সুলয়া সিংহ: দেশের দুর্দিনে যেন কেউ অভুক্ত না থাকে। এই শপথ নিয়েই লকডাউনের আবহে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। যাদের অনেকেই প্রচারের আলোয় এসেছে। আবার অনেকে নিঃশব্দে সমাজসেবা করে চলেছে। তেমনই একটি সংগঠন ‘ব্যাক টু স্কুল’। সেই লকডাউনের গোড়া থেকে আশ্রমের অনাথ শিশু, দুস্থ-গরিবদের খাওয়ার ব্যবস্থা করে চলেছে চন্দরনগরের এই সংগঠন। প্রচারের আশায় নয়, সকলকে সুস্থ রাখার তাগিদেই এই উদ্যোগ। এবার আমফান বিধ্বস্তদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকজন বন্ধু মিলে তৈরি সংগঠনটি।
করোনা মোকাবিলায় দেশজুড়ে সেই মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে চলছে লকডাউন। কাজ হারিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দিন আনি দিন খাই মানুষগুলিকে। পেটের দায়ে যাঁরা ভিনরাজ্যে চলে গিয়েছিলেন, এমন সংকটের দিনে সেই পরিযায়ী শ্রমিকরাও ফিরে এসেছেন পরিবারের কাছে। সেই সমস্ত মানুষগুলির দিকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যাক টু স্কুল। গত ২৬ মার্চ থেকে স্থানীয় গরিব দুস্থদের খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিতে শুরু করেন সংগঠনের যুবকর্মীরা। এরপর তাঁরা ঠিক করেন, রান্না করা খাবার তুলে দেবেন অনাথ আশ্রমের কচিকাঁচা এবং ছাত্রাবাসের আবাসিকদের মুখেও। যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। ১৫ এপ্রিল থেকে কোমর বেঁধে কাজে লেগে পড়েন। তবে শুধুই ভাল-ডাল তরকারি নয়, বেবি ফুড থেকে ওষুধ- সমস্ত অত্যাবশ্যক পণ্যের ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা।
[আরও পড়ুন: ভিনজেলায় কর্মরত শ্রমিকের রহস্যমৃত্যু, বাড়ির উঠোনে দেহ ফেলে চম্পট দিল ২ যুবক!]
এরই মধ্যে ভিনরাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিকদের ফেরানোর ব্যবস্থা করে কেন্দ্র। শুরু হয় শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনের যাত্রা। তবে এ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এখনও আটকে রয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। দু’বেলা খাবার জোটাতে যাঁদের রাতের ঘুম উড়েছে। অসম ও ঝাড়খণ্ড থেকে আসা তেমনই কিছু পরিযায়ী শ্রমিকদের আজও রান্না করা খাওয়াচ্ছে সংগঠনটি। এমনকী বলাগড়ে আটকে থাকা ১২৭ জন বিহারের ভাগলপুর ও মুঙ্গের থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদেরও একদিনের খাবারের দায়িত্ব নেয় তারা।
তবে শুধুই মানুষ নয়। এই মারণ সংক্রমণের জেরে দিশেহারা অবস্থা সারমেয়দেরও। সংগঠনের এক কর্মী বলেন, “আমরা রোজ পথকুকুরদের খাওয়ানোর ব্যবস্থাও করেছি। খাবারের জন্য এরা স্থানীয় হোটেল কিংবা দোকানের ভরসাতেই থাকে। কিন্তু সেসব বন্ধ থাকায় ওদের খাবারের অভাব হচ্ছে।” এ কাজে তাঁদের উৎসাহ দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন থেকে প্রবাসী বাঙালি- প্রত্যেকেই। সংগঠনের সভাপতি অনির্বাণ রায় চৌধুরি জানান, মানুষের ভালবাসা আর সমর্থনই এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। তবে এখানেই সমাজসেবায় ইতি টানছে না সংগঠনের কর্মীরা। এবার আমফান বিধ্বস্ত বাংলার একাধিক প্রান্তে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার বন্দোবস্তও করছেন তাঁরা।
[আরও পড়ুন: আমফানে ঘর হারারাই এখন অন্ন জোগাচ্ছেন অসহায়দের, নেপথ্যে পড়ুয়াদের ‘পিপলস কিচেন’]
দিনের পর দিন এই মহৎ কাজ করেও তা সমাজের সামনে তুলে ধরতে কখনও প্রচারের আলো খোঁজেননি এঁরা। চুপচাপ মানুষের সেবা করে গিয়েছেন। জানেন, এমন সংকটের দিনে ওই অভুক্ত মানুষগুলির মুখে খাবার তুলে দিলেই আশীর্বাদ পাবেন। এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে।
The post নিঃশব্দে দু’মাস ধরে অনাথ-দুস্থদের খাওয়াচ্ছে, এবার আমফান বিধ্বস্তদের পাশে এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা appeared first on Sangbad Pratidin.