজির নেই বলেই মনে হয়। টানা অক্সিজেন চললে চোখের ক্ষতি হয়। চোখের ডাক্তাররাও নিয়মিত পরীক্ষা করেছেন শিশুটিকে। কোনও সমস্যা হয়নি।”
ন্যাশনালের চিকিৎসকদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ রাজ্যের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা। ডা. প্রভাসপ্রসূন গিরি জানিয়েছেন, এক কেজির কম ওজন হলেই শিশুকে বাঁচানো মুশকিল হয়। কারণ, ফুসফুস, কিডনি-সহ একাধিক অঙ্গ অপরিণত থাকে। দেখতে হবে কোভিডের ছোবল শিশুটির শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটিয়েছিল কি না। ফুসফুসে আঘাত হেনেছিল কি না।” একই বক্তব্য ডা. নিশান্তদেব ঘটকের। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “এত কম ওজনের বাচ্চাকে এমনিতেই বাঁচানো খুব কঠিন। তার উপর কোভিড। নিঃসন্দেহে বড় সাফল্য।”
গত বছর সেপ্টেম্বরে ইএম বাইপাসে আনন্দপুরের একটি হাসপাতাল থেকে কোভিডমুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছিল ৩৩ দিনের এক শিশু। তার ওজনও কম ছিল (১ কেজি ৩০০ গ্রাম)। ন্যাশনালের শিশুটির ওজন এর চেয়েও সাডে় পাঁচশো গ্রাম কম! সোমবার সে অবশ্য ন্যাশনাল থেকে মা সালেহার খাতুনের সঙ্গে কিছুটা ওজন বাড়িয়েই বাড়ি ফিরেছে। ভাস্বতী বলেন, “আমাদের ইচ্ছে ছিল, দেড় কেজি ওজন হলে ওকে বাড়ি পাঠানো। কিন্তু পরিবারের অনুরোধে একটু আগেই ছুটি দেওয়া হল। কোভিডজয়ী শিশুর ওজন এখন ১৩১০ গ্রাম।” শিশুর যাবতীয় তথ্য স্বাস্থ্যভবনে পাঠানো হয়েছে।